admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ২:০৫ অপরাহ্ণ
নতুন করোনা ভাইরাস বা কভিড-১৯ নিয়ে আতঙ্কিত পুরো বিশ্ব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাশাপাশি কাজ শুরু করেছে জাতিসংঘ। এই দলে আরও যোগ হয়েছে ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব অ্যানিমেল এবং ফুড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন (এফএও)। প্রতিদিনই বেড়ে চলছে এই রোগে আক্রন্ত রোগীর সংখ্যা। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যের সংখ্যাও। করোনা ভাইরাস নিয়ে সারা বিশ^ আতঙ্কিত। চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নিয়েও চিন্তায় রয়েছে দেশ। সরকার বলছে, বাংলাদেশ ঝুঁকিতে থাকলেও অতিঝুঁকিতে নেই। আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই। সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, বাংলাদেশ কভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রস্তুত। সরকার ইতিমধ্যে সরকারি কয়েকটি হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করেছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া গেলে বা সন্দেহভাজন মনে হলে তাদের এসব আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হবে। তবে এসব আইসোলেশন ওয়ার্ড আসলে কতটা আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক গণমাধ্যমকে বলেন, আইসোলেশন ওয়ার্ডের নামে যা করা হচ্ছে সেগুলোকে আদর্শ বলা ঠিক হবে না। আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মানা হয়নি। আইসোলেশনের জন্য ঠিক যেরকম রুম হওয়া দরকার, সেরকম রুম কয়েকটি হাসপাতালেই নেই। পৃথক ক, পৃথক ওয়াশরুম, ভেন্টিলেশন থাকার কথা, কিন্তু সেগুলো নেই। কেবল পাশাপাশি কয়েকটি বেড রাখা হয়েছে, এক মিটার দূরত্বে। যদি কোনও পজিটিভ রোগীর সঙ্গে নেগেটিভ রোগী একইসঙ্গে আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকে, তাহলে তো তাদের মিক্সড-আপ হয়ে যাবে। তাই ভবিষ্যতে এ ধরনের ‘ডেডলি অ্যাটাক’ প্রতিরোধের জন্য অন্য কোথাও, ঢাকার অদূরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি করতে হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ জেনারেল হাসপাতালে এসব রোগীকে না রেখে যেখানে জীবাণু ছড়ানোর সম্ভাবনা কম এমন জায়গায় এ ধরনের সেন্টার তৈরি করা উচিত। চিকিৎসকরা বলছেন, সরকারের উচিত ছিল ঢাকার অদূরে নির্জন স্থানে একটি আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করা।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতিটি দেশের কৌশল আলাদা। আর আমাদের দেশে তো এরকম কিছু করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আমাদের যে আইসোলেশন ওয়ার্ডের ব্যবস্থা, আর্থ সামাজিকসহ নানা কারণে এর চেয়ে উন্নত করা আমাদের পে সম্ভব না। আমাদের দেশে যেন এই ভাইরাস না আসতে পারে, সেদিকেই গুরুত্ব বেশি দিচ্ছি আমরা। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন। তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারেইন্টাইন করে রাখা হয়েছে চীনের উহান ফেরত ৩১২ শিার্থীকে। একটি আদর্শ আইসোলেশন ওয়ার্ড কেমন হতে হয় জানতে চাইলে মুশতাক হোসেন বলেন, কোনও রোগীর হাঁচি-কাশি, মল-মূত্র অন্য কারও সংস্পর্শে যাবে না। একজন রোগীকে যতরকম ব্যারিয়ার দেয়া যায়, তার সবটুকু দিতে হবে- এটাই একটি আদর্শ আইসোলেশন ওয়ার্ডের সংজ্ঞা। একই ধরনের একাধিক রোগী যদি হয় তাহলে এক বেড থেকে আরেক বেডের দূরত্ব কমপে এক মিটার হতে হবে। কারণ, হাঁচি-কাশি এক মিটারের বেশি দূরত্বে যায় না। তবে তার বেশি দূরত্ব রাখা হলে সেটি আরও ভালো।
মুশতাক হোসেন বলেন, এসব ওয়ার্ডে রোগীদের যারা সেবা দেবেন তারা মাস্ক পরে রোগীদের কাছে যাবেন। তারা পিপিই (পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট) পরবেন। পিপিই-এর ধরন কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাথার ক্যাপ, চোখে গগলস, হাতে গ্লাভস, নাকে মাস্ক, শরীরে কাভার-অল, ওয়াটার প্রুফ প্যান্ট, পায়ে সু-কাভার- এই পুরো পোষশাককে বলা হয় পিপিই। তিনি আরও বলেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে শুরু করে যত যন্ত্রপাতি আছে সবকিছুই থাকবে একজন রোগীর জন্য ডেডিকেটেড। এসব রোগীর জন্য যেগুলো ব্যবহার করা হবে সেগুলো ফেলে দিতে হবে। পুনরায় ব্যবহার করতে চাইলে সেগুলো পুরোপুরিভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
