নাগরিক ভাবনা,আবু মহী উদ্দীনঃ আমরা যারা পৌরসভায় বাস করি তারা গ্রামীন জনপদের তুলনায় অভিজাত ও কুলীন। সে জন্য অবশ্য আমাদের মাসুলও দিতে হয়। স্থানীয় কালিবাড়ী বাজারটি আমাদের আভিজাত্য বজায় রাখতে বেশ সহায়তা করে। আমাদের আভিজাত্য প্রমানে সহায়তার জন্য আমরা সেখানে সব জিনিষের দাম বেশি দিয়ে কিনি। খুবই ছোট একটা উদাহরণ : কিছুদিন আগে ক’দিন ঢাকার অন্যতম অভিজাত এলাকা নিকুজ্ঞ -২ এ ছিলাম।

সেখানেও সব জিনিষের দাম বেশী। ১ কেজি স্ট্রবেরি ৩৫০ টাকা , পরের দিন মিরপুরে , শাহবাগে কিনেছি ৩০০ টাকায়। ঠাকুরগাঁও ফিরে এসে বাজারে গিয়ে স্ট্রবেরি ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি দিব্বি বিক্রি হচ্ছে। এখনই আড়তে ৭০ টাকা জোড়া আনারস , কালীবাড়ী ১০০ টাকা। বিক্রিতো বন্ধ নাই। এই বাজারটি রাস্তার উপরেই। রাস্তা তাদের দখলে , ফুটপাথের তো প্রশ্নই ওঠেনা। আমরা কতটা সহনীয় হলে বছরের পর বছর এটা মেনে নিয়েছি। না হলে মাছের বাজারটা সরানো দরকার কিনা , এই প্রশ্নটা ৩০ বছরের।

পৌরসভার রাস্তাঘাট , ড্রেন পরিস্কারের জন্য আপনি ট্যাক্স দিয়ে গর্বিত নাগরিক হবেন। শুধু রাস্তাঘাট চলাচলের উপযুক্ত ও পরিস্কার পাবেননা। মেয়রের বড়ো গাড়ী , কালো কাঁচে ঘেরা , গাড়ীতে রাস্তার সমস্যা বোঝা যায়না। তবে রিক্সা , অটোতে উঠলে বোঝা যায়। বিল্ডিং যেমন বসবাসের অনুপযুক্ত ঘোষণা করা হয় তেমন বিষয় থাকলে অনেক আগেই রাস্তাগুলি চলাচলের অনুপযুক্ত ঘোষনা করা হতো। তবে একটা বিষয় গর্ব করার মতো , তাহলো পৌরসভার রাস্তা যতই খারাপ হোক নাগরিকরা কিন্তু অসহিষ্ণু হয়না। এ বিষয়ে দেশের অন্যান্য পৌরসভার সুশীল সমাজ পরিদর্শনে আসতে পারেন এটা দেখার জন্য যে , ঠাকুরগাঁও শহরের মানুষ কত সহনশীল , সহজ সরল। যত সমস্যাই হোক তারা মুখ বুঁেজ সহ্য করে। রাস্তা চলাচলের উপযুক্ততা হারালে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে হাজীপাড়া এলাকার ছাত্ররা নিজেরা রাস্তা মেরামত শুরু করেছিল। পৌরসভা তাদের কৈফিয়ত তলব করেছে এবং মেরামত কাজ বন্ধ করেছে। কেননা পৌরসভার কাজ অন্যেরা করবে তাতে পৌরসভার সম্মান হানি হতে পারে।

পৌরবাসী হলে আপনি ফুটপাথের কোন সুযোগ পাবেননা।

কেননা ওটা দোকানদারদের মালামাল রাখার জন্য। এর অবশ্য কারণ আছে , আপনি যাতে খুব সহজে রাস্তা থেকেই কেনাকাটা সারতে পারেন। রাস্তাঘাট দখলে রাখা বেআইনী সেটা আপনি জানতে পারেন। কিন্তু যাদের জানার কথা তারা যেমন জানেনা , তেমনি যাদের ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখার আইনী দ্বায়িত্ব তারা সে দ্বায়িত্ব পালন করতে কেনো পারেনা এটা মিলিয়ন ডলারস কোশ্চেন। পৌরসভার সাবেক মেয়র মির্জা ফয়সল আমিন মেয়র হয়েই কয়েকদিনের মধ্যে কার্যকর একটা পদক্ষেপ নিয়ে কালিবাড়ী বাজারে কাজটা শুরু করেছিলেন , আমরা খুবই আশাবাদী হয়েছিলাম, কিন্তু তিনি কুলিয়ে উঠতে পারেননি , কেননা তিনি ছিলেন বিরোধী দলের মেয়র। মেয়র তো মেয়রই , তার আবার সরকারি বিরোধী কি ? শেষে আমরা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি, তিনি বিরোধী দলের মেয়র । তিনি করতে পারতেন , আমরা করতে দিইনি।

