admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ২ জুলাই, ২০২০ ৮:২২ পূর্বাহ্ণ
ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিবাদের মধ্যে পাকিস্তানের বিমানঘাঁটি ব্যবহার করছে চীন। পাকিস্তানের অধীনে থাকা কাশ্মীরে স্কার্দু বিমানঘাঁটিতে চীনের বিমান বাহিনীর মুভমেন্ট দেখতে পেয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দারা। এ বিষয়ে তারা নরেন্দ্র মোদির সরকারকে সতর্ক করেও দিয়েছে। তাদের দেয়া তথ্য মতে, ৪০টির বেশি চীনের ফাইটার জেট জে-১০ স্কার্দু বিমানঘাঁটিতে দেখা গেছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে চীনের বিমান বাহিনী ভারতে হামলার জন্য পাকিস্তানের এই ঘাঁটিটি ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন খবর প্রকাশ করেছে ভারতের সংবাদমাধ্যম নিউজ এইট্টিন। এই বিমানঘাঁটি ভারতের লাহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চীনের যেকোনো বিমানঘাঁটি থেকে এটা ভারতের অনেক কাছে। সূত্রের খবর, এই জন্য চীন স্কার্দু বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করে নিজের শক্তি পরীক্ষা করতে চায়। যাতে ভারতের একদম কাছ থেকে ভারতের উপর হামলা চালানো যায়। আর এমনটা হলে ভারতকে ২টি আলাদা সীমান্তে লড়াই করতে হবে।
ভারত-চীনের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা লাদাখে ২০ হাজার সেনা ও আজাদ কাশ্মীরে চীনের জেট বিমান । ভারত-চীনের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা থামাতে দুদেশের মধ্যে তিন তিনবার শীর্ষ পর্যায়ের সামরিক বৈঠক হয়েছে। ভারত প্যাংগং ও গালওয়ান উপত্যকায় দখল করা জমি ছাড়তে বললে চীন উল্টা লাদাখ সীমান্তে ভারতীয় সেনা কমানোর চাপ দেয়। এমন এক পরিস্থিতিতে জানা গেল, পাকিস্তানি ঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে চীনা বিমান বাহিনী। নিচ্ছে প্রস্তুতিও। এছাড়াও পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা এলএসি বরাবর ২০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে চীন। শুধু তাই নয়, এলএসি থেকে প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার দূরে জিনজিয়াং প্রদেশেও একটি ডিভিশন (১০ থেকে ১২ হাজার জওয়ান) তৈরি রেখেছে পিএলএ। নির্দেশ পেলে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সীমান্তে উপস্থিত হবে চীনা ডিভিশনটি।
ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিবাদের মধ্যে চীন পাকিস্তানকে ব্যবহার করছে। পাকিস্তানের অধীনে থাকা কাশ্মীরের স্কার্দু বিমান ঘাঁটিকে কাজে লাগাচ্ছে। সেখানে চীনের বিমান বাহিনীর মুভমেন্ট দেখতে পেয়েছে ভারতের এজেন্সি। তারা সতর্ক করে দিয়েছে ভারতকে। তাদের দেয়া খবর অনুযায়ী ৪০টিরও বেশি চীনা ফাইটার জেট জে-১০ স্কার্দুতে দেখা গেছে। ভারতশাসিত লাদাখের লেহ নামক একটি শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দ‚রে অবস্থিত পাকিস্তানের এই বিমান ঘাঁটিটি। যেকোনো চীনা বিমান ঘাঁটি থেকে এটা ভারতের অনেক কাছে। এই জন্যে চীন স্কার্দু বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করে নিজের শক্তি পরীক্ষা চালাতে চায়। যাতে ভারতের একদম কাছ থেকে ভারতের ওপর হামলা চালানো যায়। তাই ভারতকে এবার ২টি আলাদা সীমান্তে লড়াইয়ের জন্য তৈরি থাকতে হচ্ছে।
দেশটির গণমাধ্যমে আরো বলা হয়, লাদাখের বিরুদ্ধে চীনের ব্যবহার করার জন্য তিনটি বিমান ঘাঁটি রয়েছে। সেখান থেকে ফাইটার এয়ারক্রাফট ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো হলো কাশগড়, হোতান আর নাগ্রী গুরগুংসা। এই এয়ারবেসগুলো থেকে তাদের হামলা চালানোর ক্ষমতা সীমিত। কাশগড় থেকে লেহর দূরত্ব ৬২৫ কিলোমিটার, খোতান থেকে ৩৯০ কিমি, ও গুরগুংসা থেকে ৩৩০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। এগুলো সবই ১১ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় রয়েছে। আর সেখানেই ১০০ কিলোমিটার দূরে স্কার্দু চীনের জন্য সবচেয়ে ভালো অপশন।
ভারতশাসিত লাদাখের কারগিল নামক শহর থেকে স্কার্দু ৭৫ কিলোমিটার দূরে। এই বিমান ঘাঁটির ২টি রানওয়ে আছে। একটি আড়াই কিলোমিটার লম্বা, আর দ্বিতীয়টি সাড়ে তিন কিলোমিটার লম্বা। চীনা ফাইটার জেট এই বিমান ঘাঁটি থেকে কাজ করে আবার সেখান থেকে ফিরে যেতে পারবে। আর ভারত যদি স্কার্দুতে পাল্টা হানা দেয় তাহলে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, এমনিতে তিব্বতে দুটি চীনা ডিভিশন মোতায়েন ছিল। এবার মূল চীনা ভূখন্ডের সুদূর প্রান্ত থেকে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটারের সফর শেষে এসে পৌঁছেছে আরও দুটি চীনা ডিভিশন। দ্রুত গতিতে ময়দানে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এদের সঙ্গে রয়েছে সাঁজোয়া গাড়ির সম্ভার ও হামলা চালানোর জন্য ভারি হাতিয়ার।
এদিকে, চীনা গতিবিধির উপর নজর রেখে তৈরি ভারতও। পূর্ব লাদাখে অতিরিক্ত দুটি ডিভিশন মোতায়েন করেছে ভারতীয় ফৌজ। পাশাপাশি, দৌলত বেগ ওলডিতে মোতায়েন থাকা ‘আরমরড ব্রিগেডকে মদদ দিতে তড়িঘড়ি বায়ুসেনার পণ্যবাহী বিমানে উড়িয়ে আনা হয়েছে বিএমপি-২ ও টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাংকও। শুধু তাই নয়, কারাকোরাম গিরিপথ থেকে গালওয়ান উপত্যকায় চীনের যুদ্ধ প্রস্তুতি নজরে রেখে আর একটি ডিভিশন মোতায়েন করার কথাও ভাবছে ভারত। বর্তমানে পূর্ব লাদখের সুরক্ষার দায়িত্ব রয়েছে কারু স্থিত ত্রিশূল ইনফ্যান্টরি ডিভিশন-এর হাতে।
দেশটির গণমাধ্যম জানায়, বারবার বৈঠকের পরেও গালওয়ান উপত্যকা ও প্যাংগং লেক থেকে সেনা সরিয়ে নিতে নারাজ চীন। ফলে বেজিংয়ের যে কোন পদক্ষেপের জবাব দিতে স্থল ও আকাশ পথে জোরালো প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত। স্থল ও আকাশ পথের প্রস্তুতির পাশাপাশি এবার পানি পথেরও প্রস্তুতি নিয়েছে ভারত।
ভারতীয় সেনা সূত্রে জানা যায়, প্যাংগং লেকে নতুন করে টহলে নামছে ভারতীয় নৌবাহিনীর ভেসেল। প্যাংগং লেকে কড়া নজরদারির জন্য এক ডজন স্টিলের ভেসেল পাঠানো হচ্ছে। জানা যায়, প্যাংগং লেকে টহলদারির জন্য চীনের রয়েছে ৯২৮বি ভেসেল। সূত্র : এএনআই, নিউজ এইটিন, টাইমস অব ইন্ডিয়া।