আবুল কাশেম,ভোলা প্রতিনিধি: ভোলায় আগামী জানুয়ারিতে ভোলা-বরিশাল সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে সরকারের উচ্চ পর্যায় হতে ভোলা-বরিশাল সেতুর নির্মাণ কাজের আশ্বাস পাওয়া গেছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দ্বীপ জেলা ভোলার মানুষের পাঁচ দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের মুখে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ভোলা-বরিশাল সেতু প্রকল্পের নির্মাণ কাজ আগামী বছরের জানুয়ারিতে শুরু হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মহিউদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (৮ ই মে, ২০২৫ ইং) বিকেলে সেতু বিভাগ ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আয়োজনে ভোলা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী অংশীজনদের সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ভোলাবাসীর দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মতবিনিময় সভা শেষে এ ঘোষণা দেন। তবে ভোলা-বরিশাল ব্রীজ নির্মানের চলমান প্রসেস ফাইল নোটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী স্টার মার্ক দিয়েছেন কিনা তার খোঁজ পাওয়া যায় নাই। কারন জনগণকে আশ্বাস দেওয়া বিষয়ে সরকারী দপ্তরের চাকরীজীবীগন ফাইল নোটে স্টার মার্ক দেওয়া কাজগুলো আশ্বাস (স্টার মার্ক) দেওয়া আছে বিধায় করে থাকেন। স্টার মার্ক দেওয়া না থাকলে আশ্বাস দেওয়ার পরেও কাজগুলো করেন না।
সভায় জেলা প্রশাসক, জেলা কালেকটর, জেলা ম্যজিস্ট্রেট, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের ভোলা জেলা প্রতিনিধি, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের সাথে আলোচনা করার অনুমতি প্রাপ্ত ব্যক্তি জনাব মো. আজাদ জাহানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন ও বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ।
এর আগে, এদিন সকালে ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ প্রকল্পের স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন ও সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ, জেলা প্রশাসকসহ সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সভায় জানানো হয়, ভোলার শিক্ষাখাত চিকিৎসা, শিল্প, বাণিজ্য, ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য ভোলা-বরিশালের মধ্যবর্তী কালাবদর ও তেঁতুলিয়া নদীর ওপর ১৬ দশমিক ৩৬৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চার লেন বিশিষ্ট সেতু নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সেতুটির দৈর্ঘ্য হবে ১০ দশমিক ৮৭৬ কিলোমিটার। বাকিটা সংযোগ সড়ক এবং নদী শাসন করা হবে সাড়ে ৫ কিলোমিটার। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৭ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা।
আরও জানানো হয়, ২০২৬ ইং সালের জানুয়ারিতে শুরু হলে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০৩৩ ইং সালে। সেতু নির্মাণে বিনিয়োগের জন্য সরকারের সঙ্গে জাপানি একটি কোম্পানির আলোচনা চলছে। জাপানের সঙ্গে চুক্তি না হলে কোরিয়াকে রাখা হয়েছে বিকল্প হিসেবে। কোরিয়া থেকে অর্থ না পাওয়া গেলে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করা হবে বলে জানানো হয়।
সভায় ভোলার স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনকারী ‘আমরা ভোলাবাসী’র প্রতিনিধি, ভোলা ফোরামের প্রতিনিধি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। এ সময় প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল সেতুটি বহুমুখী সেতু করার দাবিও জানান তারা।
এদিকে, জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে মতবিনিময় সভা চলাকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে অবস্থান নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেন ভোলার আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। পরে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ঢাকায় ফিরে ভোলাবাসীর বাকি চার দফা দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
গত পাঁচ বছর আগে ভোলা-বরিশাল ব্রীজ নির্মানের আশ্বাসে সরকারের নিকট হতে বলা হয়েছিল যে, ২০২৫ ইং সালে ভোলা-বরিশাল নির্মান সম্পন্ন হবে। মধ্যখানে এই প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবারের এ ঘোষণায় নতুন করে প্রকল্প চালুর ঘোষনায় সেতুর স্বপ্ন দেখছেন ভোলাবাসী। এতে দেশের মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হবে দ্বীপ জেলা ভোলা। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বেশ কিছু দিন ধরে জেলা শহরের বাংলা স্কুল মাঠে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ছাত্র-জনতা। ছবিতে- ভোলা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা।