admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ৩১ মার্চ, ২০২০ ৭:১২ পূর্বাহ্ণ
সংবাদ সম্মেলন করছেন আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে লোকজনের প্রশ্নের মধ্যেই বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের কাছে যতোটুকু তথ্য আছে ততোটুকু তথ্যই তারা তুলে ধরছেন। ক্রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগির বলছেন, আমরা একটা শব্দও এখানে টুইস্ট করার চেষ্টা করি না। এটা তো বাংলাদেশে সৃষ্ট কোন রোগ নয়। পৃথিবীর উন্নত সকল দেশ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তারাও তো পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশে কেন তথ্য লুকাবো?আইইডিসিআরের এই কর্মকর্তার প্রশ্ন। করোনাভাইরাস সন্দেহে দেশটিতে কতো লোকের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে কতজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, কতজন সুস্থ হয়ে গেছেন এবং কতো জনের মৃত্যু হয়েছে এসব পরিসংখ্যান প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে। আইইডিসিআরের দেওয়া তথ্য অনুসারে সারা দেশে সোমবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯ জন। মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের। এর আগে দুই দিন বিরতি দিয়ে নতুন একজন রোগী পাওয়া গেছে বলে আজ সোমবার জানানো হয়েছে। শুক্র ও শনিবার আক্রান্ত কোন ব্যক্তি পাওয়া যায় নি।
ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এভাবেই একজন ব্যাঙ্ক কর্মকর্তা কাজ করছেন। আইইডিসিআরের তথ্য নিয়ে প্রশ্ন প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া এসব তথ্য নিয়ে বাংলাদেশে লোকজনের মধ্যে বড় ধরনের অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। তাদের অনেকেই মনে করেন যে আইইডিসিআর প্রকৃত তথ্য গোপন করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই এই প্রতিষ্ঠানটির সমালোচনা করছেন। তাদের অভিযোগ যে সরকারের নির্দেশে তারা আক্রান্ত ব্যক্তি ও মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে বলছেন। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এসব তথ্য বিশ্বাস করতে পারছেন না। তারা প্রশ্ন তুলছেন সারা পৃথিবীতে যখন আক্রান্ত ব্যক্তি ও মৃত্যুর সংখ্যা ধাই ধাই করে বাড়ছে তখন বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে এই সংখ্যা এতো কম হয় কীভাবে? বিশ্বে এ পর্যন্ত সাত লক্ষ ৩০ হাজার লোক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩ হাজার। এদের মধ্যে মারা গেছেন প্রায় ৩৫ হাজার। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে সাড়ে তিন হাজার মানুষের। দক্ষিণ এশিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ৬২৪ জন আর মারা গেছেন ১৩৯ জন।
বাংলাদেশে সরকারী তথ্য নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে। আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, আমরা সারা বিশ্বের তথ্য দেখছি, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা দেখছি কিন্তু দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর দিকে তাকাচ্ছি না। সার্বিকভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে করোনাভাইরাসের কেস কম। সেই তুলনায় তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশেও এখনও পর্যন্ত কম কেস পাওয়া গেছে। তবে এটা যে একদম এরকমই থাকবে, একদমই বাড়বে না সেটা তো বলা যাবে না। এই সংখ্যা বাড়তেও পারে আবার নাও বাড়তে পারে, বলেন আলমগির। আইইডিসিআর গত ৮ই মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত করার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। এরপর ১৮ই মার্চ প্রথম ব্যক্তির মৃত্যুর কথা জানানো হয়। কম পরীক্ষা বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সন্দেহে পরীক্ষার হারও অনেক কম। এ পর্যন্ত মাত্র সাড়ে তেরো’শর মতো ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মোট ৪৯ জনের পজিটিভ পাওয়া গেছে। সারা দেশে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে কি এই অনাস্থা দূর করা সম্ভব?
এই প্রশ্নের জবাবে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম আলমগির বলেন, পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লেই যে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোকজন পাওয়া যাবে এই ধারণা বিজ্ঞানসম্মত নয়। যতো লোকের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় ৩ দশমিক ৭ শতাংশের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। আক্রান্ত লোকের হিসেবে মৃত্যুর হার ১০ শতাংশেরও বেশি। মৃত্যুর এই হার আক্রান্ত অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় উদ্বেগজনক। কিন্তু মি. আলমগির বলেন, এতো অল্প তথ্য দিয়ে কেস ফ্যাটালিটি বা মৃত্যু হার নির্ধারণ করা যাবে না। এই তথ্য যথেষ্ট নয়, এজন্যে আরো তথ্য প্রয়োজন। এতো অল্প তথ্য দিয়ে পৃথিবীর কোন দেশে মৃত্যু হার নির্ণয় করা হয় না। তবে তিনি জানিয়েছেন যে তারা এখন নমুনা পরীক্ষার পরিধি বাড়িয়েছেন। এখন ঢাকার শিশু হাসপাতাল ও জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও খুলনাতেও পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।