admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ৪ জুলাই, ২০২০ ৯:৩৯ অপরাহ্ণ
নাগরিক ভাবনা স্কাউটঃ দিল্লীর সেন্টেনারী জাম্বুরী, সাদিয়া আফরিন তন্বী, টাংগন মুক্ত মহাদল, ঠাকুরগাও। বড় আপু মারিয়া আফরিন শাম্মী এবং বাবা আবু মহী উদ্দীন লন্ডনে ২০০৭ এ স্কাউট আন্দোলনের শতবর্ষে ২১ তম বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরীতে যোগদান শেষে দেশে ফিরেছেন আগষ্টের শেষে। এদিকে ডিসেম্বরের প্রথমে হবে বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টেনারী কমডেকা। এর আগের কমডেকা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৯৭ সালে ইন্দোনেশিয়ার লিবাখার্জোতে। এবারের কমডেকা হবে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে। ২০০৭ সালের শুরুতে কক্সবাজারে জাতীয় কমডেকা করে ইন্টারন্যাশনাল কমডেকার প্রস্তুতি পর্ব সেরে নেওয়া হয় এবং সেই কমডেকা থেকে পারফরমেন্সের ভিত্তিতে ইন্টারন্যাশনাল কমডেকার কর্মকর্তা মনোনীত করা হয়। সেন্টেনারী কমডেকার মুল কার্যক্রম হবে মহেশখালি দ্বীপে। বাবাকে কয়েকবার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা স্কাউট এর কমডেকা বিশেষজ্ঞদের সাথে কাজ করতে কক্সবাজার ,মহেশখালি করতে হয়েছে।
জাতীয় কমডেকায় আমার মা সেতারা বেগম টাংগন মুক্ত গার্ল ইন স্কাউট গ্রুপের রোভার দলের ইউনিট লিডার হিসাবে অংশগ্রহন করেছিল। ঠাকুরগায়ে গার্ল ইন স্কাউট দলের আলাদা ইউনিট না থাকায় সেই দলের সদস্য হিসাবে আমার অংশগ্রহনের সুযোগ হয়েছিল। আর ছোট বোন ঐশীর (৭) অংশগ্রহনের সুযোগ তো অটোমেটিক। কেননা ও আর একা থাকবে কোথায়। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টেনারী কমডেকার মুল কাজটা হয়েছিল মহেশখালি দ্বীপে। বাবা সেখানে প্রোগ্রাম ইনচার্জ ছিলেন। দেখতাম প্রোগ্রাম সফল করার জন্য বাড়ীতে কি পরিশ্রম করতেন। পেপার রেডী করতেন, ঢাকা পাঠাতেন, টেলিফোনে মহেশখালিতে কথা বলতেন। মাঝে মাঝে বিদেশীদের সাথে হংকং , ফিলিপাইন , সিংগাপুর কথা বলতেন। ১৬ ডিসেম্বর ২০০৭ কমডেকা থেকে ফিরলেন। ২০০৭ সাল। স্কাউট আন্দোলনের একশত বছর । এই শতবর্ষে সারা পৃথিবীতে ২০০ টিরও বেশি দেশে স্কাউটিংয়ের শতবর্ষ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসুচি পালিত হচ্ছে। আমাদের দেশে ইন্টারন্যাশনাল কমডেকা হলো। বছরব্যপী আরো কর্মসুচি আছে। শতবর্ষ উপলক্ষে ভারত স্কাউট এন্ড গাইড আয়োজন করেছে স্পেশাল সেন্টেনারী জাম্বুরী। ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির শুরু পর্যন্ত। অনুষ্ঠিত হবে দিল্লী শহর থেকে বেশ দুরে নিরানকারী ময়দানে। সেই জাম্বুরীতে যোগদানের সুযোগ পেলাম। বাংলাদেশ থেকে ১৫ জনের ১টি দল জাম্বুরীতে যাওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছে। আমি, বাপী, আম্মু, ঐশী, খালামুনি, বোদা থেকে হোসনে আরা খালা , নুরুল ইসলাম আংকেল , ডোমার থেকে ৩ জন , রংপুর , কুমিল্লা এসব জায়গা থেকে আরো ৩ জন। একসঙ্গে যাওয়া হলোনা। রংপুর কুমিল্লার ওরা ওদিক দিয়ে চলে গেল। আমার, ঐশী, আম্মু, খালামুনি ওদেরতো পাসপোর্ট নেই যাবে কেমনে। বাপীর পাসপোর্ট আগে থেকেই ছিল।
১৬ ডিসেম্বরে কমডেকা থেকে ফিরে ১৭ তারিখে দিনাজপুর গেলেন আমার পাসপোর্ট করতে। আম্মুর জিও হবেনা সুতরাং আমার মায়ের যাওয়া হবেনা , এ বিষয়ে বাবা সহ আমরা সবাই নিশ্চিন্ত ছিলাম। কেননা কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের কেউ এ রকম প্রোগ্রামে কখনো দেশের বাইরে যায়নি। মা অনেক কষ্ট করে কাব , স্কাউট , রোভার শাখায় বেসিক কোর্স এবং কাব ও স্কাউট শাখায় এ্যাডভান্স কোর্স করেছে। মজার ব্যপার হলো। বাবার আগে মায়ের জি ও হলো। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গর্ব অনুভব করলেন এই ভেবে যে , তাদের একজন কর্মকর্তা বিদেশের প্রোগ্রামে সুযোগ পেয়েছে আর তিনি যাবেননা তাতো হয়না। আর ১ দিনের মধ্যেই দিনাজপুর থেকে বাবা আমার আর মায়ের পার্সপোর্ট নিয়ে আসলেন। দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী হাসান আহম্মেদ অসম্ভব সহায়তা করেছেন। তিনি আগে ঠাকুরগায়ের পীরগঞ্জে ইউ এন ও ছিলেন। সে সময় বাবা জেলা স্কাউটস এর কমিশনার ছিলেন। হাসান আহম্মেদ সাহেব পীরগঞ্জে থাকা কালীন সময়েই পীরগঞ্জ ঠাকুরগাও জেলার মধ্যে স্কাউটিংয়ে ১ নং স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছিল। পরে তিনি রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার হিসাবে খুবই দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
বাবা , লুৎফুন্নেছা লিলি খালা ( ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা স্কাউট কমিশনার ও এ. এল. টি ) , মা এবং ঐশী সহ আমরা গেলাম রাজশাহীতে। ভারতীয় দুতাবাসে ভিসার জন্য। আমাদের ভিসা হলো , জি ও না আসার জন্য বাবার ভিসা হলোনা। ঐদিন বিকালেই ফ্যাক্স যোগে জি ও আনার ব্যবস্থা হলো , জি .ও আসলো বটে কিন্তু ভিসা নেওয়ার সময় হলোনা। তবে বাবার জিও পাঠানোর জন্য ঢাকা থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করেছেন জনাব মাহমুদুল হক বাবলু।তিনি সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা। তিনি চেষ্টা না করলে আমাদের ভারতের জাম্বুরীতে যাওয়াই হতোনা। তিনি লন্ডন জাম্বুরীতেও গিয়েছিলেন। আমরা গেলাম বেনাপোল। নুরুল ইসলাম আংকেল রাজশাহী থাকলেন ভিসা নেওয়ার জন্য। আমরা ২ দিন থাকলাম বেনাপোল। এই ফাঁকে সাতক্ষীরা, মঙ্গলা পোর্ট, সুন্দরবন দেখে আসলাম। অবশেষে বেনাপোল – প্রেট্রাপোল বর্ডার পার হওয়ার পর মনে হলো , কতলোক যে আমাদের চেনা জানা। কতদিনের পরিচিত এবং আপন জন। মালপত্র গোছগাছ করা , পাশপোর্ট এর কাজ করা , ডলার ভাংগানো . গাড়ী ঠিক করা সে কি যত্নের সাথে। নুরুল ইসলাম আংকেল ঐ সব সহায়তা নিচ্ছিলেন আর বাবা অসন্তষ্ট হচ্ছিলেন। তিনি চাচ্ছিলেননা , নুরুল আংকেল এই সহায়তা নিক। আমার বাবা ৪০ বছর