করোনা ভাইরাস : ঢাকা ছাড়া সব বন্দরেই অব্যবস্থাপনার চিত্র করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সরকারের প থেকে এমন বক্তব্য দেয়া হলেও ঢাকা ছাড়া দেশের কোনো বন্দরেই তেমন জোরালো নজরদারি নেই। এমনকি করোনা শনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও নেই। চীনের উহান থেকে বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী নতুন করোনা ভাইরাস। এর ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে বৈশ্বিক সর্তকতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারপরেই এই ভাইরাস প্রতিরোধে দেশের সব বন্দরে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীাসহ বিভিন্ন পদপে নেয়ার কথা বলে সরকার। কিন্তু বাস্তবতা হলো- শুধু রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই রয়েছে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা। অন্য সবখানে শুধু থার্মোমিটার দিয়ে যাত্রীদের পরীা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে এখনো বসানো হয়নি থার্মাল স্ক্যানার। হ্যান্ডহেল্ড স্ক্যানার দিয়ে পরীা চলছে। বিদেশি জাহাজের নাবিকরা বন্দরে সংরতি এলাকা পেরিয়ে প্রবেশ করছে চট্টগ্রাম নগরীতে। যশোরের বেনাপোল বন্দরের থার্মাল স্ক্যানারের মনিটর নষ্ট। জিজ্ঞাসাবাদেই সীমাবদ্ধ পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে স্থাপিত মেডিকেল ক্যাম্পের কার্যক্রম। সাতীরার ভোমরা স্থলবন্দরে শুধু পায়ে হাঁটা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীা করা হচ্ছে। ভারত থেকে আসা ট্রাক ড্রাইভাররা থেকে যাচ্ছে স্বাস্থ্য পরীার বাইরে। এরকম ঢিলেঢালাভবে চলছে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রম।এদিকে নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এরইমধ্যে চীনে মৃত্যুর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজারের বেশি। চীনের বাইরে ২৫টি দেশে আক্রান্ত হয়েছেন আড়াইশর বেশি মানুষ। এছাড়া সিঙ্গাপুরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এক বাংলাদেশিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার ৮ রুমমেটকেও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এেেত্র সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আনা হবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকে আয়োজিত স্বাস্থ্য সচেতনতায় করণীয় শীর্ষক বৈঠকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, গত ১ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে এ পর্যন্ত ৯০ হাজার ২৪৫ জন বিদেশ ফেরত যাত্রীর মেডিকেল স্ক্রিনিং সম্পন্ন করেছে। সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় স্ক্রিনিং করা হয়েছে ১২ হাজার ৬৩০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ৬,১৬২ জন, নৌ-বন্দরে ২৪০ জন এবং সমুদ্র বন্দরসমূহ ৬,২২৪ জন বিদেশ ফেরত যাত্রীর করোনা ভাইরাস স্ক্রিনিং সম্পন্ন করা হয়। প্রস্তুতি প্রসঙ্গে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক অধ্যপাক ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, নতুন করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যে ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে, সেটি আরও জোরদার করতে হবে। সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি বিশেষজ্ঞ দল তৈরি করতে হবে। যারা প্রত্যেক বিষয়ে পর্যবেণ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবেন। দেশের সব এন্ট্রিপয়েন্টে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করতে হবে। এসবের পাশপাশি জনসচেতনামূলক কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে। যদিও স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, নিয়মিতভাবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভাগীয়, জেলা ও উপাজেলা পর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। তাদের করণীয় সম্পর্কে জানানো হচ্ছে। কারো কিছু প্রয়োজন থাকলে সেটিও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। দু-একটি জায়গায় কিছু শিথিলতা থাকতে পারে, তবে সামগ্রিক প্রস্তুতি ভালো।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একামাত্র থার্মাল স্ক্যানারটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ যাত্রী এই বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেন। হ্যান্ডহেল স্ক্যানার দিয়েই তাদের স্বাস্থ্য পরীা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙ্গরে প্রতিদিন শতাধিক জাহাজ অবস্থান করে। এসব জাহাজে গড়ে ৩২ থেকে ৪০ জন নাবিক থাকেন। সেই হিসেবে বন্দরে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার নাবিক অবস্থান করেন। জাহাজে অবস্থানের সময়ে তারা বন্দরের সংরতি এলাকা পেরিয়ে নগরীতে প্রবেশ করেন। বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে থার্মাল স্ক্যানার বসানো হয়নি। হ্যান্ডহেল্ড স্ক্যানার দিয়ে যাত্রী ও নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য যা যথেষ্ট নয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপরে সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর এম শফিউল বারী বলেন, করোনা সতর্কতা হিসেবে তিন স্তরের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনটি জায়গায় নাবিকদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। চীন থেকে কোনো জাহাজ এলে নাবকিদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে শতভাগ। এখনো পর্যন্ত সন্তেহজনক কাউকে পাওয়া যায়নি।
বেনাপোল : যশোরের বেনাপোল চেকপোস্টের থার্মাল স্ক্যানারটি সচল থাকলেও কাজ করছে না মনিটর। এছাড়া কলকাতাগামী বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীরা থাকছেন স্বাস্থ্য পরীার বাইরে। ফলে ট্রেনের যাত্রীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীায় সেখানে ৪টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। বেনাপোল একটি আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর। প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার দেশি-বিদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী এই বন্দর অতিক্রম করে। নতুন করোনা ভাইরাস যাতে বাংলাদেশে আসতে না পারে, সেজন্য ১৮ জানুয়ারি থেকে বন্দর অতিক্রমকারী যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীা করা হচ্ছে। এমনটি জানিয়েছেন বন্দরে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডা. বিচিত্র মল্লিক।
বাংলাবান্ধা : জিজ্ঞাসাবাদেই সীমাবদ্ধ পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে স্থাপিত মেডিকেল ক্যাম্পের কার্যক্রম। চীনের প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটান হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য এই বন্দর ব্যবহার করা হয়। অথচ বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর অতিক্রমকারী যাত্রীদের মাত্রাতিরিক্ত জ্বর, সর্দি, কাশি, হাচি, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যাথা হচ্ছে কি না তা শুধু জিজ্ঞাসাবাদে সীমাবদ্ধ। মেডিকেল ক্যাম্পে মাত্র দুটি থার্মোমিটার ছাড়া কোনো যন্ত্রপাতি নেই, রয়েছে জনবল সংকট। তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক মোকলেছার রহমান জানান, লণগুলোর মাত্রাতীতভাবে কারো ধরা পড়লে স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় তাদের নিবিড় পর্যবেণে রাখা হবে। ক্যাম্পে কোনো মেডিকেল অফিসার ও শনাক্তকরণ যন্ত্র নেই।