পৃথিবীর কোথাও না থাকলেও কোন বিষয়ে নজির সৃষ্টি করে আমরা গর্বিত হতেই পারি এমনকি গিনেস বুকে নাম লেখানোর চেষ্টাও হতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের কৃপণতা থাকা ঠিক নয়। সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের একেবারে পশ্চিম মাথা থেকে ঘোষপাড়া মোড় পর্যন্ত ড্রেনের উপর দিয়ে খুবই সুন্দর ওয়াকওয়ে বানানো হয়েছে। প্লাস্টারের ভিতর দিয়ে বিদ্যুতের তার দেওয়া হয়েছে , ড্রেনের ¯øাবের উপর টাইলস বসানো হয়েছে , এই ড্রেন নিশ্চয় অটো পরিষ্কার হবে , কারণ এই ¯øাবতো তোলা যাবেনা। ড্রেন কোন দিন পরিস্কার করতে হবেনা? সম্ভবত পানি এই ড্রেনে আসবেনা, কেননা স্কুলের মাঠ এই ড্রেনের একটু নীচেই মনে হয়। পানিতো নীচ থেকে উপরে উঠবেনা। এই মাঠ জলাবদ্ধতায় যশোরের ভবদহ বিলের মতো হলে প্রকৃতিকে দোষ দেওয়া যাবেনা। এটা করতে নিশ্চয় বিদেশ থেকে ট্রেনিং করে আসা প্রকৌশলীরা আছেন। প্রাচীরতো প্রায় গোটা ঢেঁকে গেছে। পুরাতন প্রাচীর এমন বেঢপ ভাবে বাড়ানো হচ্ছে যাতে যে কেউ মনে করতেই পারে এটা নুতন জেলখানা অথবা মহিলা মাদ্রাসা। স্কুলের ছেলেরা ওয়াকওয়ে দিয়ে সবাই হাঁটলে খুব ভালো লাগবে কিন্তু তা ঘটবেনা।

তবে মূল রাস্তায় কাঁটাতারের বেড়া, এই পৃথিবী নামক গ্রহটার আর কোথাও আছে কিনা তা আমাদের জানা নাই। এটা একটা নজির হবে বলে বলে আমরা পুলকিত হচ্ছি। কাঁটাতারের ভিতরে ফুলের বাগান , তার পরে ঘেরা সুদৃশ্য ওয়াক ওয়ে , ঠাকুরগাঁও শহরের এই অংশ পুত্রজায়া বানানোর প্রয়াস। নিশ্চয় এই স্থাপনার ডিজাইন যারা করেছেন, এই সব মেধাবীরা পৃথিবীর কয়টা দেশ থেকে ট্রেনিং করে এসেছেন তা জানতে আমাদের কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আর একটা বিষয় আমরা আজো বুঝতে পারিনি তা হলো , ঠাকুরগাঁও শহরের এই মেইন রোডটি পুর্ব পশ্চিম দিকে যতটাই চওড়া হোকনা কেন , চৌরাস্তায় কেন সরু এ চিন্তাটা মাথায় ঘুরপাক খায় , কেননা ফরমুলাতো বলে , এখানে রাস্তা আরো চওড়া হওয়ার কথা। নাকি কোন কারণে এখানকার জায়গাটা উদ্ধারের শক্তি প্রয়োগ এবং আইন কার্যকরী করা যায়নি?

পৌরসভার কাউন্সিলাররা বড্ড বেরসিক এবং অসহিষ্ণু। না হলে তারা মেয়রের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দালন শুরু করেছিলো কেনো? আভ্যন্তরীন এই অসন্তোষে পৌরসভার ২ পক্ষেরই চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য প্রকাশ পেয়েছে এটা পৌরবাসী যতটা কম জানে ততই ভালো ছিল। এভাবে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারা ঠিক হয়নি। তার চেয়ে কমবেশী করে উভয় পক্ষই সন্তষ্ট থাকাই ভালো ছিল। পৌরসভার নির্বাচনে আগ্রহ কম থাকলেও আমরা আমায় বুক বেঁধেছিলাম । তবে নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। আমরা কোথায় যাই, কাকেই বা বলি। মেয়র ব্যর্থ হলে সরকারি দলকে দায় নিতে হবে কেননা মেয়র মনোনয়ন আমরা দিইনা। এমপি সাহেবকে দায় নিতে হবে।

