হোম
নির্বাচিত কলাম

হতাশা এবং আত্মহত্যা:কারণ ও প্রতিকার-আজাহার রাজা

admin || মুক্ত কলম সংবাদ

প্রকাশিত: ৬ মার্চ, ২০২৫ ৫:৩৮ অপরাহ্ণ

ফাইল ছবি

মানবজীবন বহুমাত্রিক ধারা, সুখ-দুঃখ, সাফল্য-ব্যর্থতা, আশা-নিরাশার নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ বিদ্যমান। অগ্রগতির উচ্ছল প্রবাহ, প্রতিবন্ধকতার ঘোর অন্ধকার—এই দ্বন্দ্বময় জীবনের পথে হতাশা অশরীরী দানবের মতো আবির্ভূত হয়। হতাশা ক্রমশ মানুষের চিত্তকে গ্রাস করে, অদৃশ্য অন্ধকারে নিমজ্জিত করে এবং অনেক সময় চরম পরিণতি ডেকে আনে—যার পরিণাম আত্মহত্যা।

হতাশা মানুষের মানসিক অবস্থাকে ধীরে ধীরে এক গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত করে, আশার আলো ক্ষীণ হয়ে আসে। এটি ক্ষণস্থায়ী একটি অনুভূতি নয়, ব্যক্তির চিন্তা, আবেগ ও আচরণকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে প্রভাবিত করতে পারে। হতাশার মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব বহুমাত্রিক এবং মানুষের ব্যক্তিত্ব, আত্মবিশ্বাস ও বাস্তবতা উপলব্ধির ক্ষমতার উপর গভীর প্রভাব ফেলে।

হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে নিজের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। নিজের সামর্থ্যকে অপ্রতুল মনে করা, ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ হওয়া এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পাওয়া—এসব হতাশার অন্যতম প্রধান মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া। ব্যক্তি নিজেকে ব্যর্থ, অযোগ্য ও মূল্যহীন ভাবতে শুরু করে, যা তাকে আরও গভীর হতাশার দিকে ঠেলে দেয়।

হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তি বাস্তবতাকে বিকৃতভাবে উপলব্ধি করে। জীবন সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে ওঠে অতিমাত্রায় নেতিবাচক ও নিরাশাজনক। আশার যে বিন্দুমাত্র অস্তিত্ব রয়েছে, হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তি তা দেখতে পায় না বা দেখতে চায় না। অনেক সময় নিজের সমস্যাগুলোকে বাস্তবের তুলনায় অতিরঞ্জিত করে দেখে এবং সম্ভাব্য সমাধানগুলো অস্বীকার করে।

হতাশা একজন মানুষের আবেগকে সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, আবেগের স্থিতিশীলতা হারানো, সবকিছুতে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো বা একেবারে অনুভূতিশূন্য হয়ে যাওয়া—এসব হতাশার মানসিক প্রভাবের বহিঃপ্রকাশ। হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তি সামান্য ঘটনাতেও অতিমাত্রায় বিচলিত হয়ে পড়ে, ফলে তার দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়।

হতাশার কারণে মানুষ ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে ফেলে। একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা তার জীবন যাপনের অংশ হয়ে যায়। মনে করে, কেউ তাকে বোঝে না বা তার সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না। ধীরে ধীরে এই সামাজিক বিচ্ছিন্নতা তাকে আরও বিষণ্ণ ও একাকী করে তোলে, যা হতাশার চক্রকে আরও দৃঢ় করে।

গভীর হতাশা ধীরে ধীরে মানুষকে মানসিক অবসাদের দিকে ঠেলে দেয়। হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তি ক্রমশ মৃত্যুকে মুক্তির উপায় হিসেবে ভাবতে শুরু করে। আত্মহত্যার চিন্তা, জীবন সম্পর্কে চরম নিরাসক্তি এবং বেঁচে থাকার ইচ্ছার লোপ পাওয়া—এসবই হতাশার চূড়ান্ত মানসিক প্রভাব।

হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তি অনেক সময় সিদ্ধান্তগ্রহণে অক্ষম হয়ে পড়ে। সে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পায়, ভবিষ্যতের জন্য কোনো পরিকল্পনা করতে পারে না এবং নিজের সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। কর্মস্থলে বা ব্যক্তিগত জীবনে তার কর্মদক্ষতা কমে যায়, ফলে পেশাগত ও সামাজিক জীবনে ব্যর্থতার শঙ্কা আরও গভীর হয়।

মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তির শরীরেও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত উদ্বেগ ও মানসিক চাপের কারণে ঘুমের সমস্যা (অনিদ্রা বা অতিরিক্ত ঘুম), খাওয়ার অনিয়ম (ক্ষুধামান্দ্য বা অতিরিক্ত খাওয়া), মাথাব্যথা, হজমের সমস্যা, রক্তচাপের জটিলতা এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি ইত্যাদি শারীরিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

হতাশার প্রকৃতি ও কারণ: হতাশা মূলত এক বিষাদগ্রস্ত মানসিক অবস্থা, যা মানুষের আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্থিতিশীলতার ভীত নড়বড়ে করে তোলে। একে জন্ম দেয় নানাবিধ কারণ ।

জীবনে প্রত্যেক মানুষই কোনো না কোনো লক্ষ্য বা স্বপ্নকে সামনে রেখে এগিয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবতা সবসময় প্রত্যাশার অনুকূলে থাকে না। যখন কারও উচ্চাশা ও বাস্তব অবস্থার মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান সৃষ্টি হয়, তখন হতাশা অবধারিত হয়ে ওঠে। কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনে বারবার ব্যর্থ হওয়া, সমাজ ও পরিবারের চাপ, কিংবা নিজের সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ এই হতাশাকে আরও গভীর করে তোলে।

সমাজ ও পরিবার প্রত্যেক মানুষের আত্মপরিচয়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু যখন সমাজ কঠোর মূল্যায়ন করে এবং পরিবার থেকেও অবহেলা ও অযাচিত চাহিদার চাপ সৃষ্টি হয়, তখন তা মানুষের মনোজগতে গভীর ক্ষতের জন্ম দেয়। বিশেষত, অপমান, প্রত্যাখ্যান, অবজ্ঞা কিংবা তুলনামূলক আচরণ অনেক সময় মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

মানুষ সামাজিক প্রাণী। ভালোবাসা, স্নেহ, সংযোগ ও সম্পর্ক তার মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। কিন্তু যখন কোনো ব্যক্তি প্রিয়জনদের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়, সম্পর্কের ভাঙনে বিধ্বস্ত হয়, কিংবা দীর্ঘদিন নিঃসঙ্গতায় কাটায়, তখন তার মানসিক স্থিতি দুর্বল হয়ে পড়ে। এই একাকীত্ব ধীরে ধীরে বিষাদগ্রস্ত সৃষ্টি করে এবং হতাশাকে চূড়ান্ত রূপ দেয়।

হতাশার অন্যতম প্রধান উৎস হলো মানসিক অবসাদ, যা ধীরে ধীরে মানুষের আত্মবিশ্বাস ও জীবনীশক্তিকে গ্রাস করে। অতীতের কোনো ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বা ট্রমা, জীবনে চলার পথে একের পর এক ব্যর্থতা, কিংবা আত্মপরিচয়ের সংকট অনেকের মধ্যে আত্মসম্মানের অভাব সৃষ্টি করে। এ ধরনের দীর্ঘস্থায়ী মানসিক ক্লান্তি ও ব্যথা একসময় গভীর হতাশার জন্ম দেয়, যা ধীরে ধীরে জীবন সম্পর্কে নিরাসক্তির দিকে ঠেলে দেয়।

জীবনে বারবার ব্যর্থতা ও প্রত্যাশিত ফল অর্জন করতে না পারার যন্ত্রণা মানুষের মনে এক অদৃশ্য ক্ষতের সৃষ্টি করে। এই ব্যর্থতা ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে, নিজেকে অযোগ্য মনে করানোর প্রবণতা সৃষ্টি করে এবং হতাশাকে স্থায়ী রূপ দেয়।

আধুনিক সমাজে সাফল্যের জন্য প্রবল প্রতিযোগিতা ও অতিরিক্ত চাপ মানুষকে ক্রমাগত একটি অদৃশ্য দৌড়ে ঠেলে দেয়। নিখুঁত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা, অন্যদের তুলনায় নিজেকে পিছিয়ে পড়া মনে করা, এবং ব্যর্থতার ভয় হতাশাকে গভীরতর করে তোলে।

অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব, ঋণের বোঝা এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তাহীনতা অনেকের মানসিক স্থিতি দুর্বল করে দেয়। আর্থিক অনটনের ফলে আত্মসম্মানের সংকট দেখা দেয়, যা হতাশার অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

মানসিক চাপ শুধু মানসিক কারণেই হয় না, শারীরিক অসুস্থতাও এটি তীব্র করে তুলতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী রোগ, শারীরিক অক্ষমতা, কিংবা কোনো গুরুতর শারীরিক সমস্যার কারণে মানুষ একধরনের অসহায়ত্ব অনুভব করে, যা হতাশার জন্ম দেয়।

সমাজের কিছু প্রচলিত ধ্যানধারণা ও বৈষম্য অনেককে নিগৃহীত করে। গায়ের রং, লিঙ্গ, ধর্ম, অর্থনৈতিক অবস্থা কিংবা পারিবারিক পটভূমির কারণে কেউ কেউ সমাজে অবহেলিত হয়। এই অবহেলা ও প্রত্যাখ্যান হতাশাকে উস্‌কে দেয় এবং অনেকের মানসিক শান্তি নষ্ট করে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যদের কৃতিত্ব দেখে নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে করা, ভার্চুয়াল দুনিয়ার সঙ্গে বাস্তব জীবনের গ্যাপ, এবং ইন্টারনেট আসক্তি হতাশাকে তীব্র করে তুলতে পারে। অন্যদের তুলনায় নিজেকে কম সফল মনে করার প্রবণতা অনেকের আত্মবিশ্বাসকে ধ্বংস করে দেয়।

যখন হতাশা অন্তরের শিকড় গেঁথে ফেলে, তখন জীবনের প্রতি আকর্ষণ ম্লান হয়ে যায়। আত্মহত্যা শুধু একক ব্যক্তির পরিণতি নয়, এটি এক সামাজিক ব্যাধি, যা পরিবার, পরিজন এবং সমগ্র সমাজকে শোকে আচ্ছন্ন করে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ জীবনের ভার সইতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয়, যা কেবল ব্যক্তিগত দুর্বলতার প্রতিফলন নয়, বরং এটি একটি জটিল মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক সংকটের বহিঃপ্রকাশ। আত্মহত্যার পেছনে যে কারণগুলি সক্রিয় থাকে, তা হলো—

আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ হলো মানসিক অসুস্থতা। দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্নতা, দ্বৈতব্যক্তিত্ব, বিষাদগ্রস্ত, উন্মাদনা এবং অতিরিক্ত উদ্বেগ মানুষের স্বাভাবিক চিন্তাধারাকে দুর্বল করে দেয়। মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায়ই নিজেকে নিঃসঙ্গ, অপ্রয়োজনীয় এবং অকেজো মনে করেন। অতীতের কোনো দুঃসহ অভিজ্ঞতা কিংবা চলমান সংকট থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে না পেয়ে তারা আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

চরম আর্থিক অনটন, ঋণের বোঝা এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা অনেকের মানসিক স্থিতি দুর্বল করে দেয়। বিশেষত, যখন একজন ব্যক্তি পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হন, তখন তার মধ্যে অপরাধবোধ জন্ম নেয়, যা আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অনেক সময় চাকরি হারানো, ব্যবসায়িক ব্যর্থতা কিংবা অপ্রত্যাশিত অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও মানুষকে চরম সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দেয়।

মানুষের জীবনে পরিবার ও সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু যখন পরিবারে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার অভাব, সহমর্মিতার ঘাটতি ও অবহেলা বেড়ে যায়, তখন মানুষ মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। সামাজিকভাবে বঞ্চিত হওয়া, একাকীত্ব, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া ধীরে ধীরে জীবন সম্পর্কে নিরাসক্ত করে তোলে। বিশেষত, বয়স্করা যখন নিঃসঙ্গতায় ভোগেন, তখন তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়তে থাকে।

মানবজীবনে সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু যখন কোনো সম্পর্ক ভেঙে যায়, প্রিয়জনের কাছ থেকে অবহেলা কিংবা প্রতারণার শিকার হতে হয়, তখন অনেকের কাছে জীবন অর্থহীন মনে হতে পারে। প্রেমে ব্যর্থতা, পারিবারিক কলহ, সামাজিক লাঞ্ছনা কিংবা বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে অবমূল্যায়ন আত্মহত্যার অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে। বিশেষত, আবেগ প্রবণ কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়, যারা তুচ্ছ কারণেও নিজের জীবন বিসর্জন দিতে উদ্যত হয়।

অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, শারীরিক অক্ষমতা ও অসহনীয় ব্যথা মানুষকে আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। বিশেষত, ক্যানসার, পক্ষাঘাতগ্রস্ততা, অথবা এমন কোনো রোগ যা জীবনযাপন কঠিন করে তোলে, তা ব্যক্তি মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়।

যৌন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা প্রায়ই প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণা, লজ্জা ও অপরাধবোধে ভোগেন। সমাজের ভ্রুকুটি, অপমান ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি তাদের মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে ফেলে যে, তারা আত্মহত্যাকেই মুক্তির পথ বলে মনে করেন।

মাদকাসক্তি মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ শক্তি দুর্বল করে এবং নেতিবাচক চিন্তাকে উস্‌কে দেয়। অনেক সময় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় লোকজন ভুল সিদ্ধান্ত নেয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এছাড়া, নেশার টাকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হওয়া কিংবা মাদক ছাড়ার প্রচেষ্টায় শারীরিক-মানসিক কষ্টও আত্মহত্যার কারণ হতে পারে।

বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে সাইবার বুলিং ও সামাজিক মাধ্যমে অপমানজনক মন্তব্য অনেক তরুণ-তরুণীর আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে। অনলাইনে হেনস্তা, মিথ্যা অপবাদ কিংবা কোনো ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয় অনেককেই আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয়।

সমাধান ও প্রতিরোধের উপায় :
আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না; বরং এটি প্রতিরোধযোগ্য এবং যথাযথ মানসিক সহায়তা, সামাজিক সংহতি ও আত্মজাগরণের মাধ্যমে এর থেকে উত্তরণ সম্ভব। হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানো, তার অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করা এবং দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তনই পারে এই ভয়াবহ প্রবণতাকে রুখে দিতে। নিচে আত্মহত্যা প্রতিরোধের কয়েকটি কার্যকর উপায় উল্লেখ করা হলো—

আত্মহত্যার মূল কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো অযত্নে বেড়ে ওঠা মানসিক ব্যাধি ও বিষণ্নতা। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা, মানসিক রোগকে কোনো ‘দুর্বলতা’ হিসেবে না দেখে চিকিৎসার আওতায় আনা, এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষত, হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের যথাযথ কাউন্সেলিং প্রদান, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও থেরাপির মাধ্যমে তাদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই একাকীত্ব অনুভব করেন, ফলে তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়তে থাকে। পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব এবং সমাজের কাছ থেকে পাওয়া আবেগিক সংযোগ, ভালোবাসা ও সহানুভূতি তাদের জন্য মানসিক আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে পারে। প্রতিটি মানুষকে বোঝানো দরকার যে, তারা একা নন, এই পৃথিবীতে কেউ না কেউ তাদের ভালোবাসে, তাদের প্রয়োজনীয়তা আছে।

