admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ২:৪২ অপরাহ্ণ
নিজের কষ্টার্জিত অর্থ সবাই নিরাপদে রাখতে চায় বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহে ডাকঘরে সঞ্চয়ের ওপর সরকারের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তের পর সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে কোনটি বেশি মুনাফা আনবে কিংবা কোন খাতে লাভ কমে যাবে না, সে নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। যদিও ১৯শে ফেব্রুয়ারি সরকার ঐ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখন কোন কোন মাধ্যমে সঞ্চয় করতে পারেন একজন নাগরিক? আর উপার্জন আছে এমন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের আয়ের ঠিক শতাংশ সঞ্চয় করা উচিত।
আয়ের কতটা সঞ্চয় করা উচিত?
সাধারণত একজন মানুষের আয়ের কত শতাংশ সঞ্চয় করা উচিত তা নির্ভর করে, তার আয় এবং অবশ্যম্ভাবী ব্যয়ের ওপর। অর্থনীতির সাধারণ হিসাব হচ্ছে একজন মানুষের আয়ের এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ ২০-২৫ শতাংশ অর্থ যদি কেউ নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যাস করতে পারেন, তাহলে অবসর পরবর্তী জীবনে অভাবের মধ্যে পড়তে হবে না।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, সমাজের প্রচলিত প্যাটার্ন হচ্ছে মধ্য আয়ের মানুষেরা বেশি সঞ্চয় করেন। এবং সম্পূর্ণ বিপরীত কারণে নিম্ন ও উচ্চ আয়ের মানুষের সঞ্চয় তুলনামূলক কম হয়। উচ্চ আয়ের মানুষের খরচ ও বিনিয়োগের হার বেশি বলে সঞ্চয় কম, আর, নিম্ন আয়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারণই একটা চ্যালেঞ্জ। তিনি বলছেন, ব্যক্তির সঞ্চয়ের হার নির্ভর করে মানুষের আয়-ব্যয়ের ওঠানামার ওপর, ফলে বিশেষ কোন খাতের প্রদেয় যোগসুবিধার ওপর হুট করে মানুষ সিদ্ধান্ত কম নেয়।
কোন কোন মাধ্যমে সঞ্চয় করা যায় বাংলাদেশে?
যেসব মাধ্যমে বাংলাদেশে একজন নাগরিক সঞ্চয় করতে পারেন তার মধ্যে ব্যাংক, সরকারি বন্ড, পুঁজি বাজার, মিউচুয়্যাল ফান্ড, স্বর্ণর, জমি এবং অ্যাপার্টমেন্ট বহুল প্রচলিত। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, এখনো যেসব সঞ্চয় মাধ্যমে সরকার নিজে কাজ করছে, সেসব খাতে মানুষের আস্থা সবচেয়ে বেশি। এজন্য ব্যাংকের পাশাপাশি মানুষ সঞ্চয়পত্র এবং জমি কেনে ভবিষ্যতের নির্ভরতা হিসেবে।
ব্যাংকঃ
বাংলাদেশে সঞ্চয়ের জন্য সবচেয়ে প্রচলিত হচ্ছে ব্যাংক ব্যবস্থা। এর পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ব্যাংকের নেটওয়ার্ক রয়েছে, এবং গত এক দশকে বাংলাদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। ব্যাংকে কয়েক রকম সঞ্চয় স্কিম আছে। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ডিপোজিট পেনশন স্কিম বা ডিপিএস, ফিক্সড ডিপোজিট বা এফডিআরের মাধ্যমে টাকা জমা রাখতে পারেন। এর বাইরে সঞ্চয়ী হিসাবে টাকা রাখলেও পেতে পারেন একটি নির্দিষ্ট মুনাফা। কোন কোন ব্যাংকে পাঁচ বা ছয় বছরের ব্যবধানে আমানত দ্বিগুণ হওয়ার অর্থাৎ ডাবল রিটার্ন স্কিম চালু আছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে গত ৪৮ বছরে কোন ব্যাংক দেউলিয়া ঘোষণা হয়নি, এটা ব্যাংকের ওপর মানুষের ভরসার বড় কারণ। যদিও বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে কয়েকটি ব্যাংক আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে,তবে যখনি কিছু ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হয়েছে সরকার অর্থ সহায়তা দিয়ে সেগুলোকে ‘বেইলআউট’ করার চেষ্টা করেছে। তিনি জানিয়েছেন, এই মূহুর্তে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডিপিএসে গড়ে আট থেকে নয় শতাংশ সুদ দিয়ে থাকে।
এফডিআর এবং ডাবল রিটার্ন স্কিমের ওপর গড়ে ব্যাংক ভেদে ছয় থেকে সাড়ে ছয় শতাংশ সুদ প্রদান করা হয়। দুয়েকটি ব্যাংক একটু বেশি দিলেও এটাই গড় হিসাব। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহককে প্রদেয় সুদের হার কমিয়ে দিয়েছে। যদিও একে ঝুঁকি মনে করেন না বিশ্লেষকেরা। কিন্তু সুদের হার কমে যাওয়া, মূল্যস্ফীতি এবং অন্যান্য কর পরিশোধের পর সঞ্চয়ের ওপর কতটা লাভ থাকে সে প্রশ্ন রয়েছে। ধরা যাক, একজন ব্যক্তি ১০০ টাকা এফডিআর করেছেন, মেয়াদ পূর্তির পর তার ১০৬ টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু পাঁচ বছর পর যে মুনাফাসহ যে অর্থ তিনি পাবেন, মূল্যস্ফীতির কারণে সে অর্থের মূল্য প্রত্যাশিত অবস্থায় নাও থাকতে পারে। ব্যাংক বন্ধ হলে জমা টাকা ফেরত পাওয়া যাবে?
সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য সরকারি বন্ডঃ
বাংলাদেশে আরেকটি জনপ্রিয় সঞ্চয় মাধ্যম হচ্ছে সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড ও অন্যান্য সরকারি বন্ড। জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ তফসিলি ব্যাংকসমূহ এবং ডাকঘর থেকে সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য বন্ড কেনা এবং মেয়াদ শেষে ভাঙ্গানো যায়। চার ধরণের সঞ্চয়পত্র পাওয়া যায় বাজারে পরিবার সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র এবং তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র। মেয়াদান্তে সঞ্চয়পত্রের ওপর এখন ১১ শতাংশ থেকে ১১.৭৬ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা পাওয়া যায়। বিশ্লেষকেরা মনে করেন ব্যাংকে সঞ্চয়ের ওপর সুদের হার কমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুকেছে।