admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ২:৩১ অপরাহ্ণ
রফিকুল ইসলাম জিলু, ব্যুরো প্রধানঃ সাভারের রানা প্লাজা ধসে প্রাণ গেছে ১ হাজারের বেশি শ্রমিকের, মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনায় প্রাণে বাঁচলেও পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে আরও অনেককেই। বিশ্বব্যাপী আলোচিত ওই ট্রাজেডির ৯ বছর পূর্তি হয়েছে আজ। দিবসটি উপলক্ষে নিহত সহকর্মী-স্বজনদের স্মরণ করতে রানা প্লাজার অস্থায়ী বেদীর সামনে এসেছেন অনেকেই। তারা বলছেন, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের মৃত্যুর মিছিল আজও থামেনি। জীবিকার জন্য আর একটি মৃত্যুও যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপত্তার নিশ্চয়তাসহ রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার মৃত্যুদণ্ডের দাবিও জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠনসহ নিহত আহত শ্রমিকের স্বজনেরা।

সাভারের রানা প্লাজা ট্রাজেডির।
রবিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে রানা প্লাজার অস্থায়ী বেদীতে নিহত শ্রমিকদের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে এসে এসব কথা বলেন নিহত শ্রমিকের আত্মীয় আহত শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। রানা প্লাজার অস্থায়ী বেদীতে শ্রদ্ধা জানাতে আসা সংগঠনগুলোর মধ্যে আছে. সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম, বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগ, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র ও আহত নিহত শ্রমিকসহ আত্মীয়-স্বজনরা ।
শ্রদ্ধা জানানোর আগে বক্তারা বলেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা এখনও ঘটছে। শ্রমিক হতাহতের ঘটনাও বেড়েই চলেছে। অক্ষম ও অসহায় হচ্ছে শত শত শ্রমিকের হাত। এসব দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের স্থায়ী পুনর্বাসন, আহতদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা ও মানসিক ট্রমা থেকে মুক্ত করার জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা করা প্রয়োজন এবং অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও পরিবার ন্যায়সঙ্গত ক্ষতিপূরণ পাননি।
তারা দাবি করেন, শ্রমজীবী মানুষের জীবন ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা বিষয়ে কারখানা মালিক ও শ্রমিক নিয়োগকারীদের অবস্থা অবহেলা-উদাসীনতা ও আইন অমান্য করার প্রবণতা রয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারের নিয়মিত পরিদর্শন ও আইন বাস্তবায়নে দৃঢ়তার অভাব এবং শ্রম আইনে নামমাত্র ক্ষতিপূরণের বিধান নিরূপণ নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫৩ শতাংশ। শারীরিক অক্ষমতার কারণে এদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। মানসিক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন ১০ শতাংশ। অবশিষ্ট ৪৭ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থানে নিযুক্ত রয়েছেন। আহত শ্রমিকদের মধ্যে ঘন ঘন কাজ পরিবর্তন করার প্রবণতা দেখা গেছে। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৯ বছরে বেঁচে যাওয়া ২০০ শ্রমিকের ওপর জরিপ চালিয়েছে একশনএইড বাংলাদেশ। এই জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর মহামান্য হাইকোর্ট এর নির্দেশে গঠিত কমিটি ক্ষতিপূরণের পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ টাকা করলেও সেই সুপারিশ আজও বাস্তবায়িত হয়নি বলে জানান বক্তারা। তারা বলেন, কর্মস্থলের নিরাপত্তা বিধানে দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি আজও। ৯ বছর অতিক্রান্ত হলেও রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলা ও বিল্ডিং কোড সংক্রান্ত আইন ভঙ্গের মামলার আজও নিষ্পত্তি হয়নি। এসময় সংগঠনের নেতাকর্মীরা সোহেল রানার মৃত্যুদণ্ড চেয়ে স্লোগান দেন। মানববন্ধন শেষে শ্রমিক সংগঠনগুলো সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।