admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর, ২০২১ ৭:৪৪ অপরাহ্ণ
আব্দুল কুদ্দুস রয়েল, স্টাফ রিপোর্টারঃ ঠাকুরগাঁও’য়ে ২১ ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সুষ্ঠুভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবীতে ২২ ডিসেম্বর ২০২১ বেলা ১১ টায় ঠাকুরগাঁও চৌরাস্তায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট ইন্দ্রনাথ রায় এর সভাপতিত্বে সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু মহী উদ্দীনের সঞ্চলনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, মুক্ত কলমের প্রকাশক ও সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার হাসিনুর রহমান, এস এ টিভির ঠাকুরগাঁ জেলা প্রতিনিধি প্রেস ক্লাবের সহ সভাপতি জাকির মোস্তাফিজ মিলু , শ্রমিক লীগ ও পরিবহন নেতা নজরুল ইসলাম , বিশিষ্ট কলাম লেখক ও সাহিত্যিক মাসুদ আহমেদ সুবর্ণ, উপজেলা শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপÍ সভাপতি দলিলুর রহমান, শিক্ষক নেতা রমজান আলী , শিক্ষক নেতা ও সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ , শিক্ষকদের কেন্দ্রীয় সংগঠনের নেতা রেজাউল করিম লিটন , প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট আবু তোরাব মানিক, সময় টিভির জেলা প্রতিনিধি জিয়াউর রহমান বকুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা সংকর কুমার দে ধারা,বিশিষ্ট রাজনীতিবীদ অ্যাডভোকেট ইমরান হোসেন চৌধুরী, মুক্ত কলমের স্টাফ রিপোর্টার রয়েল, মুন্নি, লামিয়া প্রমুখ।
আগামী ২৬ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার ২০ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঠাকুরগাঁও জেলার অন্য ৪ টি ইউনিয়নে ইতোমধ্যে নির্বাচন শেষ হয়েছে। সেই সব নির্বাচনে সহিংসতা হয়েছে এমনকি ৩ জন সাধারণ মানুষের প্রান হানি ঘটেছে । আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সহিংসতার আলামত দেখা যাচ্ছে। চিলারং ইউনিয়নে ৪০ টি রাম দা উদ্ধার করা হয়েছে। রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়নে সন্ত্রাসি হামলা করে প্রতিপক্ষের নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করা হয়েছে। সেখানে পাল্টপাল্টি সংবাদ সন্মেলন চলছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে হুমকী ধামকি চলছে। ইতোমধ্যে সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে পত্রের মাধ্যমে এসব বিষয়ে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

জানা যায় গত ২১ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক নির্বাচনে অংশগ্রহনকারীদের সাথে এক মত বিনিময় সভা করেছেন। সভায় সরকারের নির্দেশনা , নির্বাচন কমিশারের নির্দেশনা অবহিত করেছেন এবং সকলকে নির্বাচনী বিধি বিধান মেনে চলার আহবান জানিয়েছেন। নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করলে , নির্বাচনে কোন পক্ষের তরফ থেকে নির্বাচনী আইন ভঙ্গ , বা সহিংসতার আশ্রয় নিলে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সতর্ক করে দেন। বক্তারা বলেন , স্থানীয় সরকারে নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হওয়ার উৎসব শুরু হয়েছে। পাঁচ-ছয় বছর আগেও স্থানীয় সরকারের এই এই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হওয়া ছিল প্রায় অকল্পনীয়। এখন তা সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী সংকট শুরু হয়েছে দুটি কারণে। প্রথমত, দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় সরকারি দলের প্রার্থীর বাইরে কারোর নির্বাচন করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয়ত, এ পদ্ধতির ফলে এলাকার নির্দলীয়, সৎ, সুশিক্ষিত সমাজসেবীরা নির্বাচন করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। কারণ দলীয় ভিত্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পেশিশক্তির দিক থেকে যারা সবল তারাই কেবল নির্বাচনে দাঁড়ানোর কথা ভাবছেন।

ঠাকুরগাঁও চৌরাস্তায় অধিকার সুরক্ষা পরিষদের মানববন্ধন।
পরিণতিতে দেখা দিচ্ছে প্রার্থী সংকট। পাঁচ ধাপে ৩ হাজার ৭৪৪ ইউনিয়ন পরিষদে ইতিমধ্যে ১ হাজার ৫৫৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান-মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম ধাপে ১৪১, দ্বিতীয় ধাপে ৩৫৭, তৃতীয় ধাপে ৫৬৯, চতুর্থ ধাপে ২৯৫ আর পঞ্চম ধাপে ১৯৩ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে তাদের ‘অসামান্য’ জনপ্রিয়তার প্রমাণ রেখেছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ৩৫৩, সংরক্ষিত সদস্য ৩৫৫ ও সাধারণ সদস্য ৮৪৭ জন রয়েছেন। শ্মরণ করা যেতে পারে , প্রথম ধাপে ৩৬৫, দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৩ আর তৃতীয় ধাপে ৯৯২ ইউপিতে ভোট হয়েছে। এ ছাড়া ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে ৮৪০ এবং পঞ্চম ধাপে ৭১৪ ইউপিতে ৫ জানুয়ারি ভোট হওয়ার কথা। বিশেষজ্ঞদের মতে কারসাজি ও প্রভাব খাটিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন প্রার্থীরা। তারা জনপ্রতিনিধি হতে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ শুধু নয়, প্রতিদ্বন্দ্বীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে বাধ্য করছেন। আবার অনেক সময় প্রতিদ্বন্দ্বীকে টাকা দিয়েও নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দেশের রাজনীতি অধঃপতিত অবস্থার শিকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিপুলসংখ্যক প্রার্থীর মহাবিজয় তারই প্রমাণ। সুষ্ঠু পরিবেশ থাকলে এদের অনেকে নিজেদের জামানত বজায় রাখতে পারতেন কি না তা একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। বক্তারা আরো বলেন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইলেকশন কমিশন থেকে অসংখ্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনকে রাষ্ট্রপতি জনবলসহ সকল ক্ষমতা দিয়েছেন। তারপরেও নির্বাচনে গুরুতর অনিয়ম ঘটেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনন কোন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে পড়েনা। সরকারের তরফ থেকে মাঝে মাঝে নির্দেশনা জারী করে মাঠ পর্যায়ে সেই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু নির্দেশনা না মানার কারণে প্রানহানি ঘটেছে। বক্তারা আশা প্রকাশ করেন আগামী ২৬ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ইউনিয়ন সমুহে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে , সহিংসতা এবং প্রাণহানি ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় অংশগ্রহণকারীরা গলায় ঝোলানো ফেষ্টুনে ‘ জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন চাই ’ ‘সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন চাই’ ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়নের আহবান জানাই, নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করুন, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাগণ সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রাখুন , নির্বাচনী প্রচারে সংযত হোন , নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসরণ করুন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সরকারের গ্রহণযোগ্যতা প্রমান করে, তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের পছন্দের প্রার্থী মনোনীত করুন ’ এসব দাবী তুলে ধরেন। সভাপতি এবং সম্পাদক তাদের বক্তব্যে বলেন নির্বাচনী এসব দাবী শুধুমাত্র ইউপি নির্বাচনের জন্যই নয়, সকল নির্বচনের জন্যই প্রযোজ্য। এ ছাড়াও এই সংগঠণের মাধ্যমে আগামীতে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, পৌরসুবিধা, নাগরিক দুর্ভোগ, নাগরিক সমস্যা ও সম্ভাবনা, বাজার ব্যবস্থাপনা ,সড়ক নিরাপত্তা সহ সকল নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় কাজ করবে।