ধরে স্কাউটিং করেন অথবা তিনি একজন প্রথম শ্রেনীর সরকারী কর্মকর্তা সে জন্য হতে পারে, এই সব ভেবে স্বস্তি বোধ করলাম। মালপত্র গাড়ীতে তোলার পর বুঝলাম খাতিরের মাজেজা। খাতিরের বিনিময়ে ভারতীয় মুদ্রায় ২০০ রুপি খসালো ওরা। এখানেই বলা ভালো যারা বিদেশ যাবেন ওদের খপ্পরে পরবেননা, ওরা দালাল। যা হোক উত্তেজনা বিরাজ করছিল , বিদেশে এসেছি। মা তো খুসীতে ডগমগ। বাবার কোন ভাবান্তর দেখলামনা। প্রায় আড়াই ঘন্টা লাগলো টাটা সুমোতে শিয়ালদা ষ্টেশনে পৌছাতে। শিয়ালদা ষ্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। শিয়ালদা রেলের স্কাউটদের একজন আমাদের রিসিভ করলো। ষ্টেশন থেকে কয়েক মিটার দুরে শিয়ালদা রেল স্কাউট দলের অফিসে আমাদের থাকার জায়গা হলো।
শিয়ালদা রেলওয়ে স্কাউটদের জেলা অফিস কক্ষে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হলো। বেডিং পত্র তো আমাদের সাথেই। ২ রুমে থাকার ব্যবস্থা হলো। বাংলাদেশ থেকে আসা আগের ৫জন এখানে ছিলো। ভোরে দেখলাম বাবা ওদের বাথরুম , টয়লেট আর বেসিন পরিস্কার করছেন। বিষয়টা পরে জিজ্ঞাসা করে জেনেছি , আমাদের আগের দল ছিল । ওরা নাকি টয়লেট এ বেকায়দা করেছে। ফলে ওদের ‘পচিশটি’ টাকা খরচ করে ঠিক করতে হয়েছে। এই বিষয়টা ওরা আমাদেরকে কয়েকবার মনে করে দিতে ভোলেনি। আমরা যাবার পর আবার দুর্নামে না পড়ি সে জন্য বাবা নিজ হাতে এই কাজ করলেন। তবে প্রশ্ন ওরা জানল কিনা যে বাবা এসব পরিস্কার করলেন। জিজ্ঞাসা করেছিলাম কাজটা যখন করলেই তখন ওদের জানতে দিলেনা কেন ? ফেরত জবাব , ব্যাডেন পাওয়েলের পরামর্শ ঐধাব ঃযব ড়িৎষফ নবঃঃবৎ .পরে আরো জেনেছিলাম সেখানে ফ্রি থাকা যায়নি। মাথাপ্রতি ২৫ রুপি করে গুনতে হয়েছে। এমনকি ঐশীও গননা থেকে বাদ যায়নি। ওর জন্যও টাকা দিতে হয়েছে। অথচ ঐশী এতো ছোট যে কোথাও ওর ভাড়া লাগেনি। ভেবেছিলাম রাতের ট্রেনে দিল্লী যেতে হবে। বাবা আর সালাম চাচা গাইড নিয়ে গেলেন শিয়ালদা ষ্টেশনে টিকিট কাটতে। ফিরে এসে জানালেন পরের দিন রাত ৯-২০ মিনিটে ট্রেন ছাড়বে হাওড়া থেকে। কালিকা মেইলে দিল্লী । একেবারে টিকিট করে ফিরলেন। পরের দিন কলকাতা বেড়ানো। শিয়ালদা স্কাউটকে বলে একজন গাইড সংগ্রহ করা হলো। তরুন বাবু আসলেন ব্যারাকপুর থেকে। তিনি সারাদিন আমাদের সাথে থাকলেন। একেবারে হাওড়া ট্রেনে তুলে দিয়ে গেলেন। ভদ্রলোক নিবেদিতপ্রান স্কাউট। বেড়ানোর সময় নিজে কষ্ট করেছেন , হেটেছেন রিক্সা বা টাংগায় উঠার আগ্রহ দেখাননি। অথচ তা পারতেন। নিরব কর্মী, প্রকৃত স্কাউট। মোটামুটিভাবে কলকাতার দর্শনীয় জায়গাগুলি বাদ গেল না। আকাশবানী ভবন , ইডেন গার্ডেন , ঘোড়দৌড়ের মাঠ তো দেখলাম। দেখলাম লালবাজার থানার সামনে বিনয় বাদল দিনেশের আবক্ষ মুর্তি ।
