admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ২৯ জুন, ২০২০ ১:৪০ অপরাহ্ণ
নাগরিক ভাবনাঃ অ্যাডভোকেট আবু মহী উদ্দীন।। নিরাপদ খাদ্যের জন্য কতদিন অপেক্ষা করতে হবে? ২ ফেব্রুয়ারি নিরাপদ খাদ্য দিবসের কর্মসুচি পালিত হয় নিরাপদেই । খাদ্য বিভাগ সফল র্যালি এবং প্রানবন্ত আলোচনা সভা আয়োজনের জন্য তৃপ্তির ঢেকুর তুলতেই পারেন। র্যালি উপলক্ষ্যে চমৎকার ক্যাপ বানানো হয়। ভালো ক্যাপ পেয়ে অন্তত প্রাপকরা খুশী হয়ে থাকেন। এই কর্মসুচিতে যারা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন তারা সবাই ক্ষতিগ্রস্থ। যারা ক্ষতি করছেন তারা কেউ সভায় থাকেননা। শীতের সকালে বড়দের না এনে ছোটদের আনাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে বোঝা গেল যখন আলোচনা সভায় ছোটরা খুবই গুরুত্বপুর্ন কথা বলছিল। বিষয়গুলি তাদেরই জানা দরকার বেশী এবং বোঝা গেল তারা জানেও বেশী। আলোচনা সভায় বড়রা কেবল সমস্যার কথাই বললো। ছোটরাই বরং সমাধানের রাস্তা বলে দিল। রাস্তার খাবার খাওয়া অনুচিত , অস্বাস্থ্যকর ফুচকা খাওয়া অনুচিত এসব কথা ছোটরাই বললো। তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে , দেশের সরকারি বালিকা স্কুেেলর গেটে দুপাশে দুটি করে ফুচকার দোকান দিয়ে মুল রাস্তাটাই সব সময় বন্ধ করা থাকে। বালক স্কুলের চেয়ে বালিকাদের স্কুলের শিক্ষার্থীরা বাইরে যাওয়ার সুযোগ কম পায়। স্কুলে ক্যান্টিন নেই। দু’হাজার শিক্ষার্থী যে স্কুলে পড়ে সে স্কুলে একটা ক্যান্টিন অনায়াসেই চলতে পারে। এতে আমাদের মেয়েদের উপকার হয়, স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পারে। কিন্তু এ বিষয়টা বিবেচনায় কে আনবে ? বেসরকারি স্কুল হলে না হয় ম্যানেজিং কমিটিকে বলা যেতো। এখানেতো খোদ সরকারি ব্যপার। মেয়েরা আলোচনা সভায় যতই বলুক ফুচকা খাওয়া ভাল না কিন্তু তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে এই ক্ষতিকর খাবারটি খেতে।
খাদ্যের সমস্যা কী এ বিষয়ে খবরের কাগজে , টিভি চ্যানেলে এন্তার প্রচার হচ্ছে। কখনো সখনো ভ্রাম্যমান আদালত দু/চারশ টাকা জরিমানাও করছে। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হবার কোন লক্ষন আপাতত নাই। এটা অনেকটা পরীক্ষার প্রশ্নের সাজেশন দেওয়ার মতো। এবারের পরীক্ষায় যে প্রশ্ন আসবে আগামী বারের পরীক্ষায় সেই প্রশ্ন অবশ্যই আসবেনা এই বিবেচনায়টা আমাদের শিক্ষকরা অভিজ্ঞতার আলোকে সাজেশন দিয়ে থাকেন, বিষয়টি শিক্ষার্থীরাও জানে। আমাদের ভ্রাম্যমান আদালত অনেকটা সেই রকম। অর্থাৎ দোকানীরা জানে আজ ভ্রাম্যমান আদালত চলে গেলে শীঘ্রই আর আসবেনা। বেশ কিছুদিন পরে আবার আসতেও