মিরু হাসান || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর, ২০২৫ ৮:০০ অপরাহ্ণ
বগুড়ার আদমদীঘিতে সান্তাহার এসএমআই (সুন্দর মাহমুদিয়া ইসলামিয়া) একাডেমীর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে এলাকাবাসীর বিস্তুর অভিযোগ রয়েছে। বিষয়গুলো উল্লেখ করে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর বগুড়া জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
অভিযোগের বিষয় নিয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে কৃষি অফিসারসহ তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ২৯ ডিসেম্বর তদন্ত কর্মকর্তারা পরিদর্শনে যান। এসময় প্রধান শিক্ষক স্কুলে অনুপস্থিত ছিলেন। পরে ৩১ ডিসেম্বর অতিরিক্ত সময়ের চেয়ে কমিটির কাছে আবেদন করেন অভিযোগ ওঠা ওই শিক্ষক।
কিছুদিন পরেই অভিযোগের সম্পন্ন তদন্ত হওয়ার পূর্বেই ওই তদন্ত কমিটির আহবায়ক উপজেলা কৃষি অফিসার মিঠু চন্দ্র অধিকারীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করান প্রধান শিক্ষক তহমিনা বেগম। তবে উপজেলা তদন্ত কমিটি সল্প সময়ের মধ্যে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর করা লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৫ ও ৬ জানুয়ারি “সান্তাহারে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ” একাধিক শিরোনামে বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়। পরে এই অভিযোগের পদক্ষেপের জন্য বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন ওই সময়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেভিনিউ ডিপুটি কালেক্টর (আরডিসি) সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও তদন্ত কমিটির আহবায়ক মুর্শেদা খাতুন। এ ঘটনায় ১৮ ফেব্রুয়ারী তিনি ওই স্কুলের তদন্ত পরিদর্শনে আসেন। কয়েকদিন পর তার নামেও মামলা দেন অভিযোগ ওঠা ওই প্রধান শিক্ষক তহমিনা বেগম। এভাবে তদন্ত কমিটির একাধিক কর্মকর্তাকে মামলা দিয়ে ব্যাপক হয়রানি করান তিনি।
এদিকে সংবাদ প্রকাশের প্রায় ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কোন জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। যারফলে অভিযোগ ওঠে আসা ওই শিক্ষক পূর্বের মতোই একক আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছেন বলে জানান স্থানীয়রা। এ ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তরাও মামলায় ভোগান্তির ফলে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, উপজেলার সান্তাহার এসএমআই একাডেমীর প্রধান শিক্ষক তহমিনা বেগমের নামে নিয়োগ বাণিজ্য, প্রাচীর নির্মাণ, বাগান করা, স্কুল মাঠের উন্নয়ন, স্বেচ্ছাচারীতাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময় ১৯৯৭ সালে সান্তাহার এসএমআই (সুন্দর মাহমুদিয়া ইসলামিয়া) একাডেমীর ইংরেজি বিভাগে সহকারী শিক্ষিক হিসেবে যোগদান করেন তহমিনা বেগম। ওই সময়ে তার পিতা মোশারফ হোসেন বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং তার বোন জামাই (দুলাভাই) সিরাজুল ইসলাম খান রাজু আদমদীঘি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। ফলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষক নিয়োগ কমিটিকে হাত করে তিনি নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন।
