admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ৯ এপ্রিল, ২০২৩ ৬:২৭ অপরাহ্ণ
রফিকুল ইসলাম জিলু , ব্যুরো প্রধানঃ সাভারে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে (ডেইরি ফার্ম) শাহ জালাল নামের এক চাকরি প্রার্থী মাস্টার রুল (এমআর) অনিয়মিত শ্রমিক পদে গততিন বছর আগে সাভার ডেইরি ফার্মের ওয়ার্ক্সম্যান ইউনিয়নের সভাপতি মো. আসাদুর রহমানের কাছে দুই মেয়াদে ৫ লাখ টাকা দেয়। চাকরি দেওয়া কথা বলে নানা অযুহাততে ঘুরাতে থাকে আসাদুর রহমান। একসময় শাহ জালালকে একটি নিয়োগ পত্র দিলেও তার নিয়োগ পত্র বৈধতা নেই জানিয়ে চাকরি করতে দেয়নি ডেইরি ফার্ম কর্তৃপক্ষ।
চসেই টাকা চাইতে গেলে নানা হুমকি ধামকির মুখোমুখি হতে হয় শাহ জালালের। এতো টাকা শ্রমিক নেতা নামের এই দালালকে দিয়ে অসহায় জিবন যাপন করছেন শাহ জালাল ও তার পরিবার। বুধবার (০৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কথা হয় শাহ জালালের সাথে। শুধু শাহ জালালই নয় তার মত আরও শতাধিক চাকরি প্রার্থী বিভিন্ন মেয়াদে নানা অংকের টাকা চাকরির জন্য শ্রমিক নেতাদের কাছে দিয়ে হতাশায় আছেন। ডেইরি ফার্মসহ বিভিন্ন সূত্রে গেছে, ২০২১ সালে জনবল নিয়োগের জন্য ডেইরি ফার্মের পরিচালকের পক্ষ থেকে প্রানী সম্পদ অধিদপ্তরের একটি আবেদন করা হয়েছিলো। সেই আবেদনে মাস্টার রুলের (নিয়মিত) পদে ১৩ জন ও মাস্টার রুল (অনিয়মিত) পদে ১১৪ জনসহ মোট ১২৭ জন শ্রমিক নিয়োগ হওয়ার কথা। তবে এই দুইটি পদের নিয়োগের ব্যাপারে এখনো কোনো কার্যক্রমই শুরু হয়নি। আর কোথাও বিজ্ঞাপন বা নোটিশও দেওয়া হয়নি৷
শাহ জালাল বলেন, মাস্টার রুল (এমআর) অনিয়মিত শ্রমিক পদে চাকরির জন্য আসাদুর রহমান কাকার কাছে প্রথমে ৭০ হাজার পরে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম তিন বছর আগে৷ লিখিত না থাকলেও যার একাধিক প্রতক্ষ্যদর্শী সাক্ষী আছে৷
চাকরি দেওয়ার কথা বলে শুধু ঘুরিয়ে তিন বছরে আমার জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছে সে। চাপাচাপির এক পর্যায়ে সে আমাকে একটি নিয়োগ পত্র দিলেও অফিস থেকে আমাকে কাজ করতে না করে দিছে ৷ তার অভিযোগ, এখন টাকাও দেয়না চাকরিও দেয় না। আসাদ কাকার বিষয়ে কাউকে কিছু বললে তিনি আমাকে বলেন, তুমি যাদের কাছে যাও তারা কি তোমার চাকরি দিতে পারবে?
