admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট, ২০২১ ৭:৪৭ অপরাহ্ণ
লিয়ন, ক্রাইম রিপোর্টার, এম কে নিউজঃ স্কাউট সংগঠনকে বলা হয় সৎ, চরিত্রবান , আদর্শ নাগরিক তৈরির সংগঠন। এমনটা দাবী দীর্ঘদিনের। সারা পৃথিবীতে স্কাউদের মূলমন্ত্রই এইটা। তবে বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম। স্কাউটিংয়ের মৌলিক বিষয়ের অনেক কিছুরই ব্যতিক্রম রয়েছে বাংলাদেশে। স্কাউট সংগঠনে যখন টাকা পয়সা ছিলনা তখন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠকরাই এই আন্দোলন পরিচালনা করতেন নিজের খরচে , আমাদের ছেলেমেয়েদের আদর্শ নাগরিক গড়ার গরজেই ।
এর পর যখন উর্ধতন সরকারি কর্মকর্তাদের আগমন ঘটলো স্কাউট সংগঠণে তখন থেকে স্কাউট পরিপন্থি কাজ শুরু হলো। এক সময় বাংলাদেশ স্কাউটস এর জাতীয় সদর দপ্তরের পরিচালনা পরিষদের দিকে তাকালে মনে হবে এটা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের রিক্রিয়েশন ক্লাব। স্কাউটদের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে সারাদেশ ভ্রমন করা যায়। তারা এক সময় সচিব, যুগ্ম সচিব থাকার কারণে জেলা পর্যায়ে ভিআইপি প্রটোকল পেতেন। আবার প্রায়ই বিদেশ ভ্রমন করা যেতো। এভাবেই স্বেচ্ছাসেবীদের হটিয়ে স্কাউটিং দখল হয়ে গেল। বাংলাদেশ স্কাউটস এর আয় ইনকাম বেড়ে গেল প্রচুর। সরকারি অনুদান ৫/৬ শত কোটি পর্যায়ে চলে গেল। নিজশ^ ইনকাম , সারা দেশ থেকে স্কাউটদের কাছ থেকে বাধ্যতামুলক মাথাপ্রতি সদস্য ফি বলে ফি আাদায় , শিক্ষা বোর্ড থেকে আয় , জাম্বুরী, কাম্পুরী , রোভার মুট , কমডেকা , এগোনারী বাহারী নামে সমাবেশের আয়োজন করে রেজিষ্ট্রশন , ছুতা নাতা খাতে আয় ইনকাম হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। আবার জেলা বা বিভাগ পর্যায়ে সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠকদের হটিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ স্কাউটস এর প্রফেশনালরা সেই জায়গা দখল করে ফেলল।
স্বেচ্ছাসেবীরা দায়িত্ব পালনকালীন জবাবদিহীতার বিষয় ছিল। কিন্তু প্রফেশনালরা দায়িত্বে আসার পর তাদের দায়বদ্ধতা চলে গেল কেন্দ্রের হাতে। আর শুরু হলো মচ্ছব। ইতোপুর্বে , কুমিল্লা , রাজশাহী , দিনাজপুর অঞ্চলে বড় রকমের আর্থিক কেলেঙ্কারীর ঘটনা প্রকাশিত হয়েছিল। কুমিল্লার একজন ডাকসাইটে জাতীয় কমিশনার (বিধি) অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান কে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়।
আর একজন কর্মকর্তা যিনি অতি সম্প্রতি জাতীয় কমিশনার থেকে বাদ হয়েছেন তিনিও আর্থিক কেলেঙ্কারীর জন্য সংগঠন থেকে বহিস্কৃত হয়েছিলেন। রাজশাহী অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ টাকার কেলেঙ্কারী প্রমানিত হওয়ায় অঞ্চলের সেক্রেটারী সদস্য পদ হারান এবং তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করে অর্থ আদায়ের জন্য বর্তমানের সভাপতি নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু সে মামলা আজো রুজু হয়নি। দিনাজপুর অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০০৮ সালে। দিনাজপুর অঞ্চলের কার্যক্রম শুরুই হয়েছিল আর্থিক কেলেংকারী দিয়ে। এখানে কয়েক লক্ষ টাকার আত্মসাৎ প্রমানিত হয় সম্পাদকের বিরুদ্ধে। কিন্তু কোন ব্যবস্থা দেওয়া হয়নি।
সম্প্রতি খুলনা স্কাউট অঞ্চলে মারাত্মক আর্থিক কেলেঙ্কারী ও তহবিল তছরুপের ঘটনা ঘটেছে বলে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। খুলনা স্কাউট অঞ্চলের গঠনতন্ত্র অনুসারে বাংলাদেশ স্কাউটস এর যে কর্মকর্তা আঞ্চলিক পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনিই পদাধিকার বলে আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করবেন। জনাব সাইফুল ইসলাম সাহেব ইতোপর্বে যে সব ষ্টেশনে কাজ করেছেন মোটামুটিভাবে সব জায়গাতেই এই অভিযোগ হয়েছে কোথাও কোথাও প্রমানিত হয়েছে তার শাস্তিও (?) হয়েছে তা হলো কর্মস্থলের বদলী। এতে বোঝা যায় জাতীয় সদর দপ্তরে তার কোন বড় ছাতা আছে।
খুলনা স্কাউট অঞলের আঞ্চলিক পরিচালক তথা আঞ্চলিক সম্পাদক সােেহবের বিরুদ্ধে যে সব আর্থিক অভিযোগ উঠেছে :
খুলনা স্কাউট অঞ্চলের আঞ্চলিক উপকমিশনার ( প্রোগ্রাম) লিডার ট্রেনার জনাব আখতারুজ্জামান যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও খুলনা অঞ্চলের স্কাউটের সভাপতি বরাবরে লিখিতভাবে যে অনিয়ম এবং তসরুফের অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তা খুবই মারাত্মক এবং স্কাউট সংগঠনের মুলমন্ত্রের সম্পুর্ন বিপরীত।
অভিযোগ সমুহঃ
১। ২০১৮ -১৯ অর্থ বছরে উন্নয়ন ও সংস্কার খাতে বাজেট বররাদ্দ ছিল ১২,৯০,০০০/ টাকা। সম্পাদকীয় রিপোর্টে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৭,১৮,৪৫৪/ টাকা। কিন্তু ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে অডিট রিপের্টে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৭২,৩১,৯৮৬/ টাকা। যা বরাদ্দকৃত বাজেট থেকে ৬০ লক্ষ টাকা বেশী। প্রশ্ন হলো অতিরিক্ত ৬০ লাখ টাকা কোথা থেকে পাওয়া গেল আর কোন খাতেই বা তা খরচ হয়েছে।
২। কাবিং সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় বেসিক কোর্স পরিচালনা করার জন্য অর্থ প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ স্কাউটস থেকে ১০০ টি কোর্স প্ররিচালনার ব্যয় বাবদ ৫৮ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে। কোর্স হয়েছে ৫০ টি। ৫০ কোর্সে খরচ ২৯ লক্ষ টাকা। বাঁকী অর্থ বাংলাদেশ স্কাউটস এ ফেরত দেওয়া কথা , আবার আঞ্চলিক তহবিলেও জমা নাই। এই অর্থ গেল কোথায় ?
৩। খুলনা আঞ্চলিক স্কাউটস শুরু থেকেই বেশ সমৃদ্ধ অঞ্চল। এখানে সুদৃশ্য ৩ তলা ভবন রয়েছে। সমাবেশ বা আঞ্চলিক প্রোগ্রামে আগত কর্মকর্তাদের থাকার ব্যবস্থা আছে। এমনকি জরুরী অবস্থা মোকাবেলা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এই বিল্ডিংয়ে সকলের আবাসন সহ প্রোগ্রাম বা ট্রেনিং বাস্তবায়ন করা যায়। এখানে বাংলাদেশ স্কাউটস থেকে যে কর্মকর্তা পোষ্টিং নিয়ে আসেন তারা আঞ্চলিক কার্যালয় সংলগ্ন কর্মকর্তাগণের জন্য নির্মিত বাসভবনে থাকেন। এই বাসায় যে কর্মকর্তা বসবাস করেন , অত্যন্ত কম ভাড়া পরিশোধ করে তারা থাকেন। এবং বাংলাদেশ স্কাউটস প্রদত্ত ৪৫% বাসা বাড়া বাবদ অর্থ তিনি বেতন ভাতার সাথে গ্রহণ করেন। জনাব স্ইফুল ইসলাম তার কর্মকালীন সময়ে বাসাভাড়া বাবদ কোন অর্থ আঞ্চলিক তহবিলে জমা দেন নাই , আবার বাংলাদেশ স্কাউট প্রদত্ত ৪৫% বাসা ভাড়া সম্পুর্ন নিজে নিয়েছেন।
