admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ১৪ জুন, ২০২০ ৯:১৬ পূর্বাহ্ণ
নাগরিক ভাবনাঃ লায়ন অ্যাাডভোকেট আব্দুল মজিদঃ সাংসারিক কাজে আমি নিজে কতটুকু বুদ্ধিমান ও কর্মঠ তা না লিখে পারছি না। আজকের কাজের ফলাফল আমার কাছে নিঃসন্দেহে একটি চরম স্মরনীয় এবং পরম বোকামির একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বল্লেও অত্যুক্তি হবে না। আমার পরিবার, পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা এমনই ছিল যে, আমি কোনো দিন গৃহের কোনো কাজই করিনি, বিশেষ করে ঘরের মেয়ালি কাজগুলো। অর্থাৎ যেসব কাজ মা, বোন ও মেয়েরা করে – সেগুলো কোনো দিনই আমি করিনি বা আমাকে করতে দেওয়া হয়নি, এমনকি শেখারও সুযোগ পাইনি। সেজন্য পুরুষালি কাজগুলো আমি কি করিনি? পুরুষালি কাজ শুধু যে করেছি তাই নয়, অনেক শ্রমিকের চাইতেও অনেক বেশি করেছি।
যেমন ধরুন, আমাদের বাসার সম্মুখে এখন যেটি পাক-পাহাড়পুর জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও মোয়াজ্জেম সাহেবের অবাস – সেটি পূর্বে পাক-পাহাড়পুর ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, প্রাপ্ত বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র, সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র, মহিলা সেলাই ও উল বুনন কেন্দ্র, কলেজ পড়ুয়াদের জন্য আপ-টু-ডেট ক্লাব, স্কুল পড়ুয়াদের জন্য সোনালী ক্লাব, আব্দুর রহমান স্মৃতি পাঠাগার, কাজী কাদের নাওয়াজ স্মৃতি মজলিসসহ আরো অনেক কিছুই সেখানে ছিল। উল্লেখ্য, এসব প্রতিষ্ঠানসহ কয়েক ডজন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আমার বাবা প্রসিডেন্ট পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সমাজসেবী কবি নূরুল আমিন। কিন্তু এসব স্হাপনা নির্মানের পূর্বে এখান দিয়ে মহারাজা গিরিজানাথ ক্যানেল প্রবাহিত হতো এবং এখনও হচ্ছে। পূর্বে এখানে ক্যানেলটি বেশ চওড়া ছিল এবং খরা মৌসুমে পুকুর হিসেবে ব্যবহার করা হতো, এখন ক্যানেলটির প্রসস্হতা এখানে স্বাভাবিক। বাবা আমাদের সব ভাইদেরকে নিয়েই প্রতিদিন বিকেল থেকে মাগরিবের নামাজ পর্যন্ত এবং রবিবারে সমস্ত দিনই মাটি কাঁটে এই জায়গাটি ভরাটের কাজ করতেন এবং করাতেন। রোজার মাসে মাটি কাটা ও ভরাটের কাজ একটু বেশি করতে হতো। বাবা আমাদের উৎসাহ দিতেন এই বলে যে, রোজার সময় রোজা রেখে যত বেশি ভাল কাজ করা যায় – আল্লাহতায়ালা তাকে তত বেশি সওয়ার দেন, আরো অনেক কথা।
কোন ভাই কখনো একটু আধটু ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করলেও আমার মনে বা ডিকসেনারীতে ফাঁকি শব্দটা কখনই ছিল না। বরং সওয়াব কামাইয়ে সবার শীর্ষে অবস্থানের প্রত্যাশায় সব ভাইদের ডিঙ্গিয়ে আমি অনেক বেশি কাজ করতাম। আমি স্কুল জীবনে কখনও রোজা ভাঙ্গিনি, এমনকি কোনো রাতে আলসেমি করে বা ঘুম না ভঙ্গার কারণে শেহেরি না খেলে কি হবে – রোজা কিন্তু আমি কখনও বাদ দেইনি। বাঁশের বেড়া ও টিনের চালের তৈরি বিশালাকার ঘরটির দু’দিকে মনোরম, রুচিসম্মত ও নয়নাভিরাম ফুলের বাগান ছিল। বাগান দু’টিতে হস্তচালিত টিউবওয়েল দিয়ে পানি দিতে হতো। এ কাজটিতেও কিন্তু আমি প্রথম ছিলাম বরাবরই।
দিনাজপুর জিলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যাবস্হায় জোহরের নামাজের জন্য বারান্দা ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করে জায়নামাজ বিছাতাম ও নামাজ শেষে সেগুলো ভাজ করে উঠিয়ে রাখতাম আমি ও বন্ধু আবু বকর সিদ্দিক। আমার নাম আব্দুল মজিদ হলেও স্কুলের হেড মাস্টার কাজী কাদের নেওয়াজ স্যার আমার নাম রেখেছিলেন “মোল্যা মাজেদ”। স্কুল জীবনে আমাকে সবাই মোল্যা মাজেদ নামেই চিনতেন ও জানতেন। এতগুলো কথা অবতারণা করার একটাই কারণ, সেটি হচ্ছে আমি কখনই আলসে বা ফাঁকিবাজ ছিলাম না। কাজের দিক দিয়ে আমি অসম্ভব পরিশ্রমী ছিলাম এবং সর্বদাই প্রথম ছিলাম। কিন্তু যে ঘটনার কারণে আজকের এই লেখা সেটাকে বুঝানোর জন্যই এতসব কথার অবতারণা করলাম।
মেয়ালি কাজগুলো না পারার জন্য আমি পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার কথা বলেছি। আগেই বলেছি যে, বাবা আমাদের বাসার পুরুষ ছেলেদেকে কোনো মেয়ালি কাজ করতে দিতেন না, কিন্তু পুরুষদের পুরুষালি কাজ কত প্রকার ও কি কি – তা তিনি শত ভাগেরও বেশি আদায় করিয়ে নিতেন। যার কারণে রান্নাবান্না, কাপড়চোপড় ধোয়া, লন্ঠন মোছা ও জ্বালানো – এ কাজগুলো আমাদেরকে পারিবারিকভাবেই করতে দেওয়া হতো না। হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করলে এসব কাজ করতে ও শিখতে হবেই। কিন্তু আমাকে কোনো দিন পড়াশোনার জন্য হোস্টেলে থাকতে হয়নি। ঢাকাতে পড়াশোনার জন্য বড় বোনের কাছে ছিলাম। বড় বোনের বাসায় কাজকাম করা তো দূরের কথা বড়বোনের বাসায় থাকাবস্হায় আমার বড় বোন ছোট বেলায় আমাকে যেমনটি তাঁর নিজ হাতে খাইয়ে দিতেন – তাঁর ঢাকার বাসায় থাকাকালীন ছোট বেলার মতো তিনি জোর করেই আমাকে খাইয়ে দিতেন। যেহেতু বড় দুলাভাই আর্মির কর্ণেল (ডাক্তার) ছিলেন – সেহেতু কাপড়চোপড় ধোয়া ও গোছানোর কোনো প্রশ্নই উঠতো না। কেননা, এ কাজগুলো বড় আপাই করতেন এবং করিয়ে নিতেন। কাজের জন্য বাসায় পাইক পেয়াদা ও গৃহকর্মী তো ছিলই।
মা যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিনে মা আমাকে জোর করেই খাইয়ে দিতেন। আমি অনেক সময় বলতাম “মা আমি এখন অনেক বড় হয়েছি, তুমি আমাকে খাওয়ায় দিবা না”। মা কিন্তু আমার কথা শুনতেন না। মা আমাকে সব সময়ই ছোট্ট শিশুটি মনে করে জোর করেই আমাকে খাইয়ে দিতেন। সে কারণে পিতৃলয়ে ও বোনের বাসায় থাকাবস্হায় কাজকাম করার কোনো সুযোগই আমি পাইনি। এবার আমার গিন্নীর কথায় আশা যাক। সে আমাকে আজ পর্যন্ত কেনো কাজই করতে বলা তো দূরের কথা – খাবার সময় গ্লাসে পানি ঢালার সুযোগটাও আমাকে দেয়নি। বাসার সব কাজকাম, কাপড়চোপড় ধোয়া ও ইস্ত্রি সেই করে। আজ পর্যন্ত কোন কাজ আমাকে করতে বলা তো দূরের কথা, তার খুব অসুখের সময়ও সে কোনো কাজ আমাকে করতে বলেনি, এমনকি মশারী টাঙ্গানোর সুযোগও আমাকে কোনো দিন দেয়নি।
যারা বিদেশে থাকেন তারা রান্নাবান্না না জানলেও ঠেলায় পরে হলেও কাজকাম না করে বা শিখে কোনো উপায় থাকে না। আমি সৌদী আরবের জেদ্দায় ছিলাম কয়েক বছর। কিন্তু সেখানে কাজকাম করা, কাপড়চোপড় ধোয়া বা ইস্ত্রি করা বা রান্নাবান্না করা বা শেখা তো দূরের কথা – এ ধরণের যেকোন কাজ সেখানে করলেই সর্বনিম্ন শাস্তি হচ্ছে – চাকরিচ্যুত করে দেশে ফেরৎ পাঠিয়ে দেওয়া। ফাইভ স্টার হোটেলে যারা এক্সিকিউটিভ পদে চাকরী করেন – তারা রেস্তোরাঁ বা ক্যান্টিনে যা ইচ্ছে তাই খেতে পারেন, খাওয়ার কেনো লিমিটেশন নেই, শুধু বিলে স্বাক্ষর করলেই হয়ে গেল। কাপড়চোপড় ধোয়ার জন্য লন্ড্রি আাছে। লন্ড্রিতে শু