admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ
ট্রাম্প ও মোদীর ভাষণ উপলক্ষ্যে স্টেডিয়ামের সামনের বস্তি আড়াল করতে দেয়াল, বাসিন্দাদের উচ্ছেদের নোটিশ ।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন সফরের আগে ভারতের আহমেদাবাদে যেভাবে গরিব বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা শুরু হয়েছে, শহরের অনেকেই তার তীব্র সমালোচনা করছেন। যে মোতেরা স্টেডিয়ামে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী মোদী একযোগে ভাষণ দেবেন বলে স্থির আছে, তার ঠিক সামনেই একটি বস্তির শ’দুয়েক বাসিন্দাকে উচ্ছেদের নোটিশ ধরানো হয়েছে। এর আগে শহরে রাস্তার ধারের মলিন ঝুপড়িগুলো উঁচু দেওয়াল তুলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চোখের আড়াল করারও চেষ্টা হয়েছে, সেখানেও বস্তিবাসীরা তাতে প্রবল ক্ষুব্ধ। এক কথায়, মি. ট্রাম্পের সফরের জন্য আহমেদাবাদ তার দারিদ্রের ছবি লুকোনোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের গুজরাটে পা রাখতে আর সপ্তাহখানেকও বাকি নেই, তার আগে যথারীতি সাজ সাজ রব পড়ে গেছে গোটা আহমেদাবাদ জুড়ে।

সাংবাদিকদের পুরসভার উচ্ছেদ নোটিশ দেখাচ্ছেন আহমেদাবাদের এক বস্তিবাসী
আহমেদাবাদে তৈরি বিশ্বের সবচাইতে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম মোতেরা স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করবেন ট্রাম্প ও মোদী। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম হতে যাচ্ছে এই শহরের মোতেরায়, সেখানেই আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি নমস্তে ট্রাম্প অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভ্যর্থনা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তার আগে ওই স্টেডিয়ামের কাছে একটি বস্তির গোটা পঞ্চাশেক পরিবারের দুশো লোককে উচ্ছেদের নোটিশ ধরিয়েছে আহমেদাবাদ পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভার ধরানো কাগজ দেখিয়ে ওই বস্তির বাসিন্দা রমা মেদা বলছিলেন, কর্পোরেশনের সাহেব এসে জোর করে এই কাগজ আমাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে গেছে সাত দিনের মধ্যে এই এলাকা খালি করতে হবে। কিন্তু আমরা যাবোটা কোথায়? আমরা থাকার জন্য তো আর বাংলো চাইছি না, চাইছি শুধু এক টুকরো জমি!

উচ্ছেদের নোটিশ তুলে ধরে দেখাচ্ছেন মোতেরার বস্তিবাসীরা
বস্তির প্রবীণ আরেক বাসিন্দা বলছিলেন, গত বিশ-পঁচিশ বছর ধরে এখানে থেকে মজদুরি করে খাচ্ছি। আজ হঠাৎ করে উঠে যাও বললে আমরা কোথায় যাব? আমাদের তাহলে অন্য কোথাও বসত করার জায়গা দিক। পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করছে, বস্তিবাসীরা ওই জমি জবরদখল করে রেখেছেন বলেই এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে গত কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে যে জমি তাদের হাতছাড়া হয়ে আছে, সেটা এখনই উচ্ছেদ করার কেন তাড়া সে প্রশ্নের সদুত্তর তাদের কাছেও নেই। এদিকে এর মাত্র কদিন আগেই শহরের শরনিয়াবাস বা দেবশরণ বস্তিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রুট থেকে আড়াল করার জন্য রাস্তার পাশে প্রায় সাড়ে চার ফুট উঁচু দেওয়াল তুলেছে আহমেদাবাদ কর্পোরেশন।
সেখানেও ক্ষুব্ধ বস্তিবাসীরা সাংবাদিকদের বলছিলেন, রাষ্ট্রপতি এই রাস্তা দিয়ে যাবেন বলে আমাদের গরিব লোকগুলোকে ঢেকে দিতে হবে কেন? দেয়াল তোলার বদলে অন্য কোনও উন্নয়ন তো করলে পারত বরং! কেউ কেউ আবার বলছেন, এর চেয়ে বরং আমাদের কদিনের জন্য বের করে দিত – ঝোপড়পট্টির লোকজনকে এভাবে অপমান করার কী দরকার ছিল? শহরের সুপরিচিত প্রবীণ অ্যাক্টিভিস্ট নির্ঝরী সিনহাও বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, এই সব ব্যাপারস্যাপার দেখে তিনি অত্যন্ত বিরক্ত ও হতাশ। মিস সিনহা বলছিলেন, যে রাস্তার পাশে দেওয়াল তোলা হয়েছে, সেটা এয়ারপোর্ট থেকে শহরে আসার পথেই পড়ে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গান্ধী আশ্রমের নিরাপত্তা পরীক্ষায় আহমেদাবাদ পুলিশ এর আগেও চীনা প্রেসিডেন্ট বা জাপানি প্রধানমন্ত্রীর গুজরাট সফরের সময় সেগুলো তেরপলের চাদর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হত – কিন্তু এবার কংক্রিটের দেওয়াল তোলার কী হল বুঝলাম না। এমন কী আশেপাশের ছোটখাটো বহু পান ও চায়ের দোকানও কয়েকদিনের জন্য বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আমরা তো একটা গরিব দেশ, শুধু আমরা বিদেশি অতিথিদের জন্য মাত্রাতিরিক্ত খরচই করছি না – গরিব মানুষের রুটিও কেড়ে নিচ্ছি। আহমেদাবাদের বাসিন্দা শাহিনা শেখও মনে করেন, মি ট্রাম্পের সফরের নামে শহরে অনেক ভুলভাল খরচও হচ্ছে। তিনি সাংবাদিকদের বলছিলেন, ট্রাম্প আসছেন শোনার পর থেকেই দেখছি শহরের যে রাস্তাগুলো দিব্বি ভাল ছিল সেগুলোকেই আরও ভাল করা হচ্ছে, অথচ যে খারাপ রাস্তাগুলোর মেরামত দরকার সেগুলো যে-কে-সেই পড়ে আছে।
নিজের উচ্ছেদের নোটিশ দেখাচ্ছেন রমা মেদা সবাই তো জানেন এখানে রাজনীতির কায়কারবার, সেই অনুযায়ীই এসব হচ্ছে আর কী! আর এই যে ট্রাম্পকে শো অফ করার জন্য রাস্তা সারানোর নামে ভাল রাস্তাগুলোতেই খরচ করছে, এই টাকা তো আমাদের জনগণের পকেট থেকেই যাবে? কাজেই একদিকে সুন্দর রাস্তাকে আরও চকচকে করে তুলে, আর অন্যদিকে গরিব বস্তিকে প্রেসিডেন্টের নজর থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে আহমেদাবাদ।