৪। যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং খুলনা স্কাউট অঞ্চলের সভাপতি ৬০ লক্ষ টাকা আঞ্চলিখ স্কাউট তহবিলে প্রদান করেছেন। এই ৬০ লক্ষ টাকা আঞ্চলিক তহবিলে জমা হয়নি।
৫। খুলনা স্কাউট অঞ্চলের ৩য় তলার বাহিরের এক পার্শে¦ রং করা বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ১,১৭,৪৭৫/ টাকা। সাধারণ সমস্য , এবং যারা বাড়ীঘর রং করেন তাদের মতে এই খরচের পরিমান অসম্ভব রকমের বেশী দেখানো হয়েছে । বিষয়টি বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করে খরচের পরিমান নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এই খাতে বাড়তী খরচের অর্থ ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬। খুলনা স্কাউট অঞ্চলের তত্বাবধানে ১০ম আঞ্চলিক কাব ক্যাম্পুরী অনুষ্ঠিত হয় আঞ্চলিক ট্রেনিং সেন্টার পুলেরহাটে। ক্যাম্পুরীতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বাইরের খোলা মাঠে তাঁবুতে আবাসিক ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্ত কয়েকদিনই একটানা বৃষ্টির কারণে সকল অংশগ্রহণকারী কাব , কর্মকর্তা সকলেই বিল্ডিংয়ে অবস্থান করেন এবং ঘরের ভিতরেই সকল প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। বৃষ্টির কারণে বহিরাঙ্গনে কোন কর্মসুচি পালন করা সম্ভব হয়নি। অথচ ক্যাম্পুরীর আয়োজন সংক্রান্ত সকল খরচই বহিরাঙ্গনের দেখানো হয়েছে। কিন্তু বহিরাঙ্গনে কোন খরচ করার সুযোগ ছিলনা। অথচ ব্যয় দেখানো হয়েছে
ক) প্রোগ্রাম খাতে ১,৫০,৬৩৩/
খ) আবাসন , পানি ও সেনিটেশন খাতে ২,৩৭,২৪৯/
গ) সাজসজ্জা খাতে ১,০৯,০১৮/
ঘ) কেন্দ্রীয় ববস্থাপনা খাতে ২,৫৪,১৯৬/
ঙ) অন্যান্য খাতে ৭,৫০,৯৯৬/
সর্বমোট ১৫,০২,৬৫১/ মাত্র। জানা গেছে ইতোপুর্বেও তিনি রাজশাহী এবং দিনাজপুরে কর্মকালীন সময়ে আর্থিক কেলেঙ্কারীর সহায়ক হিসাবে ভুমিকা পালন করেন। রাজশাহী অঞ্চলের তসরুফকৃত ৬ লক্ষাধিক টাকা ফৌজদারী মামলা করে আদায় করার নির্দেশনা থাকলেও সে মামলা আজো করা হয়নি। আবার দিনাজপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক থাকাকালীন আর্থিক কেলেঙ্কারীর পৃষ্টপোষকতা করে প্রায় ১২/১৩ লক্ষ টাকার তসরুফের সাথে জড়িত হয়ে পরেন। কিন্তু অত্যন্ত কৌশলে আর্থিক কেলেঙ্কারির সকল দায় দায়িত্ব সম্পাদকের ঘাড়ে বর্তাতে সক্ষম হন। একারনে কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়। নুতন কমিটির হবার পরে বিষয়টি ধামাচাপা পরেছে।
অনুমান করা যায় জাতীয় সদও দপ্তরে জনাব সাইফুল ইসলামের বেশ কিছু ছাতা আছে। যে ছাতার ছায়ায় তিনি এই সব অপকর্ম চালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছেন। স্কাউট সংগঠনের কর্মকর্তারা যারা আমাদের যুব , শিশু কিশোরদের সামনে সৎ, চরিত্রবান ও আদর্শ নাগরিক গড়ার আইডল হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন তার বদলে আর্থিক কেলেঙ্কালীর আইডল হিসাবে গড়ে উঠছে। খুলনা অঞ্চলের স্কাউটের অভিভাবকগণ এবং স্কাউট কর্মকর্তা এহেন সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডের এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবী করেছেন। এবং তর্থ্য – উপার্থ্য আমাদের দফতরে সংরক্ষিত আছে।