জাহিদ হোসেন,দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুর: জুলাইযোদ্ধা এক নারীকে বিয়ে করার অপরাধে শ্রেষ্ঠ ওসির পুরস্কার লাভের ৪ দিনের মাথায় দিনাজপুর কোতয়ালী থানার ওসি মতিউর রহমানকে রংপুর ডিআইজি কার্যালয়ে ক্লোজ করায় হতবাক দিনাজপুরবাসী। সেই নারী এক সময় ছাত্রলীগ করেছিলেন বলে শোনা যায়। আর সেটিই অভিযোগ হিসেবে আনা হয়েছে। ব্যক্তিগত এসব বিষয়ের কারনেই নাকি অন্য কোনো কারনে তাকে রংপুরে কেন ক্লোজ করা হলো তা কারোই বোধগম্য হচ্ছে না।
নতুন বাংলাদেশে দিনাজপুরে নতুন ওসি হিসেবে মতিউর রহমান যোগদান করেই নিষ্ক্রিয় পুলিশকে শক্তহাতে সক্রিয় করার কাজ করে কোতয়ালী থানাকে নতুনভাবে সাজিয়েছেন। যার ফলস্বরূপ ২৬ মে’২৫ তাকে জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি হিসেবে পুরস্কার প্রদান করে পুলিশ বিভাগ। অথচ এর মাত্র ৪ দিন পর গত ৩০ মে’২৫ তাকে ক্লোজ করা হয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যে অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো তদন্ত ছাড়াই ওসি মতিউরকে দিনাজপুর থেকে সরানো হয়েছে, সে অভিযোগটি নিরপেক্ষ তদন্ত করলেই অভিযোগটি মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হবে।
দিনাজপুর কোতয়ালী থানা সুত্র জানায়, ২৩ অক্টোবর’২৪ তারিখে নতুন বাংলাদেশে কোতয়ালী থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করেন মতিউর রহমান। যে সময় তিনি যোগদান করেন, সে সময় সমস্ত পুলিশ ছিল নিষ্ক্রিয়। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের রেখে যাওয়া পুলিশের প্রতি সাধারন মানুষের বিন্দুমাত্র কোনো আস্থা ছিল না। সব মিলিয়ে বিশৃংখল পুলিশকে তিনি সুন্দরভাবে ঢেলে সাজান। পুলিশকে নতুনভাবে জনগনের বন্ধু হিসেবে তুলে ধরতে কাজ করেন। বিগত সময়ের মতো তদবীর বানিজ্য আর চলতে দেননি।
এক সময় মুখচেনা নামধারী কতিপয় ব্যক্তি ওসির পাশে বসে তাদের কাজ বাগিয়ে নিয়ে অবৈধ আয়-উপার্জন করতেন। সেটি তিনি বন্ধ করে দিতে সক্ষম হোন। সরকার ঘোষিত অপারেশন ডেভিল হান্টে ব্যাপকভাবে সফলতা অর্জন করেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী ডেভিলদের চিহ্নিত করে তিনি তাদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছিলেন। এ পর্যন্ত তিনি এ এলাকার প্রায় সাড়ে ৪০০ জন ডেভিলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হোন। এছাড়া তিনি মাদকের বিরূদ্ধে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন করেছেন। ওসি মতিউর রহমানের যোগদানের পর শুধুমাত্র মাদকের মামলায় সহস্রাধিক মাদক কারবারী, পাচারকারী ও মাদকাসক্তকে গ্রেফতার করা হয়।
যা ছিল মতিউর রহমানের অনন্য কৃতিত্ব। ওসি মতিউর শুধু এসব কাজই করেননি, এলাকার মানুষের কল্যানে নিরলস ভাবে কাজ করেছেন। ফলে এলাকায় তিনি মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন। জনকল্যানে কাজ করা এমন ওসিই চান দিনাজপুরবাসী। জানা গেছে, একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে একটি গোপনীয় প্রতিবেদন গৃহীত হয়। সেই প্রতিবেদনটি একজন সিনিয়র কর্মকর্তার মাধ্যমে অনুসন্ধানের জন্য গত ৩০ মে’২৫ দিনাজপুরের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম।
পরে দিনাজপুর পুলিশ সুপার মারুফাত হোসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিএসবি কে অনুসন্ধান পূর্বক ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দেন। একইসাথে ৩০ মে’২৫ অপর একটি চিঠির মাধ্যমে ওসি মতিউর রহমানকে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে ন্যাস্ত করা হয়। জানা গেছে, মানবিক কারনে জুলাইযোদ্ধা হুমায়রা বিনতে কবির সুরভিকে যথাযথ নিয়ম মেনেই আইনানুগভাবে বিয়ে করেন ওসি মতিউর রহমান।
সুরভিকে ছাত্রলীগ ব্লাকমেইল করে নানা রকম কু-প্রস্তাব দিতে থাকে। তাই এ নিয়ে তিনি শঙ্কিত ছিল। তাকে ছাত্রলীগের হাত থেকে উদ্ধার করতেই বিয়ে করেন। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে সুরভি কিংবা ওসি মতিউরের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগও আসেনি। অথচ একটি মহল কি কারনে অভিযোগ করেছে তা কেউ জানে না। মূলত সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে ক্লোজ করা হয়েছে।