admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি, ২০২০ ৮:৫২ পূর্বাহ্ণ
২০১৩ সালে আহমদীয়া মুসলিম-বিরোধী এক সমাবেশে নিরাপত্তা বাহিনী র্যাবের উপস্থিতি। বাংলাদেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে মঙ্গলবার আহমদীয়া জামাতের বার্ষিক জলসা চলার সময় তাদের একটি মসজিদে এবং আশেপাশের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে।সেখানকার আহমদীয়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার শহরের কান্দিপাড়া এলাকায় তাদের দুদিনব্যাপী বার্ষিক জলসা শুরু হয়।এর অংশ হিসেবে সন্ধ্যায় শিশুদের একটি অনুষ্ঠান চলার সময় হঠাৎ করে আহমদীয়াদের মসজিদ বায়তুল ওয়াহেদে হামলা চালানো হয়।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আহমদীয়া মুসলিম জামাতের নায়েবে আমির মোঃ মনজুর হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, অনুষ্ঠান চলার মধ্যে হঠাৎই শুনতে পেলাম স্লোগান দিয়ে একটি মিছিল নিয়ে অনেক মানুষ একেবারে আমাদের মসজিদের গেটের ভেতর ঢুকে পড়েছে। আমাদের ছেলেরা গেট আটকে দিলে তারা একদিকে গেট ভাঙ্গার চেষ্টা করতে থাকে, অন্যদিকে বৃষ্টির মত ঢিল ছুড়তে থাকে। আমাদের তিনতলা মসজিদটির সব কাঁচ ভেঙে গেছে, একটি মাইক্রোবাস এবং একটি এয়ারকন্ডিশনার চুরমার হয়ে গেছে। হামলা ও সংঘর্ষে আহত কয়েকজনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

২০১৩ সালে আহমদীয়া মুসলিম-বিরোধী এক সমাবেশে নিরাপত্তা বাহিনী র্যাবের উপস্থিতি।
আহমদীয়াদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণা চালিয়ে আসছে খতমে নবুয়ত। ২০০৪ সালে ঢাকায় তাদের এক সমাবেশ। রাত সাড়ে নয়টার পর পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত থেকেই ঘটনাস্থলে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, স্থানীয় কওমি মাদ্রাসা এবং আহমদীয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে কয়েক বছর আগে থেকে উত্তেজনা চলছিল। আহমদীয়া এবং কওমি মাদ্রাসার লোকেদের মধ্যে কয়েক বছর ধরে বিরোধ চলছে। ওখানে কওমি মাদ্রাসার পাশেই আহমদীয়া সম্প্রদায়ের লোকেদের মসজিদ ও বাড়িঘর। এ ঘটনা নিয়ে দুই পক্ষ দুই রকম বক্তব্য দিয়েছে, কিন্তু আমরা শুরু থেকেই ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। কান্দিপাড়ায় বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। মিঃ হোসেন জানিয়েছেন, দুই পক্ষকে নিয়ে আজ বৈঠক করেছেন তারা। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কান্দিপাড়ায় এখনও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে, বিশেষ করে আহমদীয়া জামাতের মানুষেরা যে এলাকায় বাস করেন সেখানে। কান্দিপাড়ার একজন নারী বলছেন, গত রাতের পর থেকে পরিবারের সদস্যদের কেউই বাড়ির বাইরে বেরুতে পারেনি। কাল রাতে ওদের (হামলাকারী) ইট এবং ঢিলে আমার বাড়ির টিনের চাল বাঁকা হয়ে গেছে। বাড়ির বেড়া সব ভেঙে ফেলছে। রাত থেকে আমার দেবর, ছেলে এবং মেয়ের জামাই কেউ ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারে নাই। আজকে সারাদিন ধরে বাড়ির চারপাশে তারা ঘুরতেছে, মাঝেমধ্যে ঢিল মারতেছে। আমরা ভয়ের মধ্যে আছি।

২০১৫ সালে রাজশাহীতে আহমদীয়াদের একটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের পর স্থানীয় লোকজনের ভিড়।
কান্দিপাড়ায় প্রায় পৌনে তিনশ আহমদীয়া পরিবার বাস করে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আহমদীয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা শহরের মূল সমাজ থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করেন। বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে বিভিন্ন জেলায় হামলা ও সামাজিক নিগ্রহের শিকার হয়েছেন আহমদীয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা। সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাসী কিছু সংগঠন আহমদীয়াদের অমুসলিম ঘোষণা করার দাবি করে আসছে। কিন্তু অধিকার কর্মীরা মনে করেন, সংখ্যায় যত কমই হোন, আহমদীয়াদের নিরাপত্তা দেবার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, শুধু আইন করলেই হবে না। তবে এখনো দেরি হয়ে যায়নি, সরকারের উচিত এরা (আহমদীয়া) যেহেতু সংখ্যায় এত কম, এদের সাংগঠনিক শক্তি এত কম এবং যারা এদের ওপর হামলা চালায়, তারা নানাভাবে রাষ্ট্রের সমর্থন পাচ্ছে, সেই প্রশ্রয়টা বন্ধ করে আহমদীয়ারা যাতে কোন ধরনের হামলার শিকার না হয়, সেটা নিশ্চিত করা।