ভোমরা : সাতীরার ভোমরা স্থলবন্দরে শুধু পায়ে হাঁটা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীা করা হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিন সদস্যের একটি মেডিকেল টিম এই দায়িত্ব পালন করছেন। তবে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক চালকদের স্বাস্থ্য পরীার আওতায় এখনো আনা হয়নি। এ প্রসঙ্গে ভোমরা স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিশ্বজিত সরকার বলেন, ড্রাইভাররা গাড়িতে থাকেন। রাস্তার ওপর শত শত গাড়ি থামিয়ে চেকআপ করা হলে বন্দরে যানযট বেড়ে যায়। তাই তাদের স্বাস্থ্য পরীা করা হয় না।
আখাউড়া : আখাউড়া স্থলবন্দরেও হ্যান্ডহেল্ড স্ক্যানারে চলছে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দরে স্থাপিত মেডিকেল ক্যাম্পে যাত্রীদের পরীা করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহ আলম জানান, আখাউড়া চেকপোস্টে মিনি স্ক্যানার দিয়ে পরীার কাজ চলছে। কোনো যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা বেশি পাওয়া গেলে তার স্বাস্থ্য পরীা করা হবে।
সিলেট : সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার অকোজো থাকায় স্বাভাবিক থার্মোমিটার দিয়ে যাত্রীদের স্ক্যান করা হচ্ছে।
বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, চীনের সঙ্গে সিলেটের সরাসরি ফাইট নেই। এজন্য সেখান থেকে কেউ এলে ঢাকায় ট্রানজিট দিয়ে আসতে হয়। তবে এখানে থার্মাল স্ক্যানারটি অকেজো রয়েছে।
দিনাজপুর : দেশের অন্যতম বৃহৎ স্থলবন্দর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের নেই স্বাস্থ্য পরীার ব্যবস্থা। হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্টে মেডিকেল টিমের নামে বসিয়ে রাখা হয়েছে একজন স্বাস্থ্য সহকারীকে। নেই কোনো যন্ত্রপাতি। অথচ এই ইমিগ্রেশন চেক পোস্ট দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হয় প্রায় এক হাজার দেশি-বিদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী। গত ৩১ জানুয়ারি হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে চীন থেকে পালিয়ে আসা ইউনান ইউনির্ভাসিটির এক শিার্থী। চীন থেকে ভারত হয়ে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।
জনসচেতনতায় সীমাবদ্ধ কুড়িগ্রামের দুই স্থবন্দর : জনসচেতনতায় সীমাবদ্ধ কুড়িগ্রামের দুই স্থালবন্দর ভুরুঙ্গামারী ও রৌমারী। সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদফতরে চাহিদা জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমরা পাবো। রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারীতে রয়েছে একটি বর্ডার হাট। মালামাল পরিবহনের জন্য ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় সোনাহাট স্থলবন্দর। এছাড়া রৌমারী ইমিগ্রেশন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন মানুষ যাতায়াত করছে। ফলে বাইরে থেকে মানুষের মাধ্যমে এ ভাইরাস আসার আশংকা সবার। চলতি মাসে সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে ৫০০ ট্রাক ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। এসব চালকদের কোনোভাবেই পরীার আওতায় আনা হয়নি।
চীনফেরত একজন রংপুর থেকে ঢাকায় : রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি চীন ফেরত শিার্থীকে ঢাকায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফোরা সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে এলে সরকার কিছুই করতে পারবে না। সোমবার সকালে নিজের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ঢাবির এ অধ্যাপক বলেন, করোনা ভাইরাসের ভয়াল গতি আর বিভিন্ন দেশের প্রস্তুতির খবর পড়ি আর ভাবি কি ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে এটি এ দেশে। আমার ভাবনা যুক্তিহীন নয়। করোনা চিহ্নিত করা, করোনা রোগীকে আলাদা করা এবং তাদের উপযুক্ত চিকিৎসা দেয়া- কোথাও আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে কি? আছে কি এমন প্রস্তুতি নেয়ার সদিচ্ছাটুকু? ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্রিটিশ নাগরিক। জানুয়ারির শেষ দিকে গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুর গ্রান্ড হায়াত হোটেলে আয়োজিত কনফারেন্সে। সেখানে আক্রান্ত হন করোনা ভাইরাসে। বৃটেনে ফেরার পথে তিনি ফ্রান্সে একটি হলিডে রিসোর্টে যান। সেখানে তার থেকে সংক্রমিত হন পাঁচ ব্রিটিশ নাগরিক। এদের একজন ৯ বছর বয়সী এক বালক ফ্রেঞ্চ শিখতে দুটো স্কুলে গিয়েছিল। করোনার আশঙ্কার স্কুল দুটো বন্ধ করা হয়েছে এখন।’
তিনি বলেন, অতীতে আগুন নেভাতে গিয়ে, মশার ওষুধ দিতে গিয়ে, গর্তে পড়া বাচ্চাকে উদ্ধার করতে গিয়ে এমনকি ঈদের চাঁদ খুঁজে বের করতে গিয়ে আমরা আমাদের অবিশ্বাস্য অদতার পরিচয় পেয়েছিলাম। তিনি আরো বলেন, ‘আমার তাই ভয় হয়- করোনা এলে, আসলে কিছু করতে পারবে না সরকার। বরং সর্দি-কাশি-জ্বর এ ধরনের অসুখ বলে উড়িয়ে দিতে চাইবে। এমনকি সম্ভব হলে এসব গুজবের’ জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করবে বলে মন্তব্য করেন আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, ব্র্যাক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, কমিউনিটি হাসপাতাল বা অন্য কেউ- আপনাদের কি কিছু করার আছে? থাকলে এখনই শুরু করুন।
করোনা ভাইরাসে একদিনে মৃত্যু ২৪২ জনের : চীনের হুবেই প্রদেশে বুধবার ২৪২ জনের মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। বলা হচ্ছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর এটিই ভয়ালতম দিন। আক্রান্তের সংখ্যায়ও ব্যাপক উল্লম্ফন দেখা গিয়েছে। এদিন নতুন আক্রান্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৮৪০ জন। বুধবারের আগ পর্যন্ত, চীনের হুবেই প্রদেশে সংক্রমণ পরিস্থিতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা ল্য করা যাচ্ছিল। কিন্তু মৃতের নতুন এই সংখ্যা করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর মোট সংখ্যাকে ১৩৫০-এর ওপরে নিয়ে গেলো। আর মোট আক্রান্তের সর্বশেষ সংখ্যা দাঁড়ালো ৬০ হাজার জন। চীনে যত মানুষ সংক্রমিত হয়েছে তার ৮০ শতাংশই হুবেই প্রদেশে রয়েছে। খবর বিবিসির। এখন অবশ্য যাদের শরীরে রোগের লণ প্রকাশিত হচ্ছে তাদেরকেও সংক্রমিত হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। যাদের শরীরে করোনা ভাইরাসের লণ দেখা যাবে, এবং সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে ফুসফুসের সংক্রমণ দেখা যাবে তাদেরকেও করোনা ভাইরাস সংক্রমিত বলা হবে। এর আগে যথাযথ পরীা করে ভাইরাসের উপস্থিতি পেলেই তাকে সংক্রমিত বলা হতো। সম্ভবত নতুন এই সংজ্ঞায়নের কারণে আক্রান্তের সংখ্যার এই উল্লম্ফন এ কারণেই দেখা গেছে। উহানে বুধবার মারা যাওয়া ২৪২ জনের মধ্যে ১৩৫ জনই ছিলো নতুন এই সংজ্ঞার অধীনে কোভিড-১৯ আক্রান্ত। নতুন এই করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদেরকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন কোভিড-১৯ বলেই অভিহিত করছে। যার পূর্ণ রূপ হচ্ছে ‘করোনা ভাইরাস রোগ ২০১৯’। হুবেইতে এখন ৪৮ হাজার ২০৬ জন নিশ্চিত কোভিড-১৯ রোগী রয়েছে। প্রদেশটির নতুন আক্রান্ত ১৪ হাজার ৮৪০ জনের মধ্যে ১৩ হাজার ৩৩২ জনকেই নতুন সংজ্ঞার অধীনে সংক্রমিত বলা হচ্ছে।
অবশেষে বন্দর পেল জাহাজটি : এদিকে দু হাজার যাত্রী সমেত একটি প্রমোদতরীকে অবশেষে কম্বে^াডিয়ার বন্দরে ভিড়তে দেয়া হয়েছে। জাহাজটিতে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত মানুষ থাকতে পারে এই সন্দেহে পাঁচটি দেশের বন্দরে এটিকে ভিড়তে না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিলো। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কম্বোডিয়ায় ভেড়ে এমএস ওয়েস্টারড্যাম। জাপান, তাইওয়ান, গুয়াম, ফিলিপিন্স এবং থাইল্যান্ড এটিকে ফিরিয়ে দিয়েছে। যদিও জাহাজটিতে একজনও কোভিড-১৯ রোগী নেই। আমেরিকান নাগরিক অ্যাঙ্গেলা জোনস বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা কতবার ভেবেছি, এই বুঝি বাড়ি যেতে পারবো, আর সেইসব মুহূর্তে আমাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে’। ‘আজকের সকালটাতেও যখন ডাঙার দেখা পেয়েছিলাম, সেটা ছিল একটি শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্ত। আমি ভাবছিলাম, এটা কি সত্যি!’ বলছিলেন তিনি। জাহাজটিকে আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্তের জন্য কম্বোডিয়ার প্রশংসা করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান।
বিশ্বের প্রতিটি দেশে করোনা সংক্রমণ ঘটবে : সবেমাত্র চীনের বাইরে ছড়িয়ে পড়া শুরু হয়েছে করোনা ভাইরাস বা কভিড-১৯। এর ফলে পৃথিবীর প্রতিটি দেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটবে। চীনের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তারা আগামী এপ্রিলের মধ্যে এই ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার প্রত্যাশা করলেও, এমন ভয়াবহ সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ডালি ফিশার। এর আগে হংকংয়ের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক মেডিসিনের চেয়ারম্যান প্রফেসর গাব্রিয়েল লিউং সতর্কবার্তায় বলেছেন, করোনা ভাইরাসে বিশ্বে মারা যেতে পারেন সাড়ে চার কোটি মানুষ। আক্রান্ত হতে পারেন বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬০ ভাগ। তিনি বলেছেন, বিভিন্ন দেশের সরকারকে অবশ্যই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তার সতর্কবার্তায় আরো বলা হয়েছে, যদি শতকরা এক ভাগ মানুষও মারা যায় তাহলেও মারা পড়বেন কয়েক কোটি মানুষ। বর্তমানে বিশ্বে মোট জনসংখ্যা ৭০০ কোটিরও বেশি। এর অর্থ হলো বর্তমান হারে যদি এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তাহলে এতে আক্রান্ত হবেন কমপে ৪০০ কোটি মানুষ। প্রফেসর লিউংয়ের মতে, যদি শতকরা এক ভাগ মানুষও মারা যায়, তাহলে এতে মারা যাবেন কমপে সাড়ে চার কোটি মানুষ। এর পরেই ডা. ডালি ফিশার বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার হুঁশিয়ারি দিলেন। তিনি বলেছেন, এই মহামারী চীনে সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে। আর বাকি বিশ্বের পরিস্থিতি অব্যাহতভাবে আরো খারাপ হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় গ্লোবাল আউটব্রেক এলার্ট রেসপন্স নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান ডা. ডালি ফিশার। তিনি বলেন, এরই মধ্যে সিঙ্গাপুরে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আমি নিশ্চিত প্রতিনিটি দেশেই এই ভাইরাসের কোনো না কোনো কেস থাকবে। সিঙ্গাপুরে এই ভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে ৫০টি। চীনের বাইরে এটাই কোনো একটি এলাকায় সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা। স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের মাধ্যমে এটা ঘটেছে। সিঙ্গাপুরে কেন এত রোগি? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. ডালি ফিশার বলেছেন, সেখানে তুলনামুলকভাবে অধিক সংখ্যায় কিনিক্যাল পরীা করা হচ্ছে। সন্দেহজনকদেরকে পরীায়র েেত্র সূচক অনেক নিম্নমুখী। যদি বেশি পরিমাণে পরীা করা হতো তাহলে এতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি পাওয়া যেতো। এই ভাইরাস সংক্রমণের আরো অনেক পদ্ধতি এখনও অজানা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাস সংক্রমণকে সন্ত্রাসের চেয়ে মানবতার জন্য বড় হুমকি হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর এমন হুঁশিয়ারি দিলেন ডা. ডালি ফিশার। করোনার থাবা বাণিজ্যে, দুশ্চিন্তার কথা জানালেন মন্ত্রী বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আমরা একটু দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। তারপরও আমরা সব দিকে লক্ষ্য রাখছি। করোনা ভাইরাসের কী পরিমাণ চাপ আসতে পারে। সেটা নিয়ে একটা আলোচনা হচ্ছে। এর প্রভাব গার্মেন্ট সেক্টরে কী পরিমাণ… সে ব্যাপারে খুব সম্ভবত ১৬ ফেব্রুয়ারি একটা রিপোর্ট পাব। পাশাপাশি লক্ষ্য রাখছি ফ্যাক্টরিগুলোর সাপ্লাইয়ের দিকে। চায়নায় হলিডে শেষ হলো। আজ খবর পেলাম চায়নার মার্কেটগুলো খুলতে শুরু করেছে। আমরা সেটা অবজার্ভ করছি।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে তিন দিনব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপাে-ইফসি শুরু হয়েছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুপুরে ইফসির উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে ম্যানুফ্যাকচারিং মালামাল, বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট ও কাঁচামাল আমদানি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এ বিষয় সমাধানে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ করে বলা মুশকিল, এটা অত্যন্ত গভীর সমস্যা। তিনি বলেন, রেডিমেড গার্মেন্ট সেক্টরে হঠাৎ করে সাপ্লাইটা কোথায় সোর্সিং করব? সেটা তো সময়ের ব্যাপার। আমরা লক্ষ্য রাখছি, আশা করছি অল্টারনেটিভ মার্কেট পেয়ে যাব। যদিও এর জন্য সময় দরকার। কারণ, যে স্পেসিফিকেশন কাঁচামাল আনতে হয় সেটা অন্য কোথাও পেতে হলে তো সময় দিতে হবে। বায়ারকে এক্সেপ্ট করতে হবে। এটা নিয়ে আমরা একটু দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি বটে। দেশে রসুনের দাম অনেক বেড়ে গেছে। চীন থেকে অনেক ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য আসে, অনেক কাঁচামাল আসে- এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রসুন যে পরিমাণ প্রয়োজন তার ৯০ শতাংশ চায়না থেকে আসে। রসুনের ব্যাপার এক ধরনের। অন্যান্য কাঁচামাল, ইলেকট্রনিক্স প্রডাক্টের প্রভাব যদি পড়তে শুরু করে সেটা অন্য রকমের ভাবনা। রসুন নিয়ে আমরা চেষ্টা করব বিকল্প মার্কেট থেকে সোর্সিং করতে। কাঁচামাল আনার ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা হবে। আমাদের এখনই বলার সময় আসেনি, দেখি বড় ধরনের বিপদ আসে কি না।
ইতোমধ্যে রসুনের দাম বেড়ে গেছে, এ বিষয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমাদের বাজার মনিটরিং আছে। আমাদের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ সরকারের বিভিন্ন জায়গায় যারা ইমপ্লিমেন্টেশন করবে তাদের বলা হয়েছে আপনারা বাজার যান, বাজার মনিটরিং করেন। পাইকারি ও খুচরা বাজারে কী দামে বিক্রি হচ্ছে, তা মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। বাজারে মূল্যতালিকা ঝুলিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। কেউ যদি মূল্যের অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস কয়েক মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। ২ মিটারের মধ্যে থাকলে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইমপোর্টেড যে কাপড? বানানো জিনিস তার ওপরে করোনাভাইরাসের প্রভাব নেই। কিন্তু মানুষ কাজ করতে যাবে সেখানেই সমস্যা। মানুষ কাজ না করলে প্রোডাকশন হবে কেমন করে? জিনিসপত্র আনলে সেখানে সমস্যা নেই। কিন্তু ওখান থেকে তো সাপ্লাইটা শুরু হতে হবে। আমরা লক্ষ্য রাখছি তারা (চীন) সাপ্লাইটা শুরু করে কি না।
বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছে চীন। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের রেস্ট্রিকশন আনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যেসব চীনা নাগরিক বাংলাদেশে আসছে আমরা তাদের দেখছি, তাদের ক্যাম্পে নেয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত যারা এসেছেন তাদের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি। বাংলাদেশের সবচেয়ে রফতানির বড় সেক্টর হচ্ছে চামড়া। এ চামড়া বাজার বড় ধরনের সঙ্কটে রয়েছে। চীন হচ্ছে চামড়া সবচেয়ে বড় আমদানিকারক। তবে অনেক রফতানি আদেশ বাতিল হয়েছে। ডিসেম্বরে একটা টাইমলাইন ছিল, সেটিও পেরিয়ে গেছে। এসব সমাধানে মন্ত্রণালয় কী ভাবছে? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমাদের বড় সমস্যা শিফট করার পর। সমস্যা হচ্ছে কোরবানির সময় একসঙ্গে অনেক চামড়া জমে যায়। গতকাল (বুধবার) আমরা শিল্প মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদফতরের সঙ্গে বসে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। একটা হাইপাওয়ার কমিটি করে দেয়া হয়েছে, সবধরনের প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধিকে নিয়ে। কমিটির রিপোর্ট পেলে আমরা অ্যাকশন নেব।