admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর, ২০১৯ ১:২৪ অপরাহ্ণ
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের ব্যানারে বিএনপির নেতাকর্মীরা মঙ্গলবার দুপুরে হাইকোর্টের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। তাদের হটাতে পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই মঙ্গলবার রাজধানীর হাইকোর্টের সামনের সড়কে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের ব্যানারে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান নেন। সড়ক অবরোধের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এতে সাধারণ পথচারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল মেরে টিয়ারসেলের জবাব দেন। এ সময় কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী যান চলাচল বন্ধ থাকার পর পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ সময় কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি এইচএম আজিমুল হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। ভিডিও ফুটেজ দেখে ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাইকে আটক করা হবে। গতকাল দুপুর ১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুলস্নাহ আল নোমানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি বিশাল মিছিল হাইকোর্টের দিকে অগ্রসর হয়ে হাইকোর্টের সামনে প্রধান ফটকে অবস্থান নেয়। নেতাকর্মীরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়াও পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে হাতে পস্ন্যাকার্ড নিয়ে স্স্নোগান দিতে থাকেন। এ সময় তাদের হাইকোর্টের সামনে শুয়ে পড়তে দেখা যায়। ভেতরে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী ফোরামের নেতাকর্মীরাও বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে স্স্নোগান দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। এ সময় স্স্নোগানে মুখরিত হয় ওই এলাকা। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ শুরু করে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে চায়। এ সময় নেতাকর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। হাইকোর্টের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে আবদুলস্নাহ আল নোমান ছাড়াও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুলস্নাহ চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানসহ ছাত্র ও যুবদলের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
সরেজমিন দেখা যায়, ১০টি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস ভাঙচুর হয়েছে। সবগুলো যানবাহনের সামনে ও পেছনের কাচ ভাংচুর হয়েছে। রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় ইট, পাথর ও লাঠিসোঠা। এ সময় সাধারণ পথচারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেককে দৌড়ে হাইকোর্টের ভেতরের পাশাপাশি নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতেও দেখা যায়। আর বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করা হলে তারা কেউ কেউ হাইকোর্টের ভেতর প্রবেশ করেন। আবার অনেকেই জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান নেন।
এর আগে দুপুর ১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে হাইকোর্টের দিকে অগ্রসর হয়। এর কিছুক্ষণ পরই মিছিলটি হাইকোর্টের দ্বিতীয় গেটে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় হাইকোর্ট থেকেও বিএনপিপন্থি আইনজীবীসহ অনেকেই মিছিলে যোগ দেন। এ সময় পুলিশ একবার এসে ছত্রভঙ্গ করতে চেয়েও ফিরে যায়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী তারা অনেক দূরে অবস্থান নিয়ে তাদের সদস্য সংখ্যা বাড়ায়। এদিকে হাইকোর্ট থেকে মৎস্য ভবন যেতে একপাশের সড়ক যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ছত্রভঙ্গ করা হয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা
হাইকোর্টের ভেতরেও মিছিল করে
অবস্থান কর্মসূচিতে আবদুলস্নাহ নোমান বলেন, ‘আমরা কোনো অসাংবিধানিক কাজ করছি না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার নেতাকর্মী ঘর ছেড়ে আজ রাজপথে নেমেছেন। রাজপথই আমাদের ঠিকানা। যতক্ষণ সম্ভব হবে ততক্ষণ অবস্থান করব। পুলিশ যেন আমাদের উসকানি না দেয়।’ তার এই বক্তব্য শেষ হতে না হতেই টিয়ারসেল ছুড়তে শুরু করে পুলিশ। তখন বিএনপি নেতাকর্মীরাও চড়াও হলে ব্যাপক সংঘর্ষ বেধে যায়। চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘বেআইনিভাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা হাইকোর্টের সামনের সড়ক অবরোধ করে রেখেছিল। এটি ঢাকা মহনগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। আমরা তাদের কয়েকবার বুঝিয়েছি সড়কটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য, কিন্তু তারা ছাড়েনি। একপর্যায়ে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে। পরে তারা গাড়ি ভাঙচুর করতে করতে চলে যায়। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি ও সড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক করে দেই। গত রোববার বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘মিছিল-সমাবেশ করতে আর কখনও বিএনপি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি চাইবে না। যখন খুশি তখন সমাবেশ করবেন। এটা তাদের সংবিধানিক অধিকার। তাই সকলকে দল-মত নির্বিশেষে সামনের দিনগুলোতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। মির্জা ফখরুলের সেই ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে ঢাকার রাজপথে অবস্থান নিল বিএনপি।দুদকের দুই মামলায় দন্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রম্নয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার কারামুক্তির দাবিতে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও এতদিন কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যায়নি বিএনপি। সম্প্রতি দলের ভেতরে ও বাইরে থেকে কঠোর কর্মসূচির দাবি উঠছে।