নিয়োগ প্রাপ্তের পর থেকে স্কুলে নিজের খেয়াল খুশি মতো যাওয়া-আসা করতেন। কাওকে পরোয়া না করে ক্লাস বা অন্যান্য বিষয়ে সরকারি নিয়মনীতি লঙ্ঘনও করতেন তিনি৷ বিষয়টি জানাজানি হলেও প্রভাবশালী ছত্রছায়ায় থাকায় তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধাগ্রস্ত হন উপজেলা প্রশাসন। এই ভাবে কয়েকবছর ধরে চাকরি করে আসছিলেন তিনি। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে পূণরায় ক্ষমতায় এলে তার বোন জামাই (দুলাভাই) সিরাজুল ইসলাম খান রাজু উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ভোটে নির্বাচিত হন। এরপর থেকে শুরু হয় সহকারী শিক্ষক তহমিনা বেগমের একক আধিপত্য। এরমধ্যে ২০১২ সালে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ খালি হয়৷ ফলে যোগ্য সম্পন্ন দুই সিনিয়র শিক্ষকের প্রাধান্য থাকা সত্বেও ক্ষমতার কাছে অসহায় হয়ে পড়েন তারা। এদিকে সহকারী শিক্ষক তহমিনা বেগম বিধি অনুসারে বয়সে কম এবং বিএড ডিগ্রী না থাকায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়োগ স্থগিত করে রাখেন। পরিবর্তীতে বিএড পরীক্ষায় একাধিক বার অকৃতকার্য হলে তার বোন জামাই ক্ষমতার অপব্যবহার করে বহুবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করেন ৷ পরিশেষে অবৈধ উপায়ে বিএড পরীক্ষায় কৃতকার্য দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে তাকে পদোন্নতি দেন। বিষয়টি নিয়ে সিনিয়র শিক্ষকরা অভিযোগ করলে উল্টো তাদের চাকুরীচ্যুত এবং প্রাণনাশের হুমকি-ধামকি প্রদান করেন উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান রাজু।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, স্কুলের আয়-ব্যয়ের কোন সঠিক হিসাব দিতেন না কাওকে। আয়ের একটি অংশ শিক্ষকদের বেতনের সাথে যুক্ত করার কথা থাকলেও কাউকে এ সুবিধা প্রদান করতেন না। বরং শিক্ষক বা স্কুলের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের জন্য বিভিন্ন সময় বরাদ্দকৃত বাজেট খরচ না করে ভুয়া বিল ভাউচারে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। এ ব্যপারে কোন শিক্ষক বা কমিটির কাউকে তিনি বলার প্রয়োজন মনে করেননি। এরপর স্কুল কমিটিতে যোগ্য লোকের পরিবর্তে অযোগ্য ও আওয়ামী সরকারের সমর্থক নেতাকর্মী বা নাম পরিচয়হীন ব্যক্তিদের দিয়ে নিজের ইচ্ছে মতো কমিটি তৈরী করেন। কমিটির রেজুলেশন অনুযায়ী স্কুলের জমিদাতার উত্তরাধীকারিদের মধ্যে থেকে সভাপতির প্রথা থাকলেও তা মানা হয়নি। যার ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জমিদাতারা। বিভিন্ন সময় স্কুলে অডিট আসলে তার বোন জামাইকে দিয়ে উৎকুচ প্রদান করে তাদের ম্যানেজ করতেন। এবং সেই টাকা সকল শিক্ষকের বেতন থেকে কেটে নেওয়া হয় বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।
এরপর গত একযুগ ধরে বিভিন্ন সময় স্কুলে নতুন শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের নামে নিয়োগ বানিজ্য করতেন তারা। প্রতিটি শিক্ষকের থেকে ১০/১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন৷ এই টাকা কমিটি বা স্কুল ফান্ডে না রেখে সম্পন্ন টাকা তারা আত্মসাৎ করেন।
প্রাচীর নির্মাণ, বাগান করা, স্কুল মাঠের উন্নয়ন করা, পরিচ্ছন্নতার জন্য বিভিন্ন সময় বিপুল অর্থ বরাদ্দ করা হলেও নাম মাত্র কাজ দেখিয়ে ওই টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। স্কুলের ভিতরে জঙ্গলাকীর্ণ এবং ভবনগুলো ধ্বংসস্তুপে পরিনত হলেও এ ব্যাপারে কোন মাথাব্যথা নেই তার। সিনেমা হল সংলগ্ন পুরাতন ধ্বংসপ্রাপ্