পারে। সে সময় পর্যন্ত ভেজাল দেওয়া , ওজনে কম দেওয়া, খারাপ খাদ্য বিক্রি করা কোন সমস্যা নয়। বাজারে ফলমুলের অনেক দোকান কিন্তু কোন দোকানে পচা ফল পাওয়া যায়না, দোকানে মাছি বসেনা। আপেল কিনে এনে মাসের পর মাস রাখলে পচেনা। আম ,কলা পাকায় হিট দিয়ে তবুও রক্ষা ছিল , চামরা মোটা সে কারনে হিট দিয়ে কাঁচা কলাকে পাকানো হয়েছে, অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতির কারন। গত কদিন আগে দৈনিক সংগ্রামী বাংলায় ছাপা হয়েছে সচিত্র প্রতিবেদন। বলা হয়েছে হিট দিয়ে পাকানোর চাইতে ক্ষতিকর ঔষধ দিয়ে পাকানো লাভজনক। কলা বিক্রেতারা সেই দিকে ঝুকেছে। এই কলা ভিতর নরম হয়না। কেমন জানি গন্ধ। এখানে যে বিষ দেওয়া হয় তা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারন। কলা বিক্রেতারা দ্ষো দিয়েছে ক্রেতাদের, রং হলুদ না হলে নাকি ক্রেতা আকৃষ্ট হয়ন্ াসে জন্য তারা এই অপকর্মটি কিরে।
লিচুতে ক্ষতিকর স্প্রে করার জন্য মৃত্যুর কারন ঘটেছে একাধিকবার ফরমালিন নামক বিষ এখন কোন খাবারে দেওয়া হচ্ছেনা এটাই গবেষনার বিষয়। চাউলে দেওয়া হয় ইউরিয়া , ইদানিং বাজারে প্যাকেটজাত মুড়ি পাওয়া যায় তাতে লেখা থাকে ইউরিয়ামুক্ত। তার মানে বাজারে যে মুড়ি বিক্রি হয় তা ইউরিয়াযুক্ত। এবং সেই অছিলায় দাম নেওয়া হয় প্রায় দ্বিগুন। এটা হবে কেননা এসব দেখার কেই নাই। হোটেলের মাছ নাকি ভাজা হয় পোড়া মবিল দিয়ে , সোয়াবিন তেলে ভারত থেকে আনা কী জানি বড়ি ব্যবহার করা হয় , যার একটি বড়ি একড্রাম তেলকে নিমিষেই শরিষার তেলে পরিনত করতে পারে। বাজারে চকচকে শ্িব্জ মানেই কয়েকদিন আগেই বিষ দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই বাজারে এসেছে। সবচে বেশী কীটনাশক ব্যবহার হয় বেগুনে। আল,ু মুলা ,কপি , শাক কীসে নাই ক্ষতিকারক রাষায়নিক সার এবং কীটনাশকের ছোয়া। মুসলিম উম্মার দেশ মধ্যপ্রাচ্য থেকে খেজুর আসে রমজান উপলক্ষে। তাতেও ফরমালিন , রমজান মাসে ইফতারি সামগ্রী বিশেষত: পেয়াজু , বেগুনি , জিলাপি , বুন্দিয়া মুড়ি এসব না হলে তো ইফতারি হবার জো নাই। কিন্তু এসব খাবারে দেদারসে কাপড়ে দেওয়া রং মেশানো হয় ক্রেতাদের কাছে আকর্ষনীয় করার জন্য। প্রায় দোকানদাররাই তখন মাথায় টুপি দিয়ে এই ব্যবস্যাটা করে। বাচ্চারা দুধ খাবে তাতেও ফরমালিন দেওয়ার খবর আছে। আগে চিনিতে গুড় মিশেল দেওয়া হতো। এখন গুড়েই চিনি দেওয়া হচ্ছে। গুড় এবং জিলাপিতে হাইড্রোজ নাকে ক্ষতিকর রাসায়নিক দেওয়া হচ্ছে। বাজারে আলু পূটল ইত্যাদিতেও রং দেওয়া হয়। হলুদে দেওয়া হয় ইটের গ–ড়া , গোলমরিচে দেওয়া হয় পেঁেপর বিচি , দারচিনিতে দেওয়া হয় অর্জুন বা কাবাবচিনির গাছের ছাল। ইসবগুলের ভুষিতেও ভেজাল দেওয়া হয় সেজন্য ২ রকমের দাম।
দেশে সোয়াবিন দিয়ে ঘি বানানো যায়। ছানা তৈরির সচিত্র প্রতিবেদন দেখে আৎকে উঠতে হয়। চিনি দিয়ে মধু বানানো যায়। তরমুজ বাঙ্গিতেও রং করা , ডাবের পানি বদল করার অত্যাধুনিক কায়দার কথা জেনে তাদের বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। বাজারে ভেজাল জীবন বাঁচানোর ঔষধ পাওয়া যায়। বাজারে আমের জুসের প্যাকেট পাওয়া যায়। একটা বিষয় বুঝতে পারিনা তা হলো সেই জুসের স্বাদ সব সময় একই থাকে কেন ? সারা দেশের আমতো এক স্বাদের নয়। তাহলে তা কী করে সম্ভব ? খাদ্য বিভাগে ১টি শব্দ এসেছে তা হলো প্রিজারভেটিভ , এটা দিয়ে খাদ্যকে যে স্বাদের ইচ্ছা সেই স্বাদের করা যায়। তরমুজে , কাঠালে ইঞ্জেকশন করে ঔষধ ঢুকানো হয়। ফেসবুকের কল্যাণে এ সবের সচিত্র প্রতিবেদন দেখা যায়। দেশে বর্তমানে প্রোাটিনের চাহিদার অধিকাংশ পুরণ করছে পোলট্রি। মুরগী প্রায় সবার কাছেই প্রিয় . মুল্যেও মোটামুটি সাশ্রয়ী। এই শিল্পের বিকাশ দেশের জন্য গুরুত্বপুর্ন। কিন্তু অপরিনামদর্শী , মুনাফালোভী ব্যবস্যায়ীর কারনে পোলট্রি শিল্পের মুরগী অনিরাপদ খাদ্য শ্রেনির তালিকাভুক্ত হচ্ছে। খবরের কাগজে এবং আলোচনা সভাসমুহে পোলট্রি ও মাছের ফিডের বিষাক্ততার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। অনেকদিন ধরেই বিষাক্ত ট্যানারীর বর্জ্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে মাছ ও মুরগির খাবার। ২০১১ সালের ২১ জুলাই হাইকোর্ট বেঞ্চ বর্জ দিয়ে মাছ মুরগীর খাবার তৈরির কারখানা বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এখনো দেদারসে ট্যানারী বর্জ থেকে তৈরি হচ্ছে মাছ ও পোলট্রি খাবার।
বিষাক্ত পোলট্রি খাওয়ানোর ফলে কেবল মাছ ও মুরগীর শরীরই বিষাক্ত হচ্ছে তা নয় , এর ফলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে , দুষিত হচ্ছে স্থানীয় কৃষিজমি , নদী , বাতাস ও পরিবেশ। প্রত্যক্ষদর্শী গবেষকরা জানিয়েছেন চামড়ার বর্জ থেকে পোলট্রির খাবার তৈরির প্রক্রিয়াটি এতটাই ভয়াবহ যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার প্রথম ভাগ হতে শেষাবধি কমপক্ষে শতাধিক ধরনের এবং চামড়া ফিনিশিং প্রক্রিয়ার শেষ স্তর অবধি কমপক্ষে ২০ ধরনের কেমিকেল ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে সব চাইতে ভয়াবহ হলো ক্রোমিয়াম যা আগুনে পোড়েনা , মাটিও হজম করতে পারেনা। অসাধু পোলট্রি ব্যবস্যায়ীরা প্রধানত ২টি কারনে এই ক্ষতিকর ট্যানারী বর্জ থেকে তৈরি ফিড মাছ ও মুরগীর খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করেন। প্রথমত: এই ফিড