admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ৩০ মার্চ, ২০২৪ ১:০১ অপরাহ্ণ
নাগরিক ভাবনা, আবু মহী উদ্দীন: ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যুষে ঝড়বৃষ্টি মাঠে আসন ব্যবস্থ্যার সমস্যা করলেও পরিবেশ খুব ভালো করেছিল। ডিসি সাহেব সময়মতো মাঠে গেলেও, ঠাকুরগাঁও বড়ো মাঠে কুচকাওয়াজের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে সহনীয় পরিমান দেরীতে শুরু হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা আর পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা ছাড়া পরিচিত সরকারি বিভাগীয় কর্মকর্তা একমাত্র জেলা শিক্ষা অফিসার শাহীন আকতার এবং তার একজন সহকর্মী ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি।
কেউ হয়তো ছিলেন , না চেনার কারণেও হতে পারে। একমাত্র সংরক্ষিত মহিলা এমপি মহোদয় ছাড়া রাজনৈতিক দলের কাউকে দেখা যায়নি। আয়োজকরা আসন ব্যবস্থা , প্যান্ডেল করতে রুচির পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু প্রত্যুষে ঝড় বৃষ্টি এবং রোজার কারণে দর্শক না আসায় তাদের আসন ব্যবস্থা করতে আয়োজকদের কোন চিন্তা করতেই হয়নি। সে কারণে প্লাস্টিকের চেয়ারগুলো পরিস্কার করারও প্রয়োজন হয়নি। সোফাগুলোর গদি সব ভিজে গিয়ে বসার উপযুক্ত না থাকলেও সেগুলো সরানোর ব্যবস্থাও করা যায়নি। এই কাজে যথেষ্ট অবহেলার অভিযোগ করা ঠিকনা । কুচকাওয়াজের কার্যকর মহড়া যে হয়নি সেটা বুঝতে কষ্ট হয়নি। সেকারণে একটা আধাসর্বনাস হয়ে গেলো। তাহলো প্রথম কুচকাওয়াজে মার্চ আউট করে অস্ত্রধারীরা যাওয়ার কথা থাকলেও পেছনের দলগুলোও সরাসরি মাঠের বাইরে চলে গেছে। কুচকাওয়াজ শেষে মাঠের শৃঙ্খলার কোন বিষয় অবশিস্ট ছিলনা।
তবে এবারে পুলিশ বাহিনী মাঠের স্পেসটা ভালো রাখতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। জেলা প্রশাসক সাহেবের ভাষনটি খুব ইম্প্রেসিভ এবং মোটিভেশেনাল ছিল। তবে অংশগ্রহণকারীরা যখন কুচকাওয়াজের সালামী দিচ্ছিল তখন পুলিশ সুপার সালাম নিয়েছেন সার্বক্ষনিক। তবে জেলা প্রশাসক সাহেব সালামী নিলে অংশগ্রহণকারীদের মর্যাদা দেওয়া হতো। আমি যখন অনুষ্ঠান পরিচালনা করতাম তখন , জেলা প্রশাসকগণকে সালামী নিতে দেখেছি। ঠিক জানিনা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সালামী নেওয়ার বিধান উঠে গেছে কিনা বা আগে তারা ভুল করতো কিনা? বিষয়টা ভালো হতো যদি দু’জনই সেলামী নিতেন। সবচে সন্তুষ্টির কথা এবারে কবুতরগুলো উড়তে পেরেছে। তবে মাঠে সাংবাদিকদের আধিক্য দর্শকদের বিরক্তির কারণই হয়েছে। মনে হয়েছে এ বিষয়ে কারো কিছু করণীয় নাই।
কুচকাওয়াজের রেজাল্টের সময় একটা বিষয় বুঝতে কষ্ট হয়না যে কুচকাওয়াজের সময় দলগুলোকে চেনা বিচারকের জন্য খুব জরুরী। প্রায় ৫৫ বছর ধরে দেশে এবং বিদেশে কুচকাওয়াজের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে কুচকাওয়াজের বিষয়ে সামান্য ধ্যান ধারণা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও মাঠে একটানা ১২ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ পরিচালনার সুবাদে জেলা শহরের স্কুলগুলো, তাদের অবস্থান এবং ছেলেমেয়েদেরও চিনতে হয়েছে। আমাদের সামনে দিয়ে যখন দলগুলি যায় তখন দলগুলো সম্পর্কে ধারণা হয়। কিন্তু ফলাফল ঘোষণার সময় বোঝা যায় বিচারকগন দলগুলোকে হয়তো চিনতে পারেননি। যদিও বিচারকদের রায় নিয়ে কথা বলার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি, তবুও ধারণা করা যায় , স্কোর শীট, দলের নাম ঘোষণা এবং দলের সালামী মঞ্চ অতিক্রমের সমন্বয় না হলে যা হতে পারে তাই হয়েছে।
সে কারণেই ফল বিপর্যয় হয়েছে। এ বিষয়ে বিচারদের দোষ দেওয়া ঠিক হবেনা। ঘোষণা কেন্দ্র থেকেও তালিকা দেখে দলের নাম ঘোষণা হয়েছে, যার সাথে মাঠের কুচকাওয়াজের দলগুলোর ক্রমিক মোটেও ঠিক ছিলনা ফলে এই বিপর্যয় হয়েছে বলে মনে করার কারণ আছে। না হলে ১২/১৩ জনের একটি দল কিভাবে কুচকাওয়াজে বিজয়ী হতে পারে?
ঠাকুরগাঁও মাঠে কুচকাওয়াজ ডিসপ্লের সঙ্গে সম্পৃক্ত ২০০০ সাল থেকে। সে সময় অংশগ্রহণকারী অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছেলেমেয়েরা স্কাউট দলের নাম করে স্কুল ড্রেস পড়েই মাঠে নামতো। ইতোমধ্যে সকল দলেরই স্কাউট ড্রেস হয়েছে। কিন্তু হাজীপাড়া এবং গোয়ালপাড়া স্কুলের ছেলেমেয়েদের এতোদিনেও স্কাউট ড্রেস কেনো করা যায়নি বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় । উপজেলা স্কাউটস এর মাঝারী দীর্ঘদিনের সম্পাদক হাজীপাড়া হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক।
কুচকাওয়াজের পরে ডিসপ্লে হয়। এই ডিসপ্লে যাতে মান সম্মত হয় সেকারণে আগেই মহড়া করা হয় এবং যাচাই বাছাই করা হয়। একই সঙ্গে ডিসপ্লে পরিবেশনের নীতিমালা বলে দেয়া হয়। অংশগ্রহণকারীরা সেই ভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে আসে। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ ডিসপ্লেতে রেকর্ডেট আইটেম থাকে। অনুষ্ঠান স্থলে কিছু মাননীয় থাকেন যাদের অনেক কিছুই থাকলেও শুধু সময় কম থাকে। সে কারণে তারা সংক্ষিপ্ত করা নির্দেশনা দেন। পারিষদ বর্গ আবার সময় নির্ধারণ করেও দেন। সুতরাং নির্দেশনা জারী হলো ৩ মিনিটের মধ্যে শেষ করতে হবে। এই বিষয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আবদার করা যেতেই পারে , ৫ মিনিটে কম্পোজড রেকর্ডেড আইটেম কিভাবে ৩মিনিটে করা যায় সে বিষয়ে একটু ব্যবহারিক দেখিয়ে দিবেন কি ?
ছেলেমেয়েরা বেশ কিছুদিন ধরে অনুশীলন করছে মাঠে ডিসপ্লে করবে বলে , অভিভাবকরাও তাদের ছেলেমেয়েদের ডিসপ্লে দেখার জন্য মাঠে আসেন , শিক্ষগণের উৎকন্ঠাতো থাকেই। আর মাননীয়গণের সময়ের অভোবের কারণে ছেলেমেয়েরা প্রদর্শনী করতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। যারা বাধ্য হয়ে ঘোষণা করলেন তাদেরওতো একটা সিভিক সেন্স থাকা দরকার। কর্তৃপক্ষের এই আচরনটা সমালোচনারও যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে।
জাতীয় দিবসের আর একটি অনুষঙ্গ রয়েছে, তা হলো শিশুদের ছবি আঁকা , আবৃত্তি , রচনা লেখা ইত্যাদি। এই প্রতিযোগিতা শিশু একাডেমি বরাবরই করে থাকে। এই প্রতিযোগিতার পুরস্কারগুলো বই দেয়া হয় এবং বই গুলো র্যাপিং পেপার দিয়ে প্যাকিং থাকে। ভিতরে কাঠ বিড়ালীর বৈঠকখানা নাকি খাবনামা আছে সেটা বোঝার কোন উপায় থাকেনা। কত মুল্যমানের বই দেয়া হয় সেটা কেউ জানতে পারেনা। প্রাপকরাও অসন্তুস্টিতে ভুগতে পারে। আবার ফলাফল তো প্রতিযোগিতার সাথে সাথে ঘোষণা করা যায়না। ফলে অনেকে ফলাফল না জানার জন্য পুরস্কার বিতরনীর সময় উপস্থিত থাকতে পারেনা। আর এই সব পুরষ্কার প্রাপকের কাছে দায়িত্ব নিয়ে পৌঁছানো নিশ্চিত করা হয় এরকম প্রতিষ্ঠান কোথায় আছে তা জানা নাই। সে কারনে একটা কাজ করলে কিছুটা সুবিধা হয় তা হলো যখন প্রতিযোগিতার সার্কুলার হবে তখনই ছাপিয়ে দেয়া যেতে পারে এই প্রতিযোগিতার ১ম , ২য় , ৩য় পুরস্কারের বই এর মূল্যমান কতো হবে। এতে সব পক্ষই স্বচ্ছতার দাবী করতে পারবে।