জীবনের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করা, আশাবাদী মনোভাব তৈরি করা এবং নানামুখী সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে নিজেকে ব্যস্ত রাখা আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে। ধ্যান, বইপাঠ, সৃজনশীল কাজ, সমাজসেবা, ভ্রমণ ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যক্তি নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পারে এবং জীবন সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি অর্জন করতে পারে।

জীবনের নানা সংকট ও প্রতিকূলতাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, নেতিবাচক চিন্তাগুলোর মোকাবিলা করা এবং সমাধানমুখী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার মাধ্যমে আত্মহত্যার প্রবণতা রোধ করা সম্ভব। হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তি যেন তার সমস্যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে পারেন, সে পরিবেশ তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যাতে শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হয় এবং সংকট মোকাবিলার দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

সমাজের দায়িত্ব হলো, কারও প্রতি অবজ্ঞা বা অবহেলা না করা এবং অন্যদের প্রতি সংবেদনশীল হওয়া। আত্মহত্যার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং তাদের কথা শোনা আত্মহত্যা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

পরিবার ও বন্ধুদের উচিত আত্মহত্যার লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া। যদি কেউ হতাশা, একাকীত্ব, ভবিষ্যৎ নিয়ে নেতিবাচক কথা বলা, হঠাৎ করে সম্পত্তি দান করা বা মৃত্যুর প্রতি আকর্ষণ দেখায়, তবে তাকে মানসিক সহায়তা দিতে হবে এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে।

প্রতি দেশে আত্মহত্যা প্রতিরোধে হেল্পলাইন চালু থাকা উচিত, যেখানে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ব্যক্তিরা ফোনকল বা অনলাইনের মাধ্যমে পরামর্শ নিতে পারেন। এই জরুরি সহায়তা ব্যবস্থা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ব্যক্তির জন্য তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর সমাধান হতে পারে।

হতাশা ও আত্মহত্যা সমাজের এক বিষাদময় বাস্তবতা, যা মননশীলতার গভীরে আলো ফেলতে বাধ্য করে। জীবন এক মহামূল্যবান উপহার, যার প্রতি যত্নবান হওয়া এবং সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করাই প্রকৃত বীরত্ব। হতাশার অন্ধকার যতই গভীর হোক, তার গহীন থেকে উত্তরণের পথ সবসময় উন্মুক্ত থাকে—কেবল প্রয়োজন দৃঢ় মানসিকতা, ভালোবাসার সংযোগ ও আশার আলোকে ধারণ করার মানসিকতা। তাই, জীবনকে ভালোবা♦সা, আত্মবিশ্বাসে উজ্জীবিত থাকা এবং পাশে থাকা মানুষদের প্রতি সংবেদনশীল হওয়াই হতে পারে এই ঘোর অন্ধকার থেকে মুক্তির সর্বোত্তম উপায়।

মতামত জানান :

এই রকম আরও টপিক

Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  

সর্বশেষ খবর

নওগাঁর সাপাহারে আনন্দঘন সংগঠনের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ।
রাজশাহী 9 hours আগে

সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২০ হাজার মার্বেল সরবরাহ দিয়ে ছিল
অপরাধ 9 hours আগে

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
জাতীয় 9 hours আগে

বগুড়ায় খেঁজুরের রস পানে প্রাণ গেল ৬ বছরের মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর!
দুর্ঘটনা 9 hours আগে

পঞ্চগড় তেঁতুলিয়ায় এবার মিনি রিসোর্ট উদ্বোধন।
দর্শনীয়-স্থান 10 hours আগে

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে সুদানে প্রাণ হারালেন রাজারহাটের শান্ত
দুর্ঘটনা 10 hours আগে

আজ পার্বতীপুর মুক্ত দিবস
রংপুর 16 hours আগে

নওগারঁ সাপাহারে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হলো শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।
জাতীয় 1 day আগে

