admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ২ মার্চ, ২০২০ ১১:০২ পূর্বাহ্ণ
গত রোব’বার বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশো’ধনী আইনের (সি’এ’এ) বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে সং’ঘর্ষ শুরু হয়। তার’পর থেকেই টানা কয়েক দিন ধরে সহিংসতা’য় উত্তাল হয়ে উঠেছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন স্থান। বিক্ষোভ-সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও দুই শতাধিক মানুষ। দিল্লিতে কমপক্ষে তিনটি মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে বহু বাড়ি-ঘর এবং দোকান-পাটেও হামলা ও আগু’ন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে, দিল্লির সহিংসতায় দুর্বৃত্তদের সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে পুলিশে’র বিরুদ্ধে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সহিংসতা বন্ধের চেষ্টা না করে উন্মত্ত জনতার সঙ্গে যোগ দিয়ে জয় শ্রী রাম বলে স্লোগান দিচ্ছিল পুলিশ। একই সঙ্গে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছে তারা।
গত কয়েকদিন ধরে এই দাঙ্গা পরিস্থিতি চললেও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অবশেষে বুধবার তিনি এ বিষয়ে বিবৃতিতে দিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান তিনি। লোকজনকে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার আহ্বান জানান প্রধান মন্ত্রী মোদি। মোদির রাজনৈতিক জীবনে এনিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটল। এর আগে ২০০২ সালে মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সে সময় তিনদিন ধরে দাঙ্গা পরিস্থিতিতে এক হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। নিহতদের অধিকাংশই ছিল মুসলিম। কিন্তু আদালত থেকে নিয়োগকৃত একটি প্যানেল সহিংসতা’য় সম্পৃক্ততার অভিযোগ থেকে মোদিকে নিস্তার দিয়েছিল।
গত বছ’রের ডিসেম্বরে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধ’নী বিল পাস করে মোদি সর’কার। তারপর থেকেই এ নিয়ে আলো’চনা-সমালোচনা শুরু হয়। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাসের পর থেকেই মুসলিমদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। সমালোচকদের দাবি, এই আইন ভারতের সংবিধান বিরোধী। এই আইনে’র কারণে মুসলিমরা আতঙ্কে আছেন যে, মোদির ভারতে তাদের হয়তো দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেওয়া হবে। দিল্লি’র হিংসা কেন্দ্রীয় সরকা’রের মদতপুষ্ট, স্পষ্ট অভিযোগ ওয়েইসির দিল্লিজুড়ে লাগাতার জ্বলতে থাকা হিংসার আগুন নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন এআইএমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়েইসি। তাঁর স্পষ্ট দাবি, দিল্লি’র হিংসা রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট। পরোক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাকেই এখানে কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। ওয়েইসি বলেছেন, যদি বিজেপির এক প্রাক্তন বিধায়ক এলাকার ডিসিপিকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলে যে সে অনুমতি পেয়েছে, তখন সরকার কেন শক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না তাঁর বিরুদ্ধে? নাম না করে এখানে বিজেপির কপিল মিশ্রকে’ই নিশানায় নিয়েছেন ওয়েইসি। তিনি বলেছে’ন, সরকারের কাছে যদি আগে থেকেই তথ্য ছিল যে ট্রাম্পের সফর চলাকালীন হিংসা ছড়াতে পারে, তাহলে সরকার কেন তদন্ত করেনি বা পদক্ষেপ নেয়নি। একে কোনও ভাবেই সাম্প্রদায়িক হিংসা বলতে নারাজ ওয়েইসি। তিনি বলেছেন, এটা সরকার সমর্থিত হিংসা। ওয়েইসি’র অভিযোগ, দিল্লি পুলিশ বিনা কারণে ভারতীয়দের সম্মানহানী করছে এবং তাদের অপমা’নও করছে। এখন দোষারোপ না করে হিংসা’র তদন্ত করার সময়। প্রস’ঙ্গত, দিল্লি হিংসা’য় এখনও পর্যন্ত এক কনস্টেবল সহ ৭ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশকর্মী বাদে বাকি সকলেই সাধারণ নাগরিক। যার মাঝে একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। সেটা শেয়ার করে ওয়েইসি লিখেছেন, অমিত শাহ আপনার পুলিশ ভারতীয়দের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। কোনও কারণ ছাড়াই নিচু করে দেখানো হচ্ছে। এখনই তদন্ত করুন। এই পুলিশ কর্মীদের কড়া সাজা পাওয়া উচিত। দিল্লিতে মসজিদে ঢুকে নামাজরত অবস্থায় ইমামকে গুলি, পোড়ানো হলো স্কুল-মাদ্রাসা দিল্লির মুস্তাফাবাদের ব্রিজপুরি এলাকায় মসজিদ থেকে শুরু করে মাদ্রাসা, স্কুল ও বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। মসজিদে ঢুকে নামাজরত মুসল্লিদের গুলি চালানো এবং রড দিয়ে বেধড়ক ভাবে পেটানোর ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া অগ্নি সংযোগ ও ভাংচুর চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন এলাকাবাসী।
সেখানকার অরুণ মডার্ন পাবলিক সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে ভাংচুর চালানো হয়েছে। ওই স্কুলের শিক্ষক কাসিম জাহিদ বলেন, মঙ্গলবার বিকেল ৪টার পর স্কুলে একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালায়। হামলা চালিয়ে স্কুলের আসবাবপত্র এবং কম্পিউটার ভেঙে ফেলা হয়েছে। এছাড়া পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে কয়েকটি গাড়ি। জানা গেছে, ওই স্কুলে সাত শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। স্কুলটির পেছনেই রয়েছে মসজিদ। বিকেলে স্কুলে হামলা চালানোর পর সন্ধ্যার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তার পরেও সংঘর্ষ থামেনি। বেশ কয়েক’টি ভবনে ভাংচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। এরপর এশার নামাজের আজান হয়। রাত ৮টায় পাশের মসজিদে নামাজ শুরু হলে সেখানে ঢুকে রড দিয়ে মুসল্লিদের পেটাতে শুরু করে দুর্বৃত্ত’রা। সেই সঙ্গে গুলি চালিয়ে দেয় মুসল্লিদের। ১২ থেকে ১৫ জন মুসল্লিদের পেটানো হয় এবং ইমামকেও গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ইমাম এখন হাসপাতালে চিকিৎসা নি’চ্ছেন। এদিকে ওই মসজি’দ আর স্কুলের পাশে থাকা একটি মাদ্রাসায় অগ্নি সংযোগ করা হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকরা সেখানে পর্যবেক্ষণে যান। তারা দেখতে পান, মসজিদে ছোপ ছোপ হয়ে রক্ত পড়ে আছে। পবিত্র কুরআন শ’রিফ পোড়া অবস্থায় মেঝেতে পড়ে ছিল।