admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ৫:৪৬ অপরাহ্ণ
আব্দুল্লাহ্ আল মামুন,পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামের ওপর ভর করেই নেতা হয়ে ওঠেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের মহাজনপাড়ার আইনজীবী নূরুল ইসলাম সুজন। ২০০৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে একচ্ছত্র আধিপত্য তাঁর। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, সুজন একসময় হয়ে ওঠেন পুরো পঞ্চগড়ের মহাজন। তাঁর সহযোগীরাও কেউ কেউ ছুঁয়েছেন শত কোটির মাইলফলক।
এলাকায় সিন্ডিকেট, জমি দখল, বিদ্যালয় কমিটিতে স্বজনদের ঢোকানো, সুদ, জুয়া, মাদক ব্যবসা, মানুষকে নির্যাতনসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তাঁর স্বজনদের বিরুদ্ধে। করেছেন নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড়। তবে কৌশলী সুজন এলাকায় তেমন সম্পদ বাড়াননি। স্থানীয়দের কাছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের এই ১৬ বছর ছিল সুজন ও তাঁর পরিবারের বেপরোয়া রাজত্ব ও অমানবিক দুঃশাসনের সময়। ২০০৮ সালে পঞ্চগড়-২ আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সুজন। এর পর দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ দলের কমিটিতে ঠাঁই হয় তাঁর পরিবার ও স্বজন ১০ জনের।সুজন ক্ষমতার পাশাপাশি সম্পদ বাড়িয়েছেন বহুগুণে।
কেবল হলফনামা অনুযায়ী গত ১৫ বছরে তাঁর অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে প্রায় ৩২ গুণ। হলফনামায় ২০০৮ সালে তাঁর অস্থাবর সম্পদ ছিল প্রায় আট লাখ টাকা। ২০২৩ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকায়। ১৫ বছর আগে তাঁর ২৪ বিঘা কৃষিজমি ও ঢাকার বাড্ডায় ৪.৯৫ কাঠার প্লট থাকলেও এখন কৃষিজমির পরিমাণ দেখিয়েছেন প্রায় ৩০ বিঘা, সঙ্গে যোগ হয়েছে উত্তরার পাঁচ কাঠার প্লট, বনশ্রীতে দুটি এক হাজার ১০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ধানমণ্ডিতে এক হাজার ৮০০ বর্গফুটের পাকা বাড়ি। অভিযোগ রয়েছে, রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে সুজন নিয়োগ, বদলি, প্রকল্প থেকে কামিয়েছেন শত শত কোটি টাকা।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঐতিহাসিক পঞ্চগড় রেলস্টেশনের নামকরণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামের নামে। পঞ্চগড় স্টেডিয়ামের নামকরণও করা হয় তাঁর ভাইয়ের নামে। বোদা উপজেলার বিলুপ্ত পুঁটিমারী ছিটমহলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম নগর। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রভাব খাটিয়ে কমিটিতে রেখেছেন নিজের স্বজনদের।
স্থানীয়রা জানায়, প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর বিয়ে করেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মেয়ে আইনজীবী শাম্মী আকতার মনিকে। এরপর স্ত্রীর কথায় টিটিইকে বহিষ্কার, বিনা টিকিটে ভ্রমণসহ রেল বিভাগকে বানিয়ে ফেলেন নিজেদের সম্পত্তি। সুজনের সময়ে রেল মন্ত্রণালয়ে জনবল নিয়োগ হয়েছে প্রায় ছয় হাজার, যার বেশির ভাগই দুর্নীতির মাধ্যমে হয়েছে।
এপি এস রাসেদও কোটিপতিঃ রাসেদ প্রধানকে এপিএস করেন সাবেক রেলপথমন্ত্রী সুজন। আর রাসেদ পেয়ে যান আলাদিনের চেরাগ। নিজ এলাকা বোদা উপজেলার নয়াদীঘি বাজারে করেছেন দ্বিতল মার্কেট, বাড়ির পাশের ৯ বিঘার ড্রাগনবাগান। এ ছাড়া বোদা বাইপাস এলাকায় মহাসড়কের পাশে নামে-বেনামে রয়েছে কোটি টাকার তিনটি প্লট। এদিকে সুজন সংসদ সদস্য থাকা অবস্থাতেই ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন ময়দানদীঘি এলাকার রেজাউল করিম রেজা। রেজার বাবা ছিলেন দিনমজুর। সেই রেজাও আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
সুজনের ভাতিজাদের টর্চার সেলঃ নিজেদের টর্চার সেলে নিয়ে গলায় ছুরি ও বন্দুক ঠেকিয়ে জমি লিখে নিতেন সুজনের চাচাতো ভাই ওসমান আলী মাস্টারের দুই ছেলে রবিউল আওয়াল ডলার ও রাফিউল হাসান জানি। মাদক ও সুদের ব্যবসা ছিল তাঁদের। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সুজন পঞ্চগড় আওয়ামী লীগকে শেষ করে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, বর্তমানে সুজন কারাগারে এবং তাঁর স্বজনরা আত্মগোপনে।