admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ২:১২ অপরাহ্ণ
হুমায়ুন কবির রেজা,ষ্টাফ রিপোর্টার: নিজের পদবী কেবল গাড়ির ড্রাইভার। কিন্তু বিচারকের গাড়ি চালান বলে ধরাকে সরাজ্ঞান করেন নিজেকে। নিয়োগ পরীক্ষায় বিশেষ সুবিধা ভোগ, যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন ও আদালত চত্বরে দোকান ঘর লিজসহ অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ ওঠেছে তার বিরুদ্ধে। মুক্ত কলম নিউজ অভিযুক্ত ব্যক্তি ঠাকুরগাঁও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকের ড্রাইভার (গাড়ি চালক) মোকসেদুল রহমান। আদালতের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা তার দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের শাস্তি চেয়ে বিচার বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
তবে সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে উড়িয়ে দেয় ড্রাইভার মোকসেদুল। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে ২০১৯ সালে নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও উৎকোচের বিনিময়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চাকরি নেন মোকসেদুল। যোগদানের পর সদ্য বিদায়ী বিচারক গাজী দেলোয়ার হোসেনের নাম ভাঙিয়ে আদালত চত্বরের ব্যবসায়ীদের থেকে অর্থ আদায় করে যাচ্ছে। এছাড়া এক ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে বাজার করে নিয়ে সদ্য বিদায়ী বিচারককে উপহার দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আরও জানা গেছে, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদাধিকার বলে কর্মচারীদের পদোন্নতি সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি হওয়ায় ড্রাইভার মোকসেদুল কর্মচারীদের কাছ থেকে উৎকোচ নেন।
পরবর্তীতে উক্ত বিচারকের কাছে সুপারিশের মাধ্যমে পদোন্নতি পাইয়ে দেন বলেও জানা যায়। এভাবে বিচারকের নাম ভাঙিয়ে অবৈধ সুবিধার মাধ্যমে যোগদানের মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় দৃষ্টিনন্দন বাড়িসহ কয়েক বিঘা জমির মালিক বনে গেছে। লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালতের ড্রাইভার মোকসেদুল বিচারকের নাম ভাঙিয়ে আদালত চত্বরে তার বাবা নূর মোহাম্মদের নামে ফলের দোকানের বরাদ্দ নেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেটি কম্পিউটারের দোকান হিসেবে ব্যবহার করেন। আর ভগ্নিপতির নামে একটি দোকান ঘর ও তার নিকটতম আত্মীয়ের নামে জজ কোর্ট ক্যান্ট্রিন লিজ নেয়। এছাড়া দীর্ঘদিন জেলা জজ অনুপস্থিত বিচারক গাজী দেলোয়ার হোসেন দায়িত্বে থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে আদালত চত্বরে অস্থায়ী ভাবে বেশ কয়েকটি দোকান ঘর গড়ে তোলার অনুমতি দেন মোকসেদুল। তার একক প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর ধরে লিজ নেয়া ব্যক্তিদের বরাদ্দ বাতিল করে স্বজনদের নামে করে নেন।মুক্ত কলম নিউজ আর বরাদ্দ বাতিলকৃতরা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, দীর্ঘ দিন ধরে আদালত চত্বরে দোকান ঘর লিজ নিয়ে ব্যবসা করে আসলেও কেউ কোনো কিছু বলেনি। কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের লিজ বাতিল হয়ে যায়। ড্রাইভার মোকসেদুল জজ সাহেবকে ভুল বুঝিয়ে লিজ নেয়া দোকান ঘরের বরাদ্দ বাতিল করেছে। আমাদের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে। আরও জানা গেছে, আদালতে চাকুরি নেওয়ার পর থেকেই যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন করতেন মোকসেদুল। যৌতুক না দিয়ে পরকিয়ায় বাধা দেওয়ায় স্ত্রী আফরোজা বেগমের ওপর চলতো নিয়মিত নির্যাতন। এমনকি স্ত্রীর মতের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটায় বলেও অভিযোগ ওঠে।
নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকলে নিরুপায় হয়ে তার স্ত্রী বাবার বাড়ি থেকে ৭ লাখ টাকা এনে দিলেও থামেনি নির্যাতন। মোকসেদুলের দাবি, সে জজ সাহেবের ড্রাইভার হওয়ায় যৌতুক লাগবে ২০ লাখ। পরে মারধর করে স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বেরও করে দেয়। এসবের প্রতিবাদ করায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের প্রভাব খাটিয়ে স্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের বিচারকের এজলাস কক্ষে ডেকে জোরপূর্বক স্ত্রীকে তালাক দেয়। স্বামীর বিচার চেয়ে থানা-পুলিশের দারস্ত হয়েও পাননি বিচার। পরে কোনো উপায় না পেয়ে যৌতুক ও পরকিয়ায় বাধা দেওয়ার কারণে স্ত্রীকে নির্যাতন, পুলিশ মামলা না নেওয়ার অভিযোগ ও স্বামী মোকসেদুল রহমানের বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন তার স্ত্রীর পরিবার। অভিযোগকারীরা জানান, বর্তমানে ঠাকুরগাঁও বিচারাঙ্গণে যেন একটি ত্রাসের নাম ড্রাইভার মোকসেদুল রহমান।
এমন কোনো অপরাধ নেই, যেটা সে করে না। অন্যায়ভাবে কয়েকজন দোকানিকে বের করে দেওয়া হয়েছে। নিজের পরিবারের নামে দোকান বরাদ্দ নিয়েছে। ক্যান্টিনের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া প্রায় দেড় লাখ টাকা। সেটা আদালতের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। এতকিছুর পরেও কীভাবে সে স্বপদে বহাল থাকে? তার করা সব অপরাধ কি মাফ ?মুক্ত কলম নিউজ যেখানে কোনো কর্মচারী তাদের সারাজীবন চাকুরি করে একটি দোকানও বরাদ্দ নিতে পারেননি। সেখানে ড্রাইভার মোকসেদ পাঁচ বছরের চাকুরি জীবনে তার পরিবারের তিনজন সদস্যের নামে তিনটি দোকান বরাদ্দ পেয়ে গেল। অনুসন্ধান করলে পাঁচ বছরে সে কী কী করেছে – তা বেরিয়ে আসবে। মুক্ত কলম নিউজ
অভিযোগ প্রসঙ্গে ড্রাইভার মোকসেদুল রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার নামে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে, তা মিথ্যা-বানোয়াট ও ভিত্তিহিন। একটি চক্র তার বিরুদ্ধে লেগেছে বলে জানান তিনি। এবিষয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানান, মুক্ত কলম নিউজ এই আদালতে নতুন যোগদান করায় সেভাবে কিছুই বলতে পারছি না। তবে ড্রাইভার মোকসেদুল রহমানের বিষয়ে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। এব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিঞার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠো ফোনে রিসিভ করেননি।