admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর, ২০২০ ১২:২৬ অপরাহ্ণ
মোঃ হারুন-অর-রশিদ বাবু, ষ্টাফ রিপোর্টার রংপুর ব্যুরো অফিস রংপুরঃ রংপুর মহানগরীর ২৯নং ওয়ার্ডের ধুম খাটিয়া পাড়ার বাসিন্দা রিপন চন্দ্র মহন্ত বয়স ২৩ থেকে ২৪ পেশায় একজন মালাকর, হিন্দু ধর্মীয় প্রতিমা তৈরীর কাজ করেন। তার বাবা অনিল চন্দ্র মহন্ত তিনিও এই প্রতিমা তৈরীর কাজ করেন। তার প্রয়াত দাদাও ছিলেন একজন মালাকর। রিপন বলেন শুধু দুর্গাপূজা এলেই আমরা সামান্য কিছু আয় করি, এ সময়টাই একটু হাসিখুশী আর আনন্দে কাটে । বাকি পুজাতে তেমন একটা প্রতিমা তৈরীর কাজ থাকেনা,টুকিটাকি যা হয় সেটা আসলে পেট চালানোর জন্য যথেষ্ট নয়। আমরা যারা মুলত প্রতিমা তৈরির কাজ করা ছাড়া আর কোন কর্ম জানিনা, তাদের জন্য বিশেষ করে দুর্গাপূজার সময় ছাড়া বাকি সময়গুলো অনাহার অর্ধাহারেই কাটাতে হয়। আমরা ইচ্ছে থাকলেও নিজের সন্তানকে ভালো খাওয়াতে পারিনা, ভালো স্কুলে পড়াতে পারিনা!
এই দুর্গাপূজা এলেই বৌ বাচ্চা আশায় থাকে নতুন কাপড় পাবে,ভালো খাবার পাবে!! কিন্তূ সেটা দেয়ার তেমন সাধ্য নেই আমার।যা কাজ করছি বিল তুলে মানুষের টাকা পরিশোধ করতে হবে, পাশাপাশি দিতে হবে কিছু টাকার সুদও। অভাবের তাড়নায় বৃদ্ধ বাবা মায়ের তেমন খোঁজখবরও নিতে পারিনা, যদিও এক বাড়িতেই থাকি। আমার বাবা একজন বৃদ্ধ মানুষ তার অনেক বয়স হয়েছে, কিন্তূ পেটের তাগিদে এখনো তাকে বিভিন্ন যায়গায় দৌড়াতে হয় নিজের রুটিরুজির জন্য। ছোটবেলা থেকেই আমার বাবার কষ্ট দেখে, ভিষণ ইচ্ছে ছিল আমি লেখাপড়া করে বড় হয়ে বাবার কষ্ট লাঘব করবো, কিন্তূ দুঃখজনক হলেও সত্য লেখাপড়া করা হয়নি আমার, সপ্তাহে একদিন স্কুলে গেলে বাকি সময় ছুটতে হয়েছে বাবার পিছে জীবিকা অন্বেষনের তাগিদে। আজকে আমার সন্তান আছে কিন্তূ আমি জানিনা, তাকে কি ভালো কোন স্কুলে পড়াতে পারবো কি না, নাকি আমার মতো তাকেও স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে আমার পিছে ঘুরতে হবে।
রিপন বলেন শুধু আমি’ই নই আমার মতো আরও যত মালাকর আছে,তাদের প্রায় সবার একই অবস্থা। বিশেষ করে যাদের অনেক অর্থবিত্ত আছে তাদের হিসাব ভিন্ন, তারা নিজের টাকা খরচ করে প্রতিমা তৈরী করে রাখে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে। আপনি কেন করছেন না? জানতে চাইলে মুক্ত কলম-কে জানান আমার যা আয় হয় তাদিয়ে আমার নিজের সংসার’ই ভালোমতো চলেনা। কিভাবে আমি প্রতিমা তৈরী করে রাখবো? আমরা এমন একটি কাজ করি যে, কাজের কথা শুনলে কোন এনজিও ওয়ালারাও আমাদের সামান্য টাকা ঋণ দিতে চায়না। তারা বলে আপনার ভালো কোন ব্যবসা থাকলে সেটা বলেন, বাড়িতে গড়ু ছাগল আছে কিনা, বাড়ি পাকা নাকি কাঁচা? আরও নানান প্রশ্নের উত্তর জানতে চায়, এছাড়া ওনারা নাকি লোন দিতে পারবে না।
যদিও অনেক গুণীজনকে বলতে শুনেছি প্রতিমা তৈরী একটা শিল্প,আমি সেই শৈশব থেকে শুধু শুনেই আসলাম, আসলে শিল্পটা কি বা এর সুবিধা কি সেটা জানলাম না আজও। মালাকর রিপন চন্দ্র মহন্ত মুক্ত কলম-কে বলেন সরকারীভাবে যদি আমাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে, পাশাপাশি মাসিক কিস্তিতে আমাদেরকে সামান্য কিছু ঋণ দেয়, তাহলে আমরা আরও ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারবো। বাঁচতে পারবো সমাজে মাথা উঁচু করে। সুশিক্ষা দিতে পারবো আমাদের সন্তানদের।