এম.মাসুম আজাদ,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার হাট খালিশপুরের শড়া তলায় তুষার সিরামিকস্ লিমিটেড এর বিষাক্ত বজ্র পদার্থ ও ভারী ধাতু নিষ্কাশনে বাতাসে ও পরিবেশে বিক্রিয়ার কারনে পরিবেশের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কারখানার আসেপাশে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে এছাড়াও রাস্তার দুই পাশের বড়ো বড়ো গাছ গুলো মারা যাচ্ছে। পরিবেশের উপরে ব্যপক প্রভাব পড়লেও ঝিনাইদহের পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি
বর্তমান শিল্পায়নের যুগে শিল্পকারখানা যেমন প্রয়োজন আছে কর্মসংস্থান ও উন্নত রাষ্ট্র গঠনের জন্যে তেমনি সেই সকল কারখানা হতে হবে অবশ্যই পরিবেশ বান্ধব ও স্বাস্থ্য বিধিনিষেধ মেনে,নিয়মের অধিনে। সিরামিক শিল্পায়নে তুষার সিরামিকস্ লিমিটেড ঝিনাইদহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান হলেও তাদের অব্যবস্থাপনার কারনে পরিবেশের উপরে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে, বজ্র পদার্থ ও ভারী ধাতু নিষ্কাশনের কারনে কৃষিজমির উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে ফলে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষতিগ্রহস্ত হচ্ছে।
একাধিক কৃষকেরা অভিযোগ করেন বলেন, কারখানার আসেপাশে আমরা যারা বিভিন্ন চাষআবাদ করি আমাদের উৎপাদন অনেক কমেগেছে,কলা চাষ করলে কলাগাছের অনেক ক্ষতি হয়,গাছের পাতা শুকিয়ে যায় কলায় বিভিন্ন রোগাক্রান্ত হয় এছাড়াও রাস্তার দুইপাশের বড়ো বড়ো গাছগুলো মারা যাচ্ছে।
সিরামিকসে্র গ্লেজে সীসা, ক্যাডমিয়াম এবং বেরিয়ামের মতো ক্ষতিকারক রাসায়নিক থাকে, যা সিরামিক উৎপাদনের সময় ভুলভাবে ফেলে দেওয়ার হলে বা বর্জ্যের সাথে পরিবেশে মিশে যেতে পারে । এই রাসায়নিকগুলি মানব স্বাস্থ্য এবং বাস্তুতন্ত্র উভয়ের জন্যই ঝুঁকি তৈরি করে।
স্থানীয়দের অভিযোগ সাপেক্ষে সরেজমিনে দেখা যায় তুষার সিরামিকস্ এর কারখানার আসেপাশে ঝাঝালো তিব্র রাসায়নিক গন্ধে বাতাস ভার হয়ে আছে, খালিশপুর থেকে জীবননগর পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশের গাছগুলো সবুজ সতেজ হলেও তুষার সিরামিক এর কারখানার আশেপাশের মহা-সড়কের গাছগুলো শুকিয়ে মারা গেছে আর যাও দুই একটা বেচে আছে তাও ফিকে হয়ে আছে মারা যাবে কিছু দিনের মধ্যেই।
কারখানার বর্জ্য ও ঝাঁঝালো তিব্র ক্যামিকেল এর গদ্ধ মিশ্রিত বাতাস মানবদেহে ও বাস্তুসংস্থান এর উপরে কি ধরনের প্রভাব পড়ে তা জানিয়েছে Anaesthesia, ICU & Pain Medicine consultant
ডাঃ জোবায়ের মঞ্জুর হোসেন,তিনি বলেন:প্রত্যেক শিল্পের বা কারখানার কিছু নেতিবাচক এবং ইতিবাচক দিক থাকে। নিয়ম না মেনে অথবা নেতিবাচক দিকগুলো কে ব্যবস্থাপনা না করে, কারখানা গড়ে উঠলে কিছু সমস্যা তৈরি হতে পারে।
তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হল কারখানায় শ্রমিক এবং আশেপাশের বসবাসরত মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে। সিরামিক শিল্প কারখানার ব্যবস্থাপনা এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। এখান থেকে উৎপাদিত বজ্র পদার্থ হতে ভারী ধাতু নিষ্কাশন হতে পারে। যেগুলো একটি এলাকার পরিবেশের বাতাস এবং পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মানুষের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
তাছাড়া শব্দ দূষণ এবং বায়ুদূষণ পরিবেশের জন্য একটি বড় অন্তরায়। যেগুলো কারণে ভবিষ্যতে মানুষের শ্রবণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে ও ত্বক এবং চোখের বিভিন্ন রকমের ইনফ্লামেশন (প্রদাহ)বা রোগ হতে পারে। বায়ু দূষণের কারণে অত্র অঞ্চলের মানুষের হাঁপানি শ্বাসকষ্ট, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি রোগে ভুগতে পারেন। মাটি ও পানি দূষণের কারণে, স্বাভাবিক পরিবেশে বিপর্যয় হলে, সেখানে প্রাণী ও কৃষি ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক হুমকি দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও পরিবেশ বিদ অধ্যক্ষ সাখাওত আহমেদ জানান,কলকারখানার নিসৃত বর্জ্য ও তিব্র ঝাঁঝালো বাতাস পরিবেশের উপরে ব্যপক প্রভাব ফেলে গাছপালা ও উন্মুক্ত ছোট-বড় প্রাণীর ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। উন্নয়নশীল দেশের জন্যে কলকারখানার যেমন প্রয়োজন আছে তেমনি প্রয়োজন নিয়মনীতির মধ্যে থেকেই পরিবেশ বান্ধব ভাবে কারখানা পরিচালনা করা।
তুষার সিরামিকস্ কারখানার কারনে পরিবেশ প্রকৃতি ধ্বংসের বিষয়ে কথা হয় তুষার সিরামিকস্ লিমিটেড এর রেসিডেন্সিয়াল পরিচালক ওহিদুজ্জানের সাথে তিনি সাংবাদিকদের জানান,আমাদের এখানে কোনো ক্যামিকেল ব্যবহার করি না,আর আমারা বর্জ্য বাইরে কোথাও ফেলি না সেটা রিসাইকল করা হয়, গাছগুলো কেনো মারা গেছে সেটা আমরা বলতে পারবো না। আপনারা আসেন সরেজমিনে আমাদের কার্যক্রম দেখে তার পরে যেটা মনে হয় সেই নিউজ করেন।
তুষার সিরামিকস লিমিটেড এর আশেপাশের পরিবেশের উপরে ব্যাপক প্রভাব পড়ার বিষয়ে কথা হয় ঝিনাইদহের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুন্তাছির রহমান এর সাথে তিনি, বিষয়টি গতো একবছর যাবত অবগত আছেন বলে জানান।
রাস্তার গাছ গুলো কেনো যাচ্ছে সেই বিষয়ে তিনার কাছে কোনো ব্যাখ্যা নাই বলেও তিনি জানান,তিনি আরো বলেন এই সকল গাছগুলো রোডস এর তারাই ভালো বলতে পারবেন কেনো মারা যাচ্ছে আর তুষার সিরামিকস্ লিমিটেড এর বিষয়ে তিনিই গুনগান করে বলেন তাদের কারনে গাছ মারা যাচ্ছে না এই সকল গাছ কেনো মারা যাচ্ছে তার কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই।
সচেতন মহলের দাবি যেহেতু অদৃশ্য কারনে ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তর এ ব্যাপারে নিশ্চুপ এবং নীরব দর্শকের ভূমিকায় সেহেতু বিভাগীয় ভাবে তদন্তপুর্বক যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করে পরিবেশ রক্ষা করা হোক।