দেখে শিহরন অনুভব করলাম। ফিরে গিয়েছিলাম বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে বাঙ্গালীর অবদান ও আত্মত্যাগের হাজারো কাহিনীতে। সবাই হেঁটেই গেল। তবে মাকে একবার টাংগায় উঠতে হলো। ভারী শরীর , হেঁটে শহর ঘোরার জন্য তত উপযুক্ত নয়। সবচে মজা হলো ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে । ইংরেজ শাসন আমলের তৈরি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ব্রিটিশ শাসনের শৌর্য বীর্যের স্বাক্ষী হয়ে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শক ২০ রুপি করে টিকিট করে দেখছে। প্রতিদিন হাজার দশেক লোক দেখলে প্রতিদিন ভারতীয় মুদ্রায় ২ লাখ রুপ আয় করে। বৃটিশ বেনিয়ারা ব্যবসা করার বন্দোবস্ত করে দিয়েছে কলকাতাবাসীকে। ভিতরে যে আহামরি কিছু আছে তা নয়। তবে বিল্ডিংটার গঠনপ্রনালী মানুষকে আকর্ষন করে বেশী। বৃটিশ লাটদের শৌর্য বীর্যের জীবন্ত উপস্থাপনা থাকলেও সংযোজিত হয়েছে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বহু আলোকচিত্র । ওরা ছবি তুলতে দেয়না। কলকাতায় ট্যাক্সি, টাঙ্গা দেখলাম। মানুষ টানা রিক্সা দেখলাম। মজার ব্যপার নাম শুনতাম ট্রাম, এবারে চড়লাম । কলকাতার সবচে সস্তা বাহন এই ট্রাম। তবে গতি একটু কম এই যা। আমরা যেখানে নামলাম, সেখানকার ভাড়া দিলাম সাড়ে চার রুপি করে। আবার টাউন সার্ভিস বাসগুলো বড্ড বুড়া মার্কা। তবে সবাই টিকিট কাটে। আমাদের মতো কন্ডাক্টর ঘুরে ঘুরে টিকিট কাটেনা।
যাত্রীদেরই নিজ দায়িত্বে টিকিট সংগ্রহ করতে হয় , কন্ডাক্টর এক জায়গায় বসে থাকে। এক মার্কেটে দেখি . মাটির নীচে গ্যারেজ। গাড়ী ঢোকানোর মেসিন আলাদা। মেসিন দিয়ে গাড়ী উঠা নামা করে। কলকাতা যাদুঘর বেশ সমৃদ্ধ, সংগ্রহ বিশাল। কোলকাতা যাদুঘরে কালেকশন অনেক বেশী। তবে আপাত দৃুষ্টিতে মনে হলো হিন্দু মাইথোলজির উপরে কালেকশনটা বেশী। বিশাল বিশাল পাথরের মূর্তি এগুলো পরিবহনইবা কেমন করে করেছে তাও একটা ভাববার বিষয়। আমরা যখন যাদুঘরের ভিতরে তখনও বাপী এসে পৌঁছাননি। তিনি কি কারণে বাইরে আটকে পরেছিলেন। পরে এসে আমাদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন। যাদুঘর দেখা শেষ করলাম তাড়াতাড়ি। তবে যাদুঘর ভালো করেই দেখতে হয়। আর তাতে একদিনতো লাগবেই। আমাদের হাতে কি আর অতো সময় আছে। তবে এখানে একটা ঘটনা ঘটেছিল , মা‘তো আর হাঁটতে পারছিল না। সে জন্য একটা টাঙ্গায় করে তাকে যাদুঘর গেটে আনা হয়েছিল। বিদেশে গিয়ে আমার মায়ের শারীরিক সক্ষমতা বিবেচনার মানদন্ড ছিল এইটা। বিদেশে গেল একটু বেশী হাঁটাহাঁটি করতে হয়। যারা বিদেশে যাবেন তারা আগেই এই বিষয়ে অনুশীলন করে যাবেন না হলে ঠকতে হবে। বিদেশীদের জন্য সব জায়গায় টিকিটের দাম বেশী হলেও তরুন বাবু সব জায়গায় আমাদের ভারতীয় বানিয়ে ছাড়লেন। এতে আমাদের উপকার হয়েছে।
