ইব্রাহিম আলম সবুজ কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের রাজারহাটে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ডুবে গেছে বাদাম ভুট্টা কাউন মিষ্টিকুমড়া সহ বিভিন্ন অর্থকারী ফসল। চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলের কৃষকদের কপাল পুড়েছে আলুর বাজার।
একটু দাম পেলেও ঘন বৃষ্টির কারনে লোকসান গুনতে হয়েছে পেঁয়াজেও। এরপর গত ১৭, ১৮ই মে থেকে উত্তরাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ভয়াবহ আকার ধারণ করে তিস্তার। এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় হাতে পেলেই এ অঞ্চলের কৃষকদের ঘরে উঠতো যে ফসল এখন তার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার স্রোত।
হাঁটু থেকে কোথাও কোথাও এক বুক পানির নিচে থাকা বাদাম মিষ্টি কুমড়া সহ এসব ফসল পঁচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের কপালে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। গবাদি পশু বিক্রি ও এনজিওর ঋণের টাকায় ফলানো এসব ফসল ঘরে তুলতে না পারলে সে চিন্তা হবে তাদের আকাশ সমান।
রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ ও নাজিমখাঁন ইউনিয়নের চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায় পানির নিচ থেকে কিছুটা অপরিপক্ক বাদাম তোলার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। অনেকের বাদাম পরিপক্ব হতে আরও প্রায় দুই সপ্তাহ লেগে যেতো। বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চরে গিয়ে দেখা গেল কৃষক নুরজামাল ডুবে যাওয়া বাদাম তুলছেন। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন আর এক সপ্তাহ সময় পেলে তিনি পরিপক্ব বাদাম ঠিকঠাক মতো উঠাতে পারতো।
তার পাশের আরেক কৃষক আমিনুর ইসলাম তার বাদাম ক্ষেত দেখিয়ে বলেন,দশ দিনের মতো সময় হাতে পেলে তার প্রায় ৬ একর জমির বাদাম রক্ষা পেতো। পাড়ামৌলা চরের আরেক চাষী হোসেন আলী বলেন আলুতে চার লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে দেড় লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে। কিছুটা দাম থাকলেও ভেজাল বীজ ও আগাম বৃষ্টিতে লোকসান গুনতে হয় পেঁয়াজেও। সব শেষে বাদাম ছিল তার আশার বাতিঘর কিন্তু সেই আশাতেও গুড়ে বালি। চাষাবাদ করতে গিয়ে চলতি মৌসুমে হোসেন আলীর প্রায় তিন লক্ষ টাকার ঋণের কথা জানান। এ অঞ্চলের শত শত কৃষকের একই অবস্থার কথা জানালেন তিনি।
তিস্তা নদীর নাব্যতা সংকট ও নদীর বুকে জেগে ওঠা এলোপাতাড়ি চরকে তিস্তা পাড়ের কৃষকদের নিঃস্ব হবার জন্য দায়ী করলেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সদস্য আব্দুল কুদ্দুস। তিনি বলেন উত্তর বঙ্গের কৃষি ও কৃষকদের বাঁচাতে তিস্তা নদী খনন সহ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা খুবই জরুরি।
এদিকে কৃষকদের সতর্কতা হিসেবে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে পুরো মাস জুড়ে রয়েছে বৃষ্টির সম্ভাবনা। তুলনামূলক বাড়তে পারে তিস্তার পানি। তাই যে ফসলগুলো মোটামুটি পরিপক্ব হয়েছে তা দ্রুত তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার সাথী বলেন, রাজারহাটে এ বছর তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে প্রায় ১৭৫ হেক্টর জমিতে চিনাবাদাম, ২০ হেক্টর জমিতে পাট, ৩ হেক্টর মরিচ ও ৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছিল। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে এসব এলাকার ফসলের জমি তলিয়ে গেছে।
তুলনামূলক সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাদাম ক্ষেতে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কোনো তালিকা তৈরির কাজ করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,এরকম কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা পেলে আমরা কাজ শুরু করবো।