জমি দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে দুইজন গুরুতর আহত।
অপরাধ 1 day আগে

পার্বতীপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে আলোচনা সভা।
জাতীয় 1 day আগে

পাঠকপ্রিয়

শিরোনাম :

হাদীর ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় দিনাজপুর সীমান্ত ৪২ বিজিবির রেড অ্যালার্ট জারি। রোহিঙ্গা মেয়েরা পাচার ছাড়াও বিদেশীদের দ্বারা যৌন কাজে ব্যবহারের টার্গেট হয়ে উঠছে ঠাকুরগাঁওয়ে নানা কর্মসূচিতে হানাদার মুক্ত দিবস উদযাপিত। ঠাকুরগাঁও জেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ৪র্থ জেলা রোভার মুট-২০২৫। কুড়িগ্রামের রাজারহাটে প্রাণিসম্পদ সপ্তাহের প্রদর্শনী ও সমাপনী অনুষ্ঠিত। পার্বতীপুরে জাতীয় প্রাণি সম্পদ ও ডেইরি প্রকল্পের উদ্বোধন। রাণীশংকৈলে জাতীয় প্রাণীসম্পদ সপ্তাহ ও প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত পলাতক শেখ হাসিনার অগ্রণী ব্যাংকের লকার ভেঙে ৮৩২ ভরি স্বর্ণ জব্দ রাজশাহীতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১০ জন ৩ ডিসেম্বর রংপুরে বিভাগীয় মহাসমাবেশ সফল করতে দিনাজপুরে ৮ ইসলামী দলের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে সব বাহিনী প্রস্তুত: সিইসি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৬ হাজার কৃষক পাচ্ছে বিনামূল্যে গম বীজ ও সার। মাত্র চার মাসের শিশু সুমাইয়া বাঁচতে চায়! পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি গঠন। ভূমিকম্পে সম্ভাব্য ক্ষতি কমাতে এখনই শক্তিশালী ও সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান রাজধানীতে  আজ থেকে ঘরে বসেই মেট্রোরেলের কার্ড রিচার্জ করবেন? নীলফামারীতে পাটবীজ উৎপাদনকারী চাষীদের প্রশিক্ষণ। আর কোনো পরিস্থিতি নেই যে নির্বাচন ব্যাহত হবে-ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুল  ৫-বছরেও শেষ হয়নি ওয়াশব্লকের নির্মাণ কাজ-জনস্বাস্থ্য অফিস বলছেন বাদ দেন চা খাওয়ার জন্য কিছু নেন। পার্বতীপুরে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকারের দাবীতে কর্মী সভা। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় নদী বাঁচাও আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নাগরিক সমাবেশ। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ইউএনও এক গৃহহীন ভারসাম্যহীন নারীর পাশে দাঁড়ালো। ৮ দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর নার্সিং এসোসিয়েশন দিনাজপুর জেলা শাখার স্মারকলিপি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে ইউনিয়ন সিএসওর লাইভস্টক সংলাপ সভা অনুষ্ঠিত বগুড়ায় প্রেম করে বিয়ে অতপর ভাড়া বাসায় স্ত্রীকে হত্যা করল স্বামী। দিনাজপুরে ৩ দিনব্যাপী উদ্যোক্তা মেলা ও পিঠা উৎসবের সমাপনী। দিনাজপুরের বিরলে শতাধিক নেতা-কর্মীর মামলা থেকে বাঁচতে ফ্যাসিস্ট আ,লীগ থেকে পদত্যাগ! অভিযোগ দিয়ে ও কাজ বন্ধ হচ্ছে না আদমদিঘীতে সরকারি জায়গা দখল করে করা হচ্ছে অবকাঠামো নির্মাণ! বগুড়ার কইপাড়ায় নববধূ শম্পা হত্যার অভিযোগ, যৌতুক দাবির জেরে স্বামী আটক দিনাজপুরে অনলাইনে মোবাইলের মাধ্যমে ক্যাসিনো জুয়া পরিচালনাকারী চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার