admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ২ আগস্ট, ২০২৩ ১০:৪৬ অপরাহ্ণ
নাগরিক ভাবনাঃ আবু মহী উদ্দীনঃ প্রতিষ্ঠানটি স্কুল এন্ড কলেজ। পুলিশ সুপারের নের্তৃত্বে পরিচালনা করে ঠাকুরগাঁও পুলিশ বিভাগ। অবস্থান গুরুত্বপুর্ন জায়গায়। পরিচালনা কমিটিও মোটেও হেলাফেলার নয়। তবে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেনি পর্যন্ত এমপিওভুক্ত। অবশ্য একটা প্রশ্ন করা যেতে পারে ৩টি ক্লাশের একটা নিম্ম মাধ্যমিক স্কুলে অধ্যক্ষের কি কাজ ? কিন্ডার গার্টেন এ অধ্যক্ষ, গ্রামে গঞ্জের কেজি স্কুলে অধ্যক্ষ; দেশের ¯œাতকোত্তর কলেজগুলোর অধ্যক্ষ সাহেবরা কেন আজো তাদের মর্যাদা রক্ষার জন্য আন্দোলনে নামেন না সেটাও একটা গবেষনার বিষয়। মাধ্যমিকের জন্য এমপিও ভুক্তির আবেদন করাই হয়নি। আবার কলেজের একাডেমিক স্বীকৃতিই নেওয়াই হয়নি।
২০১৯ সালে একাডেমিক স্বীকৃতির আবেদন করলে বোর্ডের নির্দেশে পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকালীন একাডেমিক স্বীকৃতির ৩ টি শর্তের ২টি পুরন হয় । অপুরণকৃত শর্তটি হলো ‘ যত শিক্ষার্থী থাকবে তার ৭৫% পাবলিক পরিক্ষায় অংশ নেবে , যারা অংশ নেবে তার ৫০% পাশ করতে হবে। ২০২০ সালে অটোপাশ ১০০% এটা বিবেচনার দরকার নেই। ২০২১ সালে ৯৩.৬৮% ২০২২ সালে ৯৭.৬৭%। কিন্তু একাডেমিক স্বীকৃতি নেওয়া হয়নি। স্কুলে প্রাথমিক শাখায় প্রথম শ্রেনীতে ১ জন , দ্বিতীয় শ্রেনীতে ১ জন , তৃতীয় শ্রেনীতে ১০ জন সহ ৫টি ক্লাশ মিলে শিক্ষার্থী মাত্র ৭৬ জন , মাধ্যমিক শাখায় ৪৬৮ জন পড়াশোনা করে। মাধ্যমিক শাখায় শিক্ষার্থী ভর্তি অধোগতিতে আছে। আশেপাশের যে কোন স্কুলে মাধ্যমিক শাখায় ৭/৮ শত শিক্ষার্থী। পুলিশের ছেলেমেয়েরা পুলিশের স্কুলে ভর্তি হতে আগ্রহী নয়।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে অধিকাংশ পুলিশ সদস্যদের ছেলেমেয়ে অন্য স্কুলে পড়ে। মাধ্যমিক শাখা এমপিওভুক্ত নয় , কলেজ শাখার একাডেমিক স্বীকৃতি না থাকলে কি হবে অধ্যক্ষ আছেন। বিষয়টা প্রেস্টিজিয়াসও বটে। প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখা যাত্রা শুরু করে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে। সে সময়ে যাচাই বাছাই করে , ডোনেশন নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল। খুবই সুখের কথা তা হলো এই বিনা বেতনের বেগার শিক্ষকরাই গত ২ বছর উচ্চ মাধ্যমিকের পাবলিক পরীক্ষায় ঠাকুরগাঁও জেলার মধ্যে ২য় সর্বোচ্য ভাল ফলাফল করেছে। শতকরা হারে সরকারী কলেজের চেয়েও ভাল। সুতরাং দাবী করা যায় কর্তৃপক্ষ যোগ্য এবং দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ করেছেন।
ঠাকুরগাঁও পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের কলেজ শাখায় বোদা , আটোয়ারী , ঝাড়বাড়ী , বীরগঞ্জ, খোঁচাবাড়ী, বালিয়াডাংগীর ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে। এখন এসএসসি পাশ করার পর কলেজে ভর্তি হতে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। আবেদনের সময় কলেজের চয়েজ দিতে হয়। এই সব শিক্ষার্থীরা পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের চয়েজ দেওয়ার কারনেই ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। সরাসরি ভর্তির কোন সুযোগ নাই। খোজ নিয়ে জানা গেছে পুলিশ লাইনস স্কুল থেকে যে সকল ছাত্র এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করেছে তারা ২/১ জনও এই কলেজের চয়েজ দেয়নি। এই প্রতিষ্টানের শিক্ষার্থীরা সালন্দর কলেজকে চয়েজ দিয়েছে কিন্তু নিজের প্রতিষ্ঠানের চয়েজ দেয়নি। বিষয়টিতে ভাবনার খোরাক আছে নিশ্চয়।
এলাকার শিক্ষার্থীদের সামনে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের ছবি ভাসে। তারা মনে করে সকল পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজ বোধহয় একই নিয়মে চলে। সেটাই মুলতঃ শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কারণ।
ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার পুলিশের ভাবমুর্তি উজ্জল করেছেন। তিনি বিভাগের সেরা এসপি নির্বাচিত হয়েছেন। নিশ্চয় তার কর্মদক্ষতার সার্বিক বিষয়াদি বিবেচনা করেই এই সম্মান অর্জন করেছেন তিনি। কিন্তু আমাদের সন্দেহ হচ্ছে এই বিবেচনার মধ্যে স্কুলটা নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় সকল বিষয় হাইড করেছেন। এসপি সাহেবকে স্কুলের বিষয়াদি অবহিত করেননা। না হলে এসপি সাহেব পুলিশ লাইনে গেলেই তো একবার স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ দেখাবেন এটাই স্বাভাবিক। তার ধারণা স্কুল ঠিকঠাক চলছে। প্রতিষ্ঠান প্রধান, যে স্কুলের সহকারি শিক্ষক থেকে এখানে এসে অধ্যক্ষ হয়েছেন , সে স্কুলে হাজার খানেক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। সেসনের শুরুতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করানো হয়। পুলিশ সদস্যদের অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা সে স্কুলে পড়ে। পুলিশ লাইন্স স্কুলে ৫টি ক্লাশ মিলে ৪৬৮ জন শিক্ষার্থী। এখানে যে কেউ যে কোন সময়ে ভর্তি হতে পারে। এই স্কুল থেকে পাশ করা মেয়েরা এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি না হলেও বাইরের মেয়েরা উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছে। তাদের কোন হোষ্টেল নাই। তারা শহরের বিভিন্ন মেসে থাকে। জেলা প্রশাসক সাহেব কালেকটরেট স্কুলটাকে জাতে তোলার বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এখানে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে আসতে শুরু করেছে। পাশাপাশি পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজ সমান গতিতে এগিয়ে যাবে এবং ক্ষেত্র বিশেষে প্রতিযোগিতা করবে,এটাই অভিভাবকদের পারসেপশন। বিভিন্ন জাতীয় প্রোগামে এদের অনুজ্জল অংশগ্রহণ মনে হয়। এবারের বিজ্ঞান মেলায় পুলিশ লাইনস স্কুলের অংশগ্রহণকারীদের খুবই অসহায় , একেবারে গার্জেনলেস মনে হয়েছে। এক্স্ট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিতে তাদের কোয়ালিটি অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। পরিবহন সহ বিভিন্ন খাতে পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজ বাড়তী সুবিধা পেতে পারে। রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষা ব্যবস্থায় রংপুর বিভাগে আইকন সুতরাং মডেলই বলি বা গাইড ই বলি তা সামনে আছে। আমাদেরতো প্রচেষ্টা থাকা দরকার কেননা গাইড করার মতো প্রতিষ্ঠানতো আছে। তারা পারলে আমাদের না পারার কিছু নাই।
এই প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিশ্চয় জানেননা , বিশ^বিদ্যালয় পাশ করা , প্রতিযোগিতামুলক পরীক্ষায় যাচাই বাছাই হয়ে , উপযুক্ত পরিমান ডোনেশন দিয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত তার কলেজের শিক্ষকরা কত বেতন পান? শর্ত ছিল এমপিওভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা বিনা বেতনে চাকুরী করবেন। ২০১৫ সালে কলেজ শাখা পাঠদানের অনুমতি সংগ্রহ করে চলছে। ২০১৫ সালে শিক্ষকরা যোগদান করেন। আজ ২০২৩ তারা চাকুরী করেন। এই অমানবিক সিদ্ধান্তটি দেশের সকল নিয়ম কানুনের পরিপন্থি। সেই শিক্ষকরা কত টাকা বেতনে চাকুরী শুরু করেছিলেন আর আজ ২০২৩ সালে তাদের বেতন কত এই বিষয়টা প্রকাশ করা সমীচিন হবেনা, এটা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা হবে , শিক্ষক এবং কর্তৃপক্ষেরও মর্যাদার হানি হবে। শিক্ষকরা যোগদান করেছিলেন এই আশা করে যে, কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় এমপিও ভুক্তির পদক্ষেপ নিবেন। ঠাকুরগাঁও জেলার উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান শর্ত পুরণ করে আবেদন করলেই এমপিও পাবেন।
২০১৫ সালে বিনা বেতনে চাকুরীতে ঢুকে ২০২৩ সালে যদি জানা যায় এমপিও তো দুরের কথা, একাডেমিক স্বীকৃতির প্রচেষ্টাও নেওয়া হয়নি, তাহলে বিষয়টা কি রকম হয়? এমপিও ভুক্তির আবেদনের পুর্ব শর্ত একাডেমিক স্বীকৃতি। পুলিশ সুপার নুতন আসছেন। আমরা আশা করবো পুলিশ সুপার সাহেব প্রথম থেকেই স্কুলটার প্রতি নজর দিবেন এবং তাদের কি সমস্যা জানার চেষ্টা করবেন একই সাথে স্কুলটার একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।