বা ডেইরি ফার্মের এমন কেউ নেই যে আমার কিছু করতে পারবে৷ এরকম ভাবে আমাকে ও আমার পরিবারকে ভয়ে রাখতে চায়৷ আসাদ কাকা আমার মত ২০-২৫ জনের কাছে টাকা নিছে ৷ অন্য দিকে বর্তমানে ডেইরি ফার্মে মাস্টার রুল (এমআর) পদে চাকরি করেন তাঁরা মিয়া।চাকরি জীবনে প্রায় শেষ সময়ে এসে পরেছে তার৷ সে কারণে সাভার ডেইরি ফার্ম ওর্য়াক্সম্যান ইউনিয়নে সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলামের কাছে ছেলের চাকরির জন্য ২ লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। রোববার (২ এপ্রিল) বিকেলে ডেইরি ফার্মের ভেতরে তাঁরা মিয়ার বর্তমান কোয়ার্টারে গেলে তিনি না থাকায় কথা হয় তার স্ত্রীর সাথে। তিনি বলেন, ‘আমরা ডেইরি ফার্মেই জীবন কাটিয়ে দিলাম। আমাদের পোলাপানও এখানেই হয়েছে।
আমার জামাইয়ের চাকরির বয়স প্রায় শেষর দিকে। দুই ছেলে রিপন আর আলমাসকে বিয়ে দিয়েছি। এখন আমার স্বামীর চাকরি চলে গেলেও যেনো ডেইরিতে আসতে পারি সেজন্য এক ছেলের চাকরির জন্য যোগাযোগ করছিলাম আমাদের এক পরিচিত আত্নীয় মেহের কন্টাক্টারের সাথে৷ তিনি টাকা নিছে কিন্তু চাকরি দিতে পারেনি। সেটা জানতে পেরে আরিফ আমাদের কাছে এসে বলে চাকরি আমরা নিয়ে দেবো৷ পরে আমার ছেলের শশুর বাড়ি থেকে ১ লাখ ও ঘরে থাকা ১ লাখ মিলিয়ে দুই লাখ টাকা আরিফের কাছে গত রোজায় দেই। আরিফ বলছে, চাকরি না দিতে পারলে টাকা ফেরত দিবে৷’তিনি ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘কিন্তু সেই চাকরির কোনো খবরই আমি পাই না৷ সবাই চাকরি নিয়ে ছোটাছুটি করছে কিন্তু আমরাদের কোনো খবর নাই। আমাগো ভাগ্যে চাকরি নাই। টাকা দিয়েও আমরা চাকরি পাইনা। ওই যে আমাগো চাইতে বেশি টাকা দিয়ে চাকরি নিয়ে নেয় অনেকই’।
একই অভিযোগ সাভার ডেইরি ফার্ম ওর্য়াক্সম্যান ইউনিয়নের বর্তমান কমিটির সদস্য ও মাস্টার রুল পদে কর্মরত গোলাম মোস্তফার। তিনি তার ছেলের জন্য চাকরি প্রত্যাশী। তবে তার কোনো টাকা দেওয়ার সমর্থন নেই। আর তার কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করেও কোনো আশ্বাস পাননি তিনি। তাই তিনি ছেলের চাকরির আশা বাদ দিয়েছেন।
গোলাম মোস্তফা বলেন, একবছর আগে বর্তমান কমিটির সাথে আমিও পাশ করেছি।শুনতেছি ৬ মাস যাবৎ মাস্টার রুল পদে নিয়োগ হবে। আমার ছেলে ইন্টার পাশ করেছে।
তার চাকরির জন্য আমি আমাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মাঝে মধ্যেই বলি। তারা আমার কথা এরিয়ে যান। আমার একটি দাবি আছে এই প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু ওরা দুর্নীতি করতেছে করুক। তাদের সাথে আমরা পারিনা। চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা দিয়ে বাইরে থেকে লোক এনে চাকরি দেয়। আমরা সদস্য হিসেবে কোনো সুবিধা পাইনা। এটার নামই তো দুর্নীতি, এটা কে ধরবে বলেন? তিনি এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে বলেন, এখন আমার মনে হয় আমি নিজে আত্নহত্যা করি৷ কেনো জানেন, চাকরি করছি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৪০ বছর।
আমি বাড়ি যাওয়ার সময় ভাড়াটা নিতে হবে ধার করে। আমি চাকরি পাওয়ার পর শত শত লোক নিছে এই প্রতিষ্ঠান। আমি আবেদন করছি তারা বলছে, ‘এই গোলাম মোস্তফা, বাদ দাও’। অর্থাৎ আমি টাকা দেইনি দেখে বাদ হয়ে গেলো আমার আবেদন।
সাভার ডেইরি ফার্মের ওয়ার্ক্সম্যান ইউনিয়নের সভাপতি মো. আসাদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ মুন্সিসহ আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক সংবাদকর্মীকে মারধরের পর থেকেই তারা পলাতক রয়েছে।
তাই তাদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। গত দুই তিন দিন থেকে তাদের ইউনিয়নের বসতে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন ডেইরি এলাকার কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা। কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার সাভারের পরিচালক ডা: মো: মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি নতুন দুই মাস হলো এখানে এসেছি। এ ধরণের অসঙ্গতির বিষয়ে আমার এখনো জানা নেই। যদি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকে সে ক্ষেত্রে আমি ব্যবস্থা গ্রহন করবো। চাকরি কথা বলে যদি ডেইরি ফার্মের কেউ টাকা নিয়ে থাকে তবে তার যথাযথ প্রমান দিতে পারে তাহলে অই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।