admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি, ২০২০ ১২:৩০ অপরাহ্ণ
জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইটভাটার আগুনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এলাকার ফসলের ক্ষেত ও পরিবেশ। সেইসাথে ভূমি দস্যু ও দালালদের প্রলোভনে শত শত আবাদী জমি হয়ে যাচ্ছে অনাবাদী। এ ধ্বংশ ঠেকানোর যেন নেই কেউ। সদর উপজেলার সালন্দর, ফারাবাড়ি, আকচা, জগন্নাথপুর, নারগুন ইউনিয়ন ও পীরগঞ্জের ভিমটিয়া, গোয়াগাঁও মৌজা ও তার আশেপাশের এলাকার আবাদী জমিগুলোর মাটি কেটে ভাটাগুলোতে ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। উল্লেখিত এলাকার সহস্রাধিক একর আবাদী জমির মাটি কেটে বড় বড় পরিখা, পুকুর ও খাল করায় ওইসব জমিতে ২০ বছরেও ফসল ফলানো সম্ভব হবে না বলে ভূমি বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। ইট ভাটা মালিকরা তাদের এক শ্রেণির দালাল চক্রের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক আবাদী জমির মালিকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে তাদের আবাদী জমিগুলোর উপড় অংশের মাটি খুঁড়ে ইট ভাটাগুলোতে সরবরাহ করছে। ফলে ক্ষতিগস্থে হয়ে পড়ছে পাশ্ববর্তী জমিগুলোও। কারণ খাল সংলগ্ন জমির উঁচু অংশে আর পানি জমে থাকছেনা। এতে ওইসব জমিগুলোতে এখন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বোরো ধান আবাদে । গম ক্ষেতগুলোতেও জমছেনা সেচের পানি । সেচের পানি চুইয়ে খাল, গর্ত ও পরিখাগুলোতে চলে যাচ্ছে। ভাটা মালিকদের পোষা দালালরা অভাবী কৃষককে বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরিশোধ করা হচ্ছে তার অর্ধেক টাকা। এমনি করে জমির মালিক হয়ে উঠছে ভূমিহীন আর চির দিনের জন্য ওই জমিগুলো পরিণত হচ্ছে অনাবাদী খালে।
ইট ভাটার মালিকরা জানান, দালালরা তাদের ইটভাটার মাটি সরবরাহ করে থাকে। ভাটা মালিকরা কেউ সরাসরি জড়িত নয়। উত্তরাঞ্চলের বগুড়ায় পরিবেশ অধিদপ্তরের দফতর থাকলেও ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে তারা সরেজমিন পরিদর্শন না করায় ইটভাটা মালিক ও দালালচক্র ভূমিদস্যূতায় মেতে উঠেছে। এ জেলায় ধান, গম, সরিষা ফসল উৎপাদনে সেরা রেকর্ড ছিল। কিন্তু ইটভাটাগুলোর আগ্রাসী তৎপরতায় এখন তা ফসলহীন মাঠে পরিণত হতে চলেছে।গত মৌসুমে জেলার বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে ৩শ’ একর জমির বোরো ধান ক্ষেত ধ্বংস হয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জেলা প্রশাসক অফিসে দলবদ্ধভাবে ঘেরাও ও বিক্ষোভ মিছিল করে। তাদের ক্ষতি পূরণের আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে ভূক্ত ভোগীরা জানিয়েছেন। এরপরেও চলতি মৌসুমে ইটভাটার সঙ্গে আবাদী জমির মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছে দুর্বৃত্তরা। অসহায় কৃষক, ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষীরা এ ব্যাপারে কোন সুষ্ঠু সুরাহা পাচ্ছেন না। ফলে ওই জমিগুলো হতে বছরে শত শত মণ খাদ্য শস্য উৎপাদন হতে বঞ্চিত হচ্ছে ঠাকুরগাঁওবাসী। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলমকে জানালে তিনি উপজেলা এ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব ল্যান্ডকে তাৎক্ষণিকভাবে সরেজমিন তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দিলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আফতাব হোসেন জানান, উত্তরের এ জেলাটি ফসল ও সবজি চাষের জন্য অন্যতম একটি জেলা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এ ধারাবাহিকতা নষ্ট হচ্ছে জেলার অসংখ্য ইট ভাটার কারনে। প্রতিনিয়তই তারা ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে বিনষ্ট করছে। আমরা প্রশাসনিক ভাবে এর একটা সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করছি।