খাওয়ানো হলে মুরগী বা মাছের বৃদ্ধি দ্রুত ঘটে এবং ডিমের আকার বড় হয়, দ্বিতীয়ত এটা দামে সস্তা। দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রচুর প্রোটিন বা আমিষের দরকার । যেহেতু মুরগী ও মাছের স্বাস্থ্যসম্মত ফিডের তুলনায় ট্যানারী বর্জে তৈরি ফিডের মুল্য ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ কম , সে কারনে কিছু অসাধু পোলট্রি ব্যবস্যায়ী বিষাক্ত ফিড ব্যবহার করতেই উৎসাহিত হন। তারাও জানে ্ওই ফিডে মিশে আছে ক্যাডমিয়াম , ক্রোমিয়াম ও মার্কারির মতো ভয়াবহ বিষাক্ত উপাদান। আর শেষ অবধি তা মাছ , মাংশ ও ডিমের মধ্যে দিয়ে নীরব ঘাতকের মতো ঢুকে যাবে মানব দেহে।
ঈদের সময় গরু মোটা তাজা করার ধুম পরে যায়। মোটা তাজা করনে এই রকম খাদ্য খাওয়ানোর তথ্য পাওয়া যায়। এই খাদ্য এতটাই ভয়াবহ যে নির্ধারিত সময়ে মধ্যে জবাই না করলে সেই প্রানীর মৃত্যু হবে। কী ভয়াবহ ব্যপার। বাজারে পাওয়া যায় সব রকমের গুঁড়া মসলা এদের সবার বিরুদ্ধেই ভেজালের অভিযোগ আছে। দেশে নিরাপদ খাদ্য আইন প্রনীত হয়েছে প্রায় ৬ বছর আগে। কিন্তু সর্বস্তরে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত হবার বিষয়টি এখনো গহীন অন্ধকারে। দেশে মারনব্যাধি বর্তমানে আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পাওয়ার এটাও অন্যতম কারন বলে মনে করার যথেষ্ঠ কারন আছে। সুতরাং বিষয়টি কতোটা ভয়াবহ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। দুরারোগ্য ব্যাধি আগেও ছিল তবে বর্তমানে যে সব জটিল অসুখের নাম শোনা যাচ্ছে বা আবিস্কৃত হচ্ছে কিংবা পরিমান বাড়ছে তাতে অধিকাংশ মানুষ সন্দেহ করছেন ভেজাল খাদ্য এবং কীটনাশকযুক্ত খাবারকে। যে সব মুনাফালোভী ব্যবস্যায়ী বা উৎপাদক এই সভ্যতাবিনাশী কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তাদের জন্য বলি এর ফলে অন্যেরা ধংশ হবে তাই নয় আপনি , আপনার বংশধরও মুক্ত থাকতে পারবেননা। মানুষই যদি না থাকে আপনার বিত্ত বৈভব কাকে দেখাবেন ? বর্তমানে করোনা মহামারীতে সারা দুনিয়া কাৎ। এই মারণ ব্যাধির কোন ঔষধ আবিস্কার হয়নি। দুনিয়ার মহাশক্তিধর দেশ , সরকার , সভ্য , শিক্ষিত , উন্নতদেশ কেউই নিজেদেও রক্ষা করতে পারছেনা। অস্ত্রপাতি কোন কাজে আসছেনা। বিপরিতে কিউবা , ভিয়েতনাম , কম্বোডিয়া , ভুটান , নেপাল যে সব দেশ বিশ্বেও পরাশক্তির কাছে এই সব দেশ নশ্যি। অথচ ওরা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দিয়ে জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করেছে। ওরাই সঠিক কাজ করেছে। আমাদেরও সেই পথে হাঁটতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।