দুপুরে এক হোটেলে খেলাম। খাবার দাবার বাংলাদেশের তুলনায় সস্তা। রাতে বাবা এক মুসলিম হোটেল আবিস্কার করলেন। গরুর মাংশ ভাত , ডাল ১০ রুপি আর স্পেশাল খাবার ১১ রুপি। আমরা স্পেশাল খেলাম । অনেকগুলো মাংশ দিলো । মুলতঃ ছালাত লেবুর জন্য ১ রুপি বেশী। তবে হোটেলটা খুব উন্নত নয়। কলকাতায় একটা বিষয় খেয়াল করার মতো। তা হলো অনেকে ডিউটি প্লেসে খায়। সে কারনে দুপুরের খাবারের সময় রাস্তার ধারে ধারে অস্থায়ী হোটেল বসে। খাবারের সময় শেষ হলে ও সব দোকান আর থাকেনা। চা খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা আছে মাটির কাপে। দেড় আর দুই রুপি করে দাম। তবে আমাদের নাস্তা করা বা খাবারের সময় ভারতীয়রা অবাকই হতো আমাদের খাবারের বহর দেখে। মনে হলো ওরা খরচের ব্যপারে বেশ সচেতন। কলকাতার ট্যাক্সি ভাড়া ডাবল দিতে হয়। ট্রাম লাইনগুলো সদর রাস্তার মধ্যে দিয়ে। বেশ ভালো ব্যবস্থা। একই রাস্তা দিয়ে রিক্সা , বাস , ট্যাক্সি , ট্রাম সবই চলতে পারে। ট্রাম চলে গেলে রাস্তা পড়ে থাকে সুতরাং এ সময় কাজে লাগানো যায়। কলকাতার সব যান বাহনেই একটু একটু করে ওঠা হলো। তবে ঘোড়ার গাড়ীতে ওঠার মওকা পাওয়া গেলনা। ঢাকার মতো কিছু সৌখিন ঘোড়ার গাড়ী দেখা গেল। এরপর উঠলাম কলকাতা পাতাল (মেট্রো) রেলে। দমদম বিমান বন্দর বাদ যায়নি। শিয়ালদা ষ্টেশনের বাথরুম ব্যবস্থাটা বেশ ভালো। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। টাকা দিয়ে গোসল করা যায়। আমাদের ছেলেরা সে সুযোগ নিয়েছে। এদিকে সময় হলো কলকাতা ছাড়ার। ট্যাক্সি নিয়ে হাওড়া ষ্টেশনে গেলাম। এতদিন হাওড়া ব্রীজ ছবিতে দেখেছি। আজ চোখে দেখলাম, কত দিনের পুরনো। হুগলী নদীর উপরে ব্রীজ। কলকাতা শহরকে চিরে দিয়েছে হুগলী নদী। হাওড়া নামলাম। ও বাবা এতো দেখি শিয়ালদা থেকেও এলাহী কারবার।
হাওড়া ষ্টেশন থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে হাওড়া নদীতে লঞ্চে উঠার যোগাযোগ আছে। প্রতিদিন কত হাজার যাত্রী হাওড়া ছাড়ে তা বলা মুশকিল। কতগুলো প্লাটফরম। আগে থেকে জানার কোন উপায় নাই কোন ট্রেন কোন প্লাটফরম থেকে ছাড়বে। আগে জানাজানি হলে লংকা কান্ড ঘটে যাবে। আমাদের দেশের মতো ঘন্টা বাজেনা। বিলবোর্ড অনুসরন করতে হয়। ট্রেন আসবে , লোকজন নামবে , গাড়ী পরিস্কার হবে। গাড়ী নির্ধারিত প্লাটফর্মে প্লেস হবে, খুব বেশী ৩০ মিনিট আগে বিলবোর্ডে ট্রেনের নম্বর সহ গন্তব্য , প্লাটফরমের নম্বর উঠবে। যাত্রীরা উঠবে , সময় মতো ট্রেন ছাড়বে। এসি বার্থের যাত্রী হিসাবে ষ্টেশনে ভি আই পি রেস্ট হাউসে উপর তলায় আমাদের থাকার সুযোগ ছিল। মালপত্র অনেক থাকায় নীচেই মাটিতে বেডিং বিছিয়ে থাকলাম। ঐশীতো মহাখুসি। ষ্টেশনের একটা রেষ্টুরেন্টে গেছে , সেখানে শান্তাক্লজ এর মতো কার্টুন আমাদের ফ্যান্টাসি কিংডমে যেমন আছে , যা বাচ্চাদের আনন্দ দেয় , তার সংগে সে খুব মজা করলো। তরুন বাবু বিদায় নিলো। যাবার সময় তার চোখ ছল ছল করছিল। সারাদিন আমাদের সেবা দিলো , কলকাতা সম্পর্কে ধারনা দিলো , ঘুরে নিয়ে বেড়ালো। অবশেষে বিলবোর্ডে উঠলো, কালিকা মেইলের খবর। মালপত্র নিয়ে ছুটলাম । প্রচন্ড ভীড়। মনে হলো কলকাতার সব মানুষ এই ট্রেনে যাচ্ছে। (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)