আমির হোসেন,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: কোরবানী ঈদে পশুর চামড়া সংরক্ষন করার জন্য বিনা মূল্যে সরকারের বরাদ্দকৃত লবণ উপজেলার চামড়া সংরক্ষণকারী মসজিদ,মাদ্রাসা, এতিমখানায় লবন বিতরণের জন্য দিলেও সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় ঘটছে ব্যাতিক্রম।
সরকারী নীতিমালা লঙ্ঘন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম অতি গোপনে এই লবন বিতরণে করেছেন উনার পছন্দের সাত ব্যক্তির কাছে। বিভিন্ন সূত্রে ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার অনেকেই জানাযায়, উপজেলা সদরের ৫ জন ও বাদাঘাট ইউনিয়ন ২ জন ব্যক্তিকে দিয়েছেন ইউএনও। তবে কিভাবে দিয়েছে তা বলতে পারেনি কেউ। আর যাদেরকে দিয়েন তারা কোন দিনেই এই চামড়া সংরক্ষণ করার কাজে জড়িত নয়।
জানাযায়, তাহিরপুর ইউনিয়নের আব্দুল বারিক,মিলন মিয়া, মস্তুু মিয়া, সেজুল,আবুল ফজল ওই পাঁচজনকে দেয়া হয় ১০০ বস্তা এবং বাদাঘাট ইউনিয়নের কামড়াবন্দ গ্রামে আপন দুই ভাই রতন ও স্বপন দেয়া হয় ৫০ বস্তা বিনামূল্যের লবণ।
এ বিষয়ে কামড়াবন্দ গ্রামের স্বপ্ন আহমেদ জানান, এই লবন নিতে গিয়ে খরচ করতে হয়েছে ২৫ হাজার টাকা লাগেছে। অথচ এই লবন বিনামূল্যে সরবরাহের নির্দেশনা ছিল।এ বিষয়ে জানতে বিনামূল্যের লবণ পাওয়া তাহিরপুরের মিলন মিয়ার মুঠোফোন ০১৭৩৫৭০০১৮০ নাম্বারে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
কোরবানীর চামড়া যেন নষ্ট না হয়! সেই লক্ষ্যে তাহিরপুর উপজেলায় যে সকল চামড়া সংরক্ষণকারী মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা সরকারিভাবে বিনামূল্যে ১৫০ বস্তা(৫০ কেজি ওজনের) লবণ বরাদ্দ দেয়া সরকার। কিন্তু সরকারি বরাদ্দকৃত লবণ তাহিরপুর উপজেলার ৭ ইউনিয়নের মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় না দিয়ে সাত ব্যবসায়ীর কাছে গোপন সমঝোতায় বিনামূল্যের লবণ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। যার ফলে সরকারি বরাদ্দকৃত বিনামূল্য লবণ না পাওয়ার কারণে উপজেলার চামড়া সংরক্ষণকারী মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় গুলো ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই। সরকারের দেয়া বিনামূল্যের লবণ বিক্রির অভিযোগ তুলে উপজেলা জুড়ে এখন চলছে আলোচনা আর সমালোচনার ঝড়।
এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলার শাখার কওমি মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও পৈলনপুর টাইটেল মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মঈনউদ্দীন বলেন, চামড়া সংরক্ষণের জন্য বিনামূল্যের লবণ কে কে পাবে তা ঈদের পূর্বেই তালিকা তৈরি করে তাদের জানানোর কথা। কিন্তু সরকারিভাবে লবণ বরাদ্দ আসছে তাই জানিনা। লবণ পাবো দূরের কথা। আমার প্রতিষ্ঠান উপজেলার বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। প্রতিবছর আমরা চামড়া সংরক্ষণ করে থাকি। এটা সবাই জানে। এবছর আমরা ২৩২ টি চামড়া সংগ্রহ করি। কিন্তু লবণ না পাওয়ার কারণে এগুলো সংরক্ষণ করতে পারিনি। সরকার পরিবর্তন হইছে। আমরা শুনছি সরকারিভাবে চামড়া দাম বাড়বে এবং পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হইছে চামড়া সংরক্ষণের জন্য বিনামূল্যে লবণ দেয়ে হবে এই আশা চামড়া সংগ্রহ করছিলাম। কথায় আছে না রোগী আগে আগদ্ধ বাহিরে এখন আগে ঘরের ভিতরে লবণ না পাওয়ার এবার এই অবস্থা হইছে।
বিকালেই পচে যাওয়ার উপক্রম হইছে। পরে চামড়া ব্যবসায়ী কয়েকজনকে অনুরোধ করে অন্য বছরের তুলনায় অর্ধেক দামে দেয়া হইছে। এর পরেও বাকীতে। আমার জানা মতে উপজেলার চামড়া সংরক্ষণকারী কোন প্রতিষ্ঠানেই সরকারের দেয়া বিনামূল্যের লবণ পায়নি। তবে এসব লবণ কোথায় দেয়া হইছে কাকে দেয়া হইছে জানিনা।
উপজেলার রমজান আলী নূরানী মাদ্রাসা সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, উপজেলার চামড়া সংরক্ষণকারী মসজিদ মাদ্রাসা ও এতিমখানাকে সরকার বিনামূল্যে লবণ দিবে এককথা জানার পর আমরা এবার বেশি চামড়া সংগ্রহ করি। কিন্তু লবণ না পাওয়ার কারণে চামড়া সংরক্ষণ করতে না পারায় পানির দামে বিক্রি করতে হইছে। তিনি আরও জানান, দিকে মসজিদ,মাদ্রাসা, এতিমখানায় সরকার বিনামূল্যে লবন না পেয়ে বাজার থেকে লবন কিনেছেন অনেকেই। এবার মসজিদ মাদ্রাসা ও এতিমখানার লোকজন লবন না পেয়ে চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করেনি এবার। অনেক প্রতিষ্ঠান চামড়াই সংগ্রহ করেন নি।
এই বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম জানান, উনার সরকারি মুঠোফোনে ০১৭৩০৩৩১১০৯ নাম্বারে বেশ কয়েকবার কল দিলেও রিসিভ করেনি। পরে ওনার নাম্বারে এ বিষয়ে জানতে ট্যাক্স পাঠালে হলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে কল দেওয়ার জন্য রিপ্লে ট্যাক্স পাঠনা।
ডা: হাবিব আহমদ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, আমি লবন বন্ঠনের বিষয়টি শুনেছি,তবে আমাকে তালিকা দেওয়া হয়নি,কোথায় কাকে দেওয়া হয়েছে তাও জানিনা।ইউএনও মহোদয় আমাকে লবন বন্টনের বিষয় জানিয়ে ছিলেন কিন্তু আমি অন্য প্রোগ্রামে থাকায় যেতে পারিনি।এসব বিষয় ইউএনও অফিস তদারকি করেছে।