কেননা তার অনুমোদন ছাড়া স্থানীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাবে এ কথা বিশ্বাস করানোর কোন সুযোগ নাই। সরকারি দলকে দায় নিতে হবে , কেননা তাদের সুপারিশ ছাড়া মনোনয়ন বোর্ডে কারো পক্ষে পৌঁছানো সম্ভব নয়। মনোনয়ন দিয়েছেন, পছন্দ করি না করি ভোট দিই বা না দিই , মেয়র নির্বাচিত হয়েছে অবধারিতভাবে সরকারি দলীয়। তিনি কাজ করেননি বা করতে পারেননি, না পারলে কেনো পারেননি , কি করলে পারতেন সে বিষয় তো দলকেই ভাবতে হবে। এসব প্রশ্ন করতাম , প্রশ্ন করলে সাইবার ক্রাইম এ্যাক্টে মামলা হতে পারে , সাংবাদিক বিশাল রহমান , তানভির হাসান তানু প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বুড়ো বয়সে জেলা খাটার ভয় তো থাকেই।

ইতোমধ্যে গনেশ উল্টেছে। যাদেরকে কে জিজ্ঞাসা করা যেতো তারা তো এখন ২ জায়গায় আছেন। ক) রাষ্ট্রীয় অতিথি খানায় জেল কয়েদিদের রান্না করা খাবার খেতে অভ্যস্থ হচ্ছেন খ) অন্যদল খাবার খাওয়ার প্রহর গুনছেন। আমাদের প্রশ্ন শোনার কেউতো নেই। আজি জোসনা রাতে সবাই গেছে বনে। এখন আর কাকে বলি? আপাতত: আমাদের নর্থ সার্কুলার রোডটা যদি একটু মেরামত করে দেওয়া যেতো তাহলে পৌরবাসীর খুবই উপকার হতো। সমস্যা হলো প্রশাসক সাহেবরা তো আর ভোট নিবেননা। তাদেরইবা টি ঠেকা?

ফেসবুক মন্তব্য


মতামত জানান :

 
 
আরও পড়ুন
 

শিরোনাম :

গাইবান্ধায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের  অভিযানে গাঁজা ব্যবসায়ী কামাল ফখরা গ্রেফতার ভিপি নুরের উপর পটুয়াখালীতে হামলা ভোলাবাসীর কাছে পুরোপুরি নিন্দনীয় কুড়িগ্রামের রাজারহাটে অপহরণের শিকার আনিছুর অবশেষে উদ্ধার ঠাকুরগাঁওয়ে অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায় বন্ধে সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসন এর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা বগুড়ায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে পুলিশের দুই সদস্য ছুরিকাহত তেঁতুলিয়া সীমান্ত দিয়ে ৫ জনকে পুশইন করলো বিএসএফ বগুড়া সদর থানা পুলিশ কর্তৃক পুরনো যুগের ০২টি পিতলের  মূর্তি উদ্ধার  ঠাকুরগাঁও জেলায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর বিশেষ চেকপোস্ট ও লক্ষাধিক টাকা জরিমানা আদায় ঠাকুরগাঁওয়ে সেনাবাহিনীর হাতে প্রতারক আটক গাইবান্ধায় গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা,স্বামীসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা ঘোড়াঘাটে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ যাত্রী নিহত সাঘাটায় হস্তকুটির শিল্প মেলার আড়ালে কোটি টাকার প্রতারণা জুলাইয়ের আন্দোলনে ছাত্রদের উপর হামলাকারী ও যুবলীগের সভাপতির ছেলে অর্থ-যোগানদাতা জুয়েল ঠাকুরগাঁও শিবগঞ্জে সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের অভিযানে এক মাদক ব্যবসায়ী আটক পার্বতীপুরে রক্ত যোদ্ধার পক্ষে দোকান উপহার মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ১০০ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা বগুড়া ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে প্রাইভেট শিক্ষক মিশু গ্রেফতার ভারতের গুজরাট ২৪২জন যাত্রী নিয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা, উদ্ধার কাজ চলছে মহেশতলা কান্ডে চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের হরিপুরে পিতার সামনেই দুই সন্তান নাগরনদীতে পানিতে ডুবে মৃত্যু মামা ছিল জুলাই আন্দোলনে ছাত্র হত্যাকারী আর ভাগ্নে এখন ছাত্রলীগ থেকে ছাত্রদল কর্মী ঠাকুরগাঁওয়ে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ম্যাজিস্ট্রেট বন্ধ করলেন বাসের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বগুড়ায় ২৪ ঘণ্টায় তিন জন নদীতে নিখোঁজ, দুই জনের মরদেহ উদ্ধার জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন বগুড়ায় এক নারীকে পেটালেন পুলিশ সার্জেন্ট ঠাকুরগাঁওয়ের পারপূগী বিদ্যালয়ের ৬০ বছর পূর্তিতে হীরক জয়ন্তী পালন  তাহিরপুরে সরকারী লবণ বিনা মূল্যের ১৫০ বস্তা গোপন দেয়ার অভিযোগ  বগুড়া ডিবির হাতে ঢাবি ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার হত্যা মামলায় নিষিদ্ধ সংগঠন আঃ লীগ নেতা গ্রেপ্তার
Translate Here »