পুলক আলী,রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহীর রাজনীতিতে বর্তমানে অন্যতম সমালোচিত নাম হচ্ছে মহানগর আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সভাপতি রমজান আলী ও তার পরিবার। একসময় পেশায় রাজমিস্ত্রী ছিলেন রমজান, কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পর তিনি হয়ে ওঠেন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার তিন ছেলে সোহেল, রয়েল ও জুয়েল সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল। বিশেষ সূত্র মতে, জুয়েল মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থ যোগানদাতা হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে ওঠা রমজান পরিবার বিত্তবান তো বটেই, তাদের নাম জড়িয়ে রয়েছে একাধিক অপরাধ ও সহিংসতার ঘটনার সাথেও। বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দেশজুড়ে চলা ছাত্র-জনতার সর্বাত্মক আন্দোলনে তাদের ভূমিকা ছিলো অশুভ ও ভয়ঙ্কর।
অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনের সময় রমজান, রয়েল এবং জুয়েল মিলে ছাত্রদের উপর ধারালো ও মরণঘাতী অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, জুয়েল নিজ হাতে গুলি ছোড়ে আন্দোলনকারীদের দিকে। ৫ আগস্ট রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয় এবং সাকিব আনজুম ও রায়হান নামের দুই ছাত্র নিহত হন।
নিহতদের পরিবার ও আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দায়েরকৃত মামলায় রমজান আলী ও তার ছেলে রায়হানকে আসামি করা হলেও, জুয়েলের নাম রহস্যজনক কারণে বাদ পড়ে যায়। বর্তমানে পরিবারটি ফেরারি থাকলেও জুয়েল দোশরমোন্ডলের মোড়ে এক বিলাসবহুল অট্টালিকায় দেদারসে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।
বিশেষ সূত্রে আরও জানা গেছে, জুয়েল নগরীর সপুরার এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে তার কালো টাকা বৈধ করার চেষ্টায় রয়েছেন। রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি একাধিক দলের নেতাকর্মীদের থেকে অর্থের বিনিময়ে শেল্টার নিচ্ছেন এবং ব্যবসা পরিচালনা করে চলেছেন।
রমজান আলীর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনও প্রশ্নবিদ্ধ। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। দীর্ঘ ১৬ বছর যুবলীগের সভাপতি থাকা অবস্থায় তিনি পশ্চিমাঞ্চল রেলের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, রেলস্টেশনে হোটেল প্রতিষ্ঠা ও ইজারার নামে বিপুল আর্থিক সুবিধা আদায় করেন।
স্থানীয় সচেতন মহল প্রশ্ন তুলছে রাজনীতির নামে এ ধরনের অপরাধীদের আশ্রয় দেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত? একজন প্রকাশ্যে গুলি চালানো অভিযুক্ত কীভাবে এখনো আইনের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে? আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নীরব ভূমিকা নিয়েও উঠছে সমালোচনা।
রাজশাহীর সাধারণ মানুষ এখন জানতে চায় আইনের শাসন কি অবশেষে বিজয়ী হবে, না কি আবারও প্রভাবশালীদের টাকা ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ন্যায়বিচার পরাজিত হবে?