admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ২৩ মে, ২০২০ ৪:৩৫ পূর্বাহ্ণ
মুক্ত কলম বক্স অফিস সিঙ্গাপুর, নাগরিক ভাবনাঃওমর ফারুকী শিপনঃ সিঙ্গাপুর প্রবাসী গতবছর এই সময় আমরা ঈদ নিয়ে নানান পরিকল্পনা করেছিলাম৷ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারনে এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ গতবছর কারো পরিবার দেশ থেকে ঈদ উপহার নতুন পাঞ্জাবী পাঠিয়েছিলো। অনেককে দেখেছি মোস্তফা সেন্টার থেকে নতুন পাঞ্জাবী কিনে এনেছে। তবে নিজে যত দামী পোশাক কিনি না কেন? পরিবারের নিকট থেকে প্রেরিত উপহার পেয়ে যে আনন্দ পাই , নিজে পোশাক কিনে সে আনন্দ পাই না। পরিবারের নিকট থেকে প্রেরিত উপহারের সাথে থাকে ভালোবাসার নিদর্শন। তারা কষ্ট করে মার্কেটে গিয়ে আমাদের জন্য পোশাক পছন্দ করে। বাসায় ফিরে পরম যত্নে তা প্যাকিং করে আমাদের জন্য পাঠায়। তাদের প্রেরিত উপহারের সাথে মিশে থাকে স্নেহের ছোঁয়া,তাদের ভালবাসা, তাদের শরীরের ঘ্রান। করোনাভাইরাসের কারনে এবার আর কোন উপহার পাওয়া কিংবা নিজে পোশাক কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
তবে সিঙ্গাপুর সরকার আমাদের মুসলিমদের অনুভূতির কথা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তারা ইতিমধ্যে লকডাউনে থাকা ডরমিটরিগুলোতে অভিবাসী কর্মীদের জন্য নতুন জায়নামাজ, লুঙ্গি, পাঞ্জাবী, টুপি উপহার দিতে শুরু করেছে৷ সিঙ্গাপুর মুসলিম প্রধান দেশ নয় তবুও মুসলিমদের প্রতি তাদের ভালবাসা দেখে বিষ্মিত না হয়ে পারিনি। মানুষের প্রতি ভালবাসা, মানবতা কাকে বলে তা বিশ্ববাসী শিখতে পারে সিঙ্গাপুর সরকার ও জনগণের কাছ থেকে। মুসলিমদের জন্য উপহার পাঠিয়ে সিঙ্গাপুর সরকার মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসার উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। সিঙ্গাপুরের সরকার ও জনগণের ভালবাসায় আমার মতো সাধারণ প্রবাসীরা অভিভূত।
আমার এক পরিচিত ব্যক্তি জায়নামাজ দেখিয়ে বলে, জায়নামাজটা বেশী পাতলা। আমি তাকে আর কিছু বলার সুযোগ দেয়নি তাকে থামিয়ে ধমক দিয়ে বললাম, উপহারকে উপহার হিসেবে দেখা উচিত এর মান নিয়ে বিবেচনা করা উচিত নয়।এই উপহার দিয়ে তারা আমাদের প্রতি ভালবাসা দেখিয়েছে আমাদেরও উচিত এই ভালবাসার বিনিময়ে তাদের জন্য মন থেকে দোয়া করা।এটা শুধু উপহার না আমাদের প্রতি তাদের সম্মান। তাদের কাছ থেকে উপহার পেয়ে আমি ব্যক্তিগত অত্যন্ত খুশি৷ কারন নামাজ পড়তে আমাদের জায়নামাজ লাগবে তারা তাও ভুলেনি৷ এটার মূল্য যাই হোক না কেন আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা কোটি টাকার উপহার৷
সিঙ্গাপুরে ডরমিটরিতে আইসোলেশনে থাকা রনী মিয়া বলেন, ভাই বন্দী অবস্থায় আছি। তাই ঈদ নিয়ে পরিকল্পনা নেই। জানি না কবে এই বন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি পাবো। এবার ঈদ নিয়ে কোন পরিকল্পনাই না থাকলেও সিঙ্গাপুর সরকারের পক্ষ থেকে উপহার পেয়ে আমি আনন্দিত।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হবার পর সরকারি হাউজিং ফ্লাটে অবস্থান করছেন সিঙ্গাপুর প্রবাসী আমিনুল ইসলাম। ঈদের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে ঈদ মানে সকালে নতুন জামা পরিধান করে জামাতের সহিত ঈদের সালাত আদায় করা। সালাত শেষে বন্ধু, ভাই, প্রিয়জনদের জড়িয়ে কোলাকুলি করা৷ তাছাড়া আমরা বাংলাদেশীরা ঈদের দিন সেমাই, কোর্মা, পোলাও রান্না করে সবাই একসাথে খেতে পছন্দ করি। এবার করোনাভাইরাসের কারনে কিছুই হচ্ছে না। তবুও বলব ঈদ উপলক্ষে সিঙ্গাপুর সরকারের পক্ষ থেকে উপহার পেয়ে আমি আনন্দিত।
সে ঠিকই বলেছে করোনাভাইরাসের কারনে সিঙ্গাপুরে এবার ঈদের সালাত জামাতে আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ঘরে বসে ফেসবুক লাইভে আমরা তাকবির অনুসরণ করে সালাত আদায় করতে পারব ৷ করোনায় পজিটিভ জাহাঙ্গীর বর্তমানে তানজং পাগার টার্মিনালে অবস্থান করছে৷তার কাছে ঈদ ও রমজান সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বলে, ভাই আমার জন্য দোয়া করবেন৷ করোনায় পজিটিভ হলেও আমার শারীরিক অবস্থা ভালো। তবে ডরমিটরিতে ফিরে যাবার জন্য মনটা অস্তির হয়ে আছে৷
ঈদ নিয়ে আমার কোন ভাবনা নেই। এখন শুরু একটাই ভাবনা কবে করোনাভাইরাস থেকে মানবজাতি মুক্তি পাবে৷ আমার শুধু একটাই চাওয়া আল্লাহ দ্রুত করোনাভাইরাস থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করো। এবারের ঈদ আমাদের জন্য এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে৷ তবুও আমি সবাইকে বলব করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে, বন্ধুকে ও পরিচিতজনদের রক্ষা করতে সরকারি নির্দেশনাগুলো সকলের পালন করা উচিত ৷ মনে রাখবেন আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সামাজিক দায়িত্ব পালন না করলে করোনাভাইরাস থেকে আমাদের সহজে মুক্তি মিলবে না।