admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ১৯ মার্চ, ২০২০ ১২:৫৬ অপরাহ্ণ
ফিরোজ সুলতান,ঠাকুরগাঁও: প্রতিবছর বোরো মৌসুম এলেই সেচ নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তা করতে হতো কৃষককে। বিদ্যুৎ-সংকট, লোডশেডিং, লো ভোল্টেজ ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাঁরা কখনোই নিরবচ্ছিন্ন সেচসুবিধা পাননি। সেচ নিয়ে দুশ্চিন্তা আর ভোগান্তি প্রায় ‘নিয়তিতে’ পরিণত হয়েছিল।কৃষককে যখন জানানো হলো সেচের জন্য বিদ্যুৎ আর ডিজেলের পেছনে ছুটতে হবে না। তখন অনেকেরই তা ‘বিশ্বাস’ হয়নি। জমিতে সেচ দেওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়! বিস্ময়ের ঘোর কাটার আগেই তাঁরা দেখল সূর্যের আলো থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ থেকেই জমিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে। লোডশেডিং কিংবা লো ভোল্টেজের কারণে পাম্প বন্ধ থাকার মতো ঘটনা আর ঘটছে না।সূর্যের আলোয় চলছে সেচপাম্প। এতে বদলে গেছে ঠাকুরগাঁও জেলা। খরা মৌসুমেও সেচের পানি নিয়ে ভাবনা নেই কৃষকের।এই অঞ্চলে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বারও খুলেছে ‘সৌর সেচ’।আর কৃষি বিভাগ বলছে সেচব্যবস্থা সুবিধাজনক হওয়ায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সবসময় এগিয়ে উত্তরের এ জেলা।ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র মতে,চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ৬২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৮ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে বোরো চারা লাগানো হয়েছে।জেলার কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার ভেলাজান ইউনিয়ন ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পারিয়া ইউনিয়নের চাষিরা সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সেচ দিয়ে মাঠের পর মাঠ বোরো আবাদের জন্য তৈরিতে ব্যস্ত। ভালো দাম পাওয়ার আশায় সময়মতো ধান উৎপাদনে কেউ সেচ দিচ্ছেন, কেউ আবার জমি চারা রোপণের উপযোগী করে তুলছেন।
ভেলাজান ইউনিয়নের মোলানী গ্রামের সোলায়মান আলী কৃষকের সেচব্যবস্থায় ভ্রাম্যমাণ সোলার প্যানেলের প্রথম উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। তিন বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে সোলারের মাধ্যমে মোটর দিয়ে প্রথমে নিজ জমিতে সেচব্যবস্থা চালু করেন। পরে স্থানীয় কৃষক তা দেখে উদ্বুদ্ধ হন। এরপর জেলার কৃষকের মাঝে তা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শুধু সোলায়মান আলীর কাছ থেকে ১৯টি সোলার প্যানেলের সেচ পাম্প কিনেছেন জেলার কৃষক। একসময় কৃষক স্যালো মেশিনের ওপর নির্ভর ছিলেন। অন্যদিকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় সেচসুবিধা থাকলেও হয়রানির শিকার হতো মানুষ। আর বিদ্যুৎ দিয়ে সেচসুবিধা নিতে হলেও খরা মৌসুমে শুরু হয় ঘন ঘন লোডশেডিং। সবকিছু বিশ্লেষণ করে কৃষক মনে করছেন সোলারে সেচব্যবস্থা সুবিধাজনক। তাই এটি এখন জনপ্রিয়। সদর উপজেলার মোলানী গ্রামের মজিবর রহমান, আইয়ুব আলী, মোকলেসুর রহমানসহ অনেক কৃষক জানান, আগে বোরো মৌসুমে সেচ নিয়ে কৃষককে বিপাকে পড়তে হতো। এখন ভ্রাম্যমাণ সোলারের সেচব্যবস্থায় অনেক সুবিধা পাচ্ছেন কৃষক। এতে লাভবান হচ্ছেন তারা। আগে একটি স্যালো ১৫-২০ হাজার টাকায় কিনে সেচ দিতে হতো। এতে তেল কেনা, মেশিন আনা-নেওয়া, চুরি ও নষ্ট হওয়ারও ভয় থাকত। এখন তা হচ্ছে না।
বর্তমানে ১ বিঘা জমিতে ভ্রাম্যমাণ সোলার প্যানেল দিয়ে ধান উৎপাদনে খরচ হচ্ছে মাত্র ২৫০০ টাকা। আর স্যালো দিয়ে সেচ দিতে খরচ হচ্ছে ৩-৪ হাজার টাকা। ভোগান্তি তো রয়েছেই। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আফতাব হোসেন বলেন জানান, ‘এখন সেচসুবিধা মানুষের হাতের নাগালে রয়েছে। সেচ নিয়ে আর ভোগান্তি নেই কৃষকের। জেলার পাঁচটি উপজেলায় সোলার পাম্পের মাধ্যমে সেচব্যবস্থা নিয়ে কৃষক এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। আশা করছি চলতি মৌসুমেও আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।’অনেক এলাকার কৃষকেরা জানান, যুগ যুগ ধরে জমিতে একটিমাত্র ফসল উৎপাদন করা হতো। আমন ফসল উঠে যাওয়ার পর সেচের অভাবে বছরের প্রায় সাত মাস জমি অলস পড়ে থাকত। এখন সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে বোরোর আবাদ করছেন তাঁরা। শীতকালীন শাকসবজির চাষও হচ্ছে।