admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ২৫ মে, ২০২০ ২:১২ অপরাহ্ণ
নাগরিক ভাবনাঃ ব্যতিক্রমী ঈদের নামাজ,অ্যাডভোকেট আবু মহী উদ্দীনঃ ঈদের চাঁদ দেখা দেওয়ার পর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই গান ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানি তাগিদ’ দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার পর বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর আসে খুশি নিয়ে।রেডিও, টেলিভিশনে সম্প্রচার শুরু হওয়া মানে চাঁদ রাতেই ঈদের খুশি, আনন্দ শুরু হওয়া। পরস্পরর সঙ্গে সাক্ষাতে ফোনে ঈদের শুভেচ্ছা বিতরণ শুরু। স্বাধীনতার পর থেকে বরাবরই এমনটা হয়ে আসছে বাংলাদেশে। বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক হারে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়ে থাকে। এবারও চাঁদ দেখা যাওয়ার পর রেডিও টেলিভিশনে গানটি বেজেছে। অদৃশ্য করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী মহামারি দেখা দেওয়ায় ঘরবন্দি জীবনে উৎসবে যেন সেই প্রাণটাই আজ বড় শুকনো, বিবর্ণ। তারপরও আজ মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসবের দিন।
দেড় হাজার বছর ধরে চিরায়ত ঈদ উদযাপনের যে ধারা প্রচলিত, তা এ বছরে পুরোপুরি বিপরীত। বিশ্ব মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে এই ঈদে উদযাপন হয়েছে সীমিত। মাঠের নামাজ হলেও ঈদের জামাত হয়েছে মসজিদে। কেউ কেউ ঘরেই নামাজ পড়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মহামারিকালের এই ঈদে কোলাকুলি থেকে বিরত থাকতে হয়েছে। বাইরে না গিয়ে ঘরে থেকে পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে কাটাতে হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতর।
বাংলাদেশে ঈদ উৎসব সকলের জন্য। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে সব ধর্ম এবং বর্ণের মানুষ বরাবর এ উৎসবে সমানভাবে শামিল হন। ঈদের আনন্দ সবাই ভাগাভাগি করে উপভোগ করেন। কিন্তু, এবারে ঘরবন্দি ঈদ উদযাপিত হলো। এদিকে, করোনাভাইরাস অপর দিকে আবার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আম্পান ঝড়ের তান্ডবেও ঘরবাড়ি হারিয়ে ঈদের আনন্দ হারিয়ে ফেলেছে অসংখ্য মানুষ। ২৪ ঘণ্টায় ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। ঈদের আগের দিন রবিবার (২৪ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে তা জানানো হয়েছে, ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৪৮০ জনে। শনাক্ত করা হয়েছে এক হাজার ৫৩২ জন।
প্রতিবছরের মতো এবার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের অন্যান্য মসজিদেও একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ে, মুসল্লিদের জীবনের ঝুঁকি বিবেচনা করে এবছর ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে ঈদের নামাজের জামাত নিকটস্থ মসজিদে আদায় করার জন্য অনুরোধ করেছে। একই মসজিদে একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদের নামাজের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো হয়নি। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে এসেছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ নিশ্চিত করতে মসজিদে ওজুর স্থানে সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা ছিল। মসজিদের প্রবেশ পথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান ও পানি রাখতে হয়েছিল। প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে মসজিদে আসতে এসেছে এবং ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুয়েছে।
ঈদের নামাজের জামাতে আগত মুসল্লিরা সবাই মোটোমুটি মাস্ক পরে মসজিদে এসেছিলেন। ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়ানো হয়েছে। এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করা হয়েছিল। নামাজ শেষে যে যার মতো মাথা নিচু করে মসজিদ থেকে বড়িয়ে গেছেন। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রবিবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্ববাসীকে ঈদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ বছর এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। করোনা নামক এক প্রাণঘাতী ভাইরাস সারাবিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। তার ওপর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এবছর আমরা সব ধরনের গণ-জমায়েতের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছি। কাজেই স্বাভাবিক সময়ের মতো এবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করা সম্ভব হবে না। সবাইকে আমি ঘরে বসেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনার সুরক্ষা আপনার হাতে। মনে রাখবেন, আপনি সুরক্ষিত থাকলে আপনার পরিবার সুরক্ষিত থাকবে, প্রতিবেশী সুরক্ষিত থাকবে, দেশ সুরক্ষিত থাকবে। এ বছর আমরা সশরীরে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হতে বা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে না পারলেও টেলিফোন বা ভার্চুয়াল মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর নেবো।’ আসুন আমরা সবাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলি। নিজের নিরাপত্তা বিধান করে পরিবারের সবাই নিরাপদ থাকার চেষ্টা করি।