admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ২:০১ অপরাহ্ণ
মুক্ত কলম আন্তর্জাতিক নিউজ ডেক্সঃ পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বলছে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় অন্তত ৮০ জন নিহত হবার পর সেখানকার বিবদমান গোষ্ঠীগুলো সাত দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। সেখানকার কর্তৃপক্ষই এ আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছে। এ সহিংসতার প্রতিবাদে লাহোরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদ মিছিলের খবর পাওয়া গেছে। আফগান সীমান্তের কাছে উপজাতীয় জেলা কুররামে তিন দিনের এ সহিংসতায় আহত হয়েছে আরও অন্তত ১৫৬ জন।
সহিংসতার সূচনা হয়েছিলো গত বৃহস্পতিবার। শিয়া মুসলিমদের একটি গাড়ী বহরে একজন বন্দুকধারীর হামলার পর সহিংসতা শুরু হয়। এতে অন্তত ৪০ জন নিহত হবার পর শুরু হয় প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা।বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপির খবর অনুযায়ী রবিবারের মধ্যস্থতার পর সরকারি মুখপাত্র মুহাম্মদ আলী সাইফ বলেছেন শিয়া ও সুন্নি উভয় সম্প্রদায়ের নেতারা সহিংসতা বন্ধ করতে একমত হয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা এএফপিকে বলেছেন: সংঘর্ষ ও গাড়ী বহরে হামলার ঘটনায় ২১শে নভেম্বর থেকে তিন দিনেই মারা গেছে ৮২ জন ও আহত হয়েছে ১৫৬ জন। নিজের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে তিনি বলেছেন নিহতদের মধ্যে ১৬ জন সুন্নি সম্প্রদায়ের। বাকীরা শিয়া মুসলিম।
আবার বৃহস্পতিবার গাড়ী বহরে হামলার যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে নারী ও শিশুও ছিলো। এর আগে একজন প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তা জাভেদ উল্লাহ মেহসুদ এএফপিকে বলেছেন প্রায় দশ জনের মতো হামলাকারী গাড়ী বহরে হামলায় জড়িত ছিলেন। তারা ‘রাস্তার উভয় দিক থেকে নির্বিচারে গুলি করেছে’। যাত্রীদের বেশিরভাগ শিয়া অধ্যুষিত অঞ্চলের পার্বত্য এলাকার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলো বলেও জানিয়েছেন তিনি। গাড়ী বহরটি যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো সেটি নতুন করে চালু করা হয়েছে যেখানে পুলিশের সহায়তা নিয়ে এখনো সীমিত সংখ্যক গাড়ী চলাচল করে।
পাকিস্তানের খুবই প্রত্যন্ত অঞ্চলে বৃহস্পতিবার বন্দুকধারীরা যখন হামলা শুরু করে তখন ওই গাড়ী বহরে অন্তত দুশোর মতো যাত্রী ছিলো। সেখানকার একটি গাড়ীতে থাকা যাত্রী সাঈদা বানু বলেছেন যে তার মনে হচ্ছিলো যে তিনি মারা যাবেন। তিনি তার সন্তানদের নিয়ে গাড়ীর নীচে লুকিয়ে ছিলেন। এরপর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে শুক্র ও শনিবার ওই এলাকার অধিবাসীদের অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যান।
সুন্নি অধ্যুষিত একটি গ্রামের একজন অধিবাসী জানান যে তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। আমরা রাতভর গুলির শব্দ শুনেছি। আমি আমাদের পরিবারের নারী ও শিশুদের পাহাড়ের ভেতরে লুকিয়ে রেখেছি,” বলছিলেন তিনি। আপনি দেখছেন যে এখন কেমন শীত পড়েছে। কিন্তু এ ছাড়া আর কোন বিকল্প ছিলো না। এখানকার বাকী সবাইও তাই করেছে, পরিবারের সদস্যদের পাহাড়ের ভেতরে পাঠিয়ে দেয়ার প্রসঙ্গে বলছিলেন ওই ব্যক্তি। গত কয়েকমাসে ওই এলাকায় হামলা ও পাল্টা হামলার আরও ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় কয়েক ডজন লোক মারাও গেছে। সে কারণে স্থানীয় ট্রাইবাল কাউন্সিল যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়ে আসছিলো উভয় সম্প্রদায়ের কাছে। পেশোয়ারের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা এএফপিকে বলেছেন মধ্যস্থতাকারীদের হেলিকপ্টার ওই অঞ্চলে যাওয়ার পর সেই হেলিকপ্টার লক্ষ্য করেও গুলি করা হয়েছে।
ওই অঞ্চলে প্রায়ই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে এসব সহিংসতা বেশী হয়ে থাকে। তবে কুররাম এলাকাটির সাথে আফগানিস্তানের কয়েকটি প্রদেশের সীমান্ত আছে। আফগানিস্তানেরও ওই এলাকাটিতে শিয়া বিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীর অবস্থান আছে।