admin || মুক্ত কলম সংবাদ
প্রকাশিত: ১৫ জুন, ২০২০ ৫:০০ অপরাহ্ণ
করোনাভাইরাসে মৃতদের বেশিরভাগই ঢাকা শহর ও বিভাগের বাসিন্দা। বাংলাদেশে সরকারের কার্যক্রমে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অযোগ্যতার কারণে করোনাভাইরাস সংকট প্রকট হচ্ছে। টিআইবি’র এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। সংস্থাটি আরও বলেছে, পরিস্থিতির শুরু থেকে লকডাউন সহ সকল পদক্ষেপের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মতামত উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমলা নির্ভরতার কারণে অব্যাস্থাপনা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর আজ ১০০দিন পুরো হচ্ছে। এই সময়ে সরকারের ব্যস্থাপনা এবং সুশাসন নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দুর্নীতি বিরোধী এই সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি।
সংস্থাটি অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবঙ সুশাসনের ঘাটতি নিয়ে ১০টি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। অনিয়ম এবং দুর্নীতির নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়কে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। তাতে দেখা যাচ্ছে, সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা থেকে শুরু করে অসহায় বা দরিদ্র মানুষকে সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রভাব পড়ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে ৫ থেকে ১০ গুণ বাড়তি দামে মানহীন মাস্ক, পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রী সরকারিভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে। সেজন্য এসব কেনাকাটার নিয়ন্ত্রণ একটি সিন্ডিকেটের হাতে থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
টিআইবি অভিযোগ করেছে যে, একটি সিন্ডিকেট বিভিন্ন ফার্মের নামে সব ধরণের কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একাংশ এতে জড়িত রয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে এন-৯৫ মাস্ক লেখা মোড়কে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক সরবরাহ করার বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে। করোনাভাইরাস পরীক্ষার রক্ত সংগ্রহের টিউব, সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে পিসিআর মেশিন কেনাসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রীর ক্ষেত্রে নানা ধরণের দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর এতটাই খারাপ প্রভাব তারা দেখতে পেয়েছে যে, নমুনার দূর্বলতা এবং অদক্ষতার কারণে ৩০ শতাংশ টেস্টের ভুল রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে। টিআইবি বলেছে, শুরুতেই দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে তা বেড়ে গেছে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে স্বাস্থ্য সর্ম্পকিত কার্যক্রমে। অন্যদিকে বেসরকারি সব হাসপাতালের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
অসহায় বা দরিদ্র মানুষকে সহায়তা দেয়ার কর্মসূচিগুলোতে অনিয়ম দুর্নীতির পাশাপাশি তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনাকে প্রাধান্য দেয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে । টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারণে সংকট যেমন বেড়েছে, একইসাথে সক্ষমতা বা যোগ্যতার প্রশ্নও রয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন না বলে সাধারণ ছুটি নিয়ে যে সমন্বয়হীনতা ছিল, সেখানে যোগ্যতার প্রশ্ন তোলা হয়েছে। টিআইবি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কর্মকাণ্ডে সমন্বয়হীনতা দেখতে পেয়েছে। এখনও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে তারা বলছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তিন মাস পরও করোনাভাইরাসের পরীক্ষা থেকে শুরু করে এর চিকিৎসার ব্যাপারে ব্যবস্থাপনায় অযোগ্যতার চিত্র রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে যেহেতু প্রশ্ন রয়েছে, সেজন্য তথ্য বা মত প্রকাশের ক্ষেত্রেও বিধি নিষেধ আরোপ করা হয় বলে টিআইবি উল্লেখ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে দেশে অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে খবর সংগ্রহ বা প্রকাশের কারণে ৩৭জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এসব মামলা করা হয়েছে। টিআইবি জবাবদিহি নিশ্চিত করে পরিস্থিতির সামাল দেয়ার জন্য ১৫ দফা সুপারিশও করেছে। করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ-এই শিরোনামে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়ে অনলাইনে প্রেসব্রিফিংয়ের মাধ্যমে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান তাতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড: ইফতেখারুজ্জামান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব বলেছেন, তারা তাদের এই গবেষণা প্রতিবেদন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুলোর কাছে পাঠাবেন। এদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ নাকচ করে আসছেন। তবে টিআইবির